তেল বিক্রির কমিশন ন্যূনতম ৭ শতাংশ করাসহ ১০ দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ পেট্রলপাম্প ও ট্যাংকলরি মালিক ঐক্য পরিষদ। এ সময় তারা দাবি আদায়ে ১২ দিনের আলটিমেটাম দেয়। এ সময়ের মধ্যে দাবি আদায় না হলে আগামী ২৫ মে থেকে কর্মবিরতি কর্মসূচি পালনের ঘোষণাও দেয় তারা।
আজ রোববার (১১ মে) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল কবির মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন বাংলাদেশ পেট্রলপাম্প ও ট্যাংকলরি মালিক ঐক্য পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক সৈয়দ সাজ্জাদুল করিম কাবুল।
এ সময় লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘বর্তমানে পেট্রল, অকটেনের ডিপো মূল্যের ৫ শতাংশ এবং ডিজেলে ৩ শতাংশ কমিশন নির্ধারিত রয়েছে। বিগত কয়েক বছরে দেশের চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ীসহ সব পেশাজীবী মানুষের বেতন ভাতা বা আয় বাড়লেও আমাদের কমিশন বা মুনাফা যৌক্তিক হারে বাড়েনি। অথচ ব্যবসা করতে গিয়ে আমাদের বিনিয়োগ বাড়াতে হয়েছে। আমাদের কমিশনের পুরোটাই মুনাফা নয়। এই কমিশন থেকে ইভাপোরেশন, অপারেশন এবং হ্যান্ডলিং লোকসান বাদ দিতে হয়।’
বাংলাদেশ পেট্রলপাম্প ও ট্যাংকলরি মালিক ঐক্য পরিষদের অন্য দাবিগুলো হচ্ছে—
১। সওজ অধিদপ্তরের ইজারা ভূমির ইজারা মাশুল আগের মতো বহাল রাখতে হবে।
২। নবায়নকালীন নির্ধারিত ইজারা মাশুলের পে-অর্ডারসহ আবেদন নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তরে জমা দিলে, সেটিকে ইজারা নবায়ন হিসেবে গণ্য করতে হবে।
৩। বিএসটিআই পূর্বের ন্যায় শুধু ডিসপেন্সিং ইউনিট স্ট্যাম্পিং ও পরিমাপ যাচাই কার্যক্রম পরিচালনা করবে এবং ফিও পূর্বের নিয়মে নির্ধারিত হবে।
৪। আন্ডারগ্রাউন্ড ট্যাংক ক্যালিব্রেশন, ডিপ রড পরীক্ষণ ফি ও নিবন্ধন প্রথা বাতিল করতে হবে।
৫। পেট্রলপাম্প শিল্প নয়, বরং কমিশন এজেন্টভিত্তিক ব্যবসা হওয়ায় পরিবেশ, বিআরসি কলকারখানা ও ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তরের লাইসেন্স বা নিবন্ধন বাধ্যবাধকতা বাতিল করতে হবে।
৬। দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘর বা খোলা জায়গায় অবৈধভাবে মেশিন স্থাপন করে জ্বালানি তেল বিক্রি বন্ধ ও ডিলারশিপ ছাড়া বিপণন কোম্পানির সরাসরি তেল বিক্রি বন্ধ করতে হবে।
৭। ট্যাংকলরি চালক সংকট মোকাবিলায় চালকদের লাইসেন্স নবায়ন ও নতুন লাইসেন্স ইস্যু প্রক্রিয়া সহজ করতে হবে।
৮। গাড়ির কাগজপত্র পরীক্ষার নামে রাস্তায় ট্যাংকলরি যত্রতত্র থামানো যাবে না।
৯। তেলের ডিপো গেটে কাগজপত্র পরীক্ষার সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হবে।
১০। সব ট্যাংকলরির জন্য আন্তজেলা রুট পারমিট ইস্যু করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে সৈয়দ সাজ্জাদুল করিম কাবুল জানান, ২০২৫ সালে একাধিকবার জ্বালানি খাতের নানা সমস্যা ও দাবির বিষয়ে সরকারকে অবহিত করা হয়েছে। এ বিষয়ে একাধিক বৈঠক এবং কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। সর্বশেষ গত ২৭ ফেব্রুয়ারি বিপিসি চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে এক বৈঠকে তিনি ২৭ এপ্রিলের মধ্যে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিলে ব্যবসায়ীরা ঘোষিত কর্মসূচি স্থগিত করেন। তবে শনিবার (১১ মে) পর্যন্ত প্রতিশ্রুতির কোনো বাস্তবায়ন না হওয়ায় ব্যবসায়ীরা চরম হতাশায় পড়েছেন।
তিনি আরও বলেন, এমন অবস্থায় তাঁরা জ্বালানি তেলের ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন। তবে শেষ সুযোগ হিসেবে আগামী ২৪ মে পর্যন্ত সময় দিয়ে সরকারকে সব দাবি পূরণের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। দাবি মানা না হলে ২৫ মে ভোর ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত প্রতীকী কর্মবিরতির ডাক দেওয়া হয়েছে, যার আওতায় সারা দেশে সব পেট্রলপাম্প ও ট্যাংকলরি চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে হজ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের তেল সরবরাহ চালু থাকবে। জনসাধারণকে আগেভাগে প্রয়োজনীয় তেল সংগ্রহের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ পেট্রলপাম্প ও ট্যাংকলরি মালিক ঐক্য পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মিজানুর রহমান রতন, জুবায়ের আহাম্মেদ চৌধুরীসহ সব বিভাগীয় তেল ব্যবসায়ী নেতারা উপস্থিত ছিলেন।