দীর্ঘ ১২ বছর পর ঘরের মাঠে ফিরেছিলেন ‘গোল্ডেন বয়’। সান্তোসে নেইমারের প্রত্যাবর্তন ঘিরে ছিল ভক্তদের অগাধ উত্তেজনা আর প্রত্যাশা। তবে বাস্তবতা হলো—নেইমারের দ্বিতীয় অধ্যায় এখন হতাশা, ইনজুরি আর হতশ্রী পারফরম্যান্সের এক মিশেল। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে দলীয় পারফরম্যান্সের বেহাল দশা। সব মিলিয়ে, ৩৩ বছর বয়সী ব্রাজিলিয়ান তারকার সান্তোস অধ্যায় শেষ হওয়া হয়তো সময়ের অপেক্ষা মাত্র।
মাঝ এপ্রিলের একটি পেশির চোটে প্রায় এক মাস মাঠের বাইরে ছিলেন নেইমার। অবশেষে ফিরেছেন এই সপ্তাহে, কোপা ডো ব্রাজিলের তৃতীয় রাউন্ডে ক্লাবে রেগাতাস ব্রাসিলের বিপক্ষে। দ্বিতীয়ার্ধে নেমে মাত্র ২৮ মিনিট খেলেও আলোচনায় এসেছেন—খেলার জন্য নয়, বরং খেলার পর দেওয়া সাক্ষাৎকারে সতীর্থদের উদ্দেশে দেওয়া এক ‘সাবটেল শট’-এর কারণে।
‘আমি জানি, আমি মাঠে থাকলে পরিস্থিতি বদলে যায়। ২০ বা ২৫ মিনিটেও পার্থক্য গড়ে দিতে পারি। আমি জানি, আমি দলকে সাহায্য করতে পারি,’—বলেই নেইমার যোগ করেন, ‘কিন্তু সব কিছু আমার ওপর নির্ভর করতে পারে না। এটা আমার প্রথম ম্যাচ ফিরেই, কিন্তু সবাই জানে আমরা কোন পরিস্থিতিতে আছি। এখানে প্রত্যেক খেলোয়াড়ের দরকার।’
এই কথায় অনেকেই টের পেয়েছেন—দলের দুর্দশায় একরকম হতাশায় ভুগছেন নেইমার, আর হয়তো সেই হতাশা থেকেই সতীর্থদের উদ্দেশে এভাবে খোলামেলা বললেন।
সান্তোসের পারফরম্যান্স সত্যিই শোচনীয়। ক্যাম্পিওনাতো পাউলিস্তার সেমিফাইনালে করিন্থিয়ানসের কাছে বিধ্বস্ত হয়ে বিদায় নিয়েছিল দলটি—যেই ম্যাচে ইনজুরির কারণে খেলতেই পারেননি নেইমার।
আর ব্রাজিলিয়ান লিগের অবস্থা আরও করুণ। নয় ম্যাচে মাত্র ৫ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন অবস্থানে সান্তোস। এক জয়, দুই ড্র আর ছয় হার তাদের ঠেলে দিয়েছে অবনমন অঞ্চলে।
এদিকে, কোপা ডো ব্রাজিল থেকেও বিদায় নিতে হয়েছে দ্বিতীয় বিভাগের দলের কাছে হেরে। ফলে পুরো মৌসুমে এখন আর কোনো প্রতিযোগিতা নেই হাতে—শুধু লিগই ভরসা।
গত জানুয়ারিতে সান্তোসে যোগ দেওয়ার সময় নেইমার বলেছিলেন, ‘ছয় মাসের চুক্তি, চাইলে বাড়ানো যাবে। আমি ফিরেছি খেলার জন্য, নামের জন্য নয়।’ সেই ছয় মাস এখন প্রায় শেষের পথে। কিন্তু সামনে কী অপেক্ষা করছে?
ক্লাবে রেগাতাস ব্রাসিলের কাছে পেনাল্টি শ্যুটআউটে হারের পর সাংবাদিকরা জিজ্ঞেস করলে নেইমার বলেন, ‘আমি এখনো জানি না। সত্যি বলতে, জানি না।’
নেইমারের মন্তব্যে বোঝাই যাচ্ছে—তিনি খুশি নন বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে। ইনজুরি, দলগত ব্যর্থতা, আর সতীর্থদের সহযোগিতার অভাব সব মিলিয়ে যে হতাশা তৈরি হয়েছে, সেটিই এখন ভবিষ্যতের সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলতে পারে।
তবে একটা প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—এই নেইমার কি ফিরবেন সেই পুরনো নেইমারে? নাকি সান্তোসেই থেমে যাবে তার ফুটবল ক্যারিয়ারের শেষ অধ্যায়ের স্বপ্ন? সময়ই দেবে উত্তর।