যে ফুটবলার এক সময় বার্সেলোনা ছাড়ার দ্বারপ্রান্তে ছিলেন, সেই রাফিনিয়াই এখন ইউরোপের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে মেসিকে ছাড়িয়ে রোনালদোর রেকর্ডে ছোঁয়ার পথে এই ব্রাজিলিয়ান —এ যেন ফুটবল রূপকথার চেয়েও নাটকীয় এক গল্প!
বার্সেলোনার এই ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার যেন নতুন করে জন্ম নিয়েছেন। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে ইন্টার মিলানের বিপক্ষে ৩-৩ গোলের উত্তেজনাকর প্রথম লেগে ফেরান তোরেসকে দিয়ে গোল করিয়ে তিনি নিজের গোল-সহায়তার সংখ্যা নিয়ে গেলেন ২০-তে। যার মানে দাঁড়ায়—চ্যাম্পিয়ন্স লিগে রোনালদোর একচ্ছত্র আধিপত্যকেও চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন তিনি।
২০১৩/১৪ মৌসুমে রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে ২১ গোল অবদান রেখে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে একক মৌসুমে সর্বোচ্চ অবদানের রেকর্ড গড়েছিলেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। রাফিনিয়ার এখন রয়েছে ২০টি। মেসির সবচেয়ে উজ্জ্বল মৌসুমকেও (২০১১/১২) তিনি ইতোমধ্যেই পেছনে ফেলেছেন।
আর একটি অবদান—গোল বা অ্যাসিস্ট—হলেই রোনালদোর রেকর্ড স্পর্শ করবেন। আর দু’টি হলেই হয়ে যাবেন ইতিহাসের নতুন রাজা।
২০২৩ সালে লিডস ইউনাইটেড থেকে ৫৫ মিলিয়ন পাউন্ডে বার্সায় যোগ দিয়েছিলেন রাফিনিয়া। কিন্তু ইনজুরি, ফর্মহীনতা আর দলবদলের গুঞ্জনে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন।
এমনকি জানুয়ারির দলবদলেই সৌদি আরব থেকে আসা মোটা অঙ্কের প্রস্তাবে তিনি রাজি হয়ে যাচ্ছিলেন। নিজেই বলেছিলেন, ‘গত বছর এই অফার পেলে আমি চলে যেতাম। ওই সময় আমি ভীষণ হতাশ ছিলাম। এই ধরনের প্রস্তাব যে কাউকে নাড়া দেয়।’
কিন্তু কোচ হান্সি ফ্লিকের আগমনে সব পাল্টে যায়। নতুন করে আত্মবিশ্বাস, নতুন দায়িত্ব—এমনকি অধিনায়কত্বের ভারও পেয়েছেন তিনি।
তরুণ লামিন ইয়ামালের উজ্জ্বল পারফরম্যান্সের মাঝেও বার্সার নেতৃত্বে ছিলেন রাফিনিয়া। গোলের সঙ্গে অ্যাসিস্টেও তিনি এখন ইউরোপের সেরা—সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৫২টি গোল অবদান।
চলতি মৌসুমে কোপা দেল রে’তে রিয়াল মাদ্রিদকে ৩–২ গোলে হারিয়ে শিরোপা জিতেছে বার্সেলোনা। লা লিগাতেও ৫ ম্যাচ বাকি থাকতে ৪ পয়েন্টে এগিয়ে তারা। এমন পরিস্থিতিতে ব্যালন ডি’অরের আলোচনায় উঠে এসেছেন রাফিনিয়া। পিএসজির উসমান ডেম্বেলে ও লিভারপুলের মোহাম্মদ সালাহকে পেছনে ফেলে এখন তিনিই ফেভারিট।
সামনের পথে অবশ্য আরও দুটি বিশাল বাধা—সান সিরোতে ইন্টার মিলানের বিপক্ষে ফিরতি লেগ, তারপর যদি পৌঁছান, তবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল। কিন্তু যা পারফরম্যান্স, তাতে ইতিহাস গড়ার জন্য তিনি যেন প্রস্তুত।
রোনালদোর রেকর্ড? এখন সেটা আর দূরের কিছু নয়। রাফিনিয়া হয়তো দেখিয়ে দিচ্ছেন—সাহস, পরিশ্রম আর সঠিক সময়ের সুযোগ কাজে লাগাতে জানলেই সব সম্ভব।