ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদের ৮৯তম জন্মদিন উদ্যাপন করা হয়েছে। রোববার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির মেরুল বাড্ডা ক্যাম্পাসে দিনব্যাপী নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে স্যার ফজলে হাসান আবেদের জীবন, অবদান এবং মূল্যবোধকে স্মরণ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মীরা।
সকালে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির নারী ফুটবলারদের নিয়ে প্রীতি ম্যাচের মধ্য দিয়ে দিনব্যাপী আয়োজনের সূচনা হয়। ‘সম্ভাবনা’ শিরোনামে এই ফুটবল ম্যাচের মাধ্যমে নারী ক্ষমতায়নের প্রতি স্যার ফজলে হাসান আবেদের অঙ্গীকারকে শ্রদ্ধা জানায় ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি। স্যার ফজলে হাসান আবেদ মনেপ্রাণে চাইতেন, নারীরা যাতে সমাজে সমানভাবে বিকশিত হওয়ার সুযোগ পায়।
এরপর স্যার ফজলে হাসান আবেদের কর্মমুখর জীবনের ওপর তিন দিনব্যাপী চিত্র প্রদর্শনী শুরু হয়। ‘স্বপ্নযাত্রা: আ লাইফ অব ইমপ্যাক্ট’ শিরোনামের এই প্রদর্শনীতে স্যার ফজলে হাসান আবেদের জীবনের নানা উল্লেখযোগ্য মুহূর্ত তুলে ধরা হয়।
বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের পর দেশে ফিরে শরণার্থীদের পাশে দাঁড়ানো, ব্র্যাক প্রতিষ্ঠা, দারিদ্র্য বিমোচনে মানুষের পাশে থাকাসহ স্যার ফজলে হাসান আবেদের জীবনের উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলো সবার সামনে তুলে ধরা হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশসহ বিশ্বের আর্থসামাজিক উন্নয়নে স্বীকৃতি হিসেবে পাওয়া বিভিন্ন পুরস্কারের দৃশ্যগুলো শিক্ষার্থীসহ দর্শনার্থীদের জন্য সাজানো ছিল।
প্রদর্শনীতে বাংলাদেশের উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখায় স্যার ফজলে হাসান আবেদকে দেওয়া বাংলাদেশ সরকারের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদর্শিত হয়। এই বছরের ২৫ মার্চ তিনি মরণোত্তর স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হন।
এরপর বিকেলে ‘আবেদ ভাই—ক্ষণজন্মা এক কীর্তিমান’ শিরোনামে একটি বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে স্যার ফজলে হাসান আবেদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং সহকর্মীরা তাঁর সঙ্গে কাটানো মুহূর্তের গল্পগুলো সবার সামনে তুলে ধরেন। এই সময় তাঁরা স্যার ফজলে হাসান আবেদের স্বপ্ন, ইচ্ছা এবং সংগীতের প্রতি তাঁর প্রবল ভাবাবেগের কথা তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে বেঙ্গল গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের লিটু বলেন, ‘স্থাপত্য ও সংগীতের প্রতি স্যার ফজলে হাসান আবেদের বিশেষ আগ্রহ ছিল। তিনি সব সময় মানবকল্যাণের জন্য উদ্ভাবনী উদ্যোগকে সমর্থন করতেন এবং তাতে সহায়তা করতেন।’
সামাজিক সংগঠন ঋতুর প্রতিষ্ঠাতা উম্মে শারমিন কবির জানান, কীভাবে ব্র্যাকের উদ্যোগ ও স্কলারশিপ তাঁকে স্কুলজীবন থেকে শুরু করে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করতে সহায়তা করেছে।
অনুষ্ঠানে নারী ফুটবল ম্যাচের চ্যাম্পিয়ন দলের হাতে ট্রফি তুলে দেন আবুল খায়ের লিটু, উম্মে শারমিন কবির, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারপারসন তামারা হাসান আবেদ, ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর সৈয়দ ফারহাত আনোয়ার, ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব ল্যাঙ্গুয়েজেসের প্রতিষ্ঠাতা এবং উপদেষ্টা লেডি সৈয়দা সারওয়াত আবেদ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ডেভিড ডাউল্যান্ড।
অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক ও বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী লুভা নাহিদ চৌধুরী। তিনি অতুলপ্রসাদ সেন, রজনীকান্ত সেন ও দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রচিত কয়েকটি গান পরিবেশ করেন। অনুষ্ঠানে শাস্ত্রীয় বাদ্যযন্ত্র পরিবেশন করেন বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী। ধ্রুপদি সংগীতের এই আবহ শিক্ষার্থীসহ সবাইকে মোহিত করে তুলেছিল। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন অফিস অব কমিউনিকেশনসের ডিরেক্টর খায়রুল বাশার।