শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সব শ্রেণিতে ইসলামের শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনীসহ মহামানবদের জীবনী সংবলিত প্রবন্ধ সংযোজন ও প্রাণীর মূর্তিনির্ভর ভাস্কর্য নির্মাণ না করে দেশীয় প্রকৃতি, ঐতিহ্যকে বিভিন্ন চিত্রাঙ্কন-ভাস্কর্যে তুলে আনার দাবি জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান দলের ‘রাষ্ট্র সংস্কার প্রস্তাবনায়’ এ দাবি জানান।
বুধবার (৯ অক্টোবর) রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের আমির রাষ্ট্র সংস্কারে তার দলের ১০ দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলোর মধ্যে পর পর একই ব্যক্তিকে প্রধানমন্ত্রী না করার প্রস্তাব করা হয়। উল্লেখ্য, এই প্রস্তাব ২০২২ ঘোষিত বিএনপির ২৭ দফা ও ২০২৩ সালে ঘোষিত ৩১ দফায় সংযুক্ত আছে।
‘রাষ্ট্র সংস্কার প্রস্তাবনা’ অনুষ্ঠানে ডা. শফিকুর রহমান দেশের বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী, সম্পাদক, সাংবাদিক, কলামিস্ট ও গবেষকদের সামনে স্বাগত বক্তব্য পেশ করেন। আমিরের পক্ষ থেকে ‘রাষ্ট্র সংস্কার প্রস্তাবনা’ উপস্থাপন করেন নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের।
কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ-এর সঞ্চালনায় সভায় উপস্থিত ছিলেন নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান ও মাওলানা আ ন ম শামসুল ইসলাম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাছুম, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, হামিদুর রহমান আযাদ, অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের ও মাওলানা আবদুল হালিম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন ও মোবারক হোসাইন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির সেলিম উদ্দিন, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম প্রমুখ।
জামায়াত আমির বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে দেড় সহস্রাধিক প্রাণের বিনিময়ে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে চলে যান। ৮ আগস্ট গঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।’
শফিকুর রহমানের ভাষ্য, ‘এই সরকারের প্রধান দায়িত্ব হলো—স্বল্পতম সময়ের মধ্যে মৌলিক সংস্কার সম্পন্ন করে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও অর্থবহ করার জন্য নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক সংস্কার প্রয়োজন। সংস্কার ব্যতীত নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হতে পারে না।’
উল্লেখযোগ্য প্রস্তাব হচ্ছে, উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগের জন্য সুষ্ঠু ও সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন, বিচার বিভাগ থেকে দ্বৈত শাসন দূর, বিচার বিভাগ নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথকীকরণের কার্যকর ব্যবস্থা, আইন মন্ত্রণালয় থেকে আলাদা করে সুপ্রিম কোর্টের অধীনে পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠা, বিচারের দীর্ঘসূত্রতা কমাতে বিভাগীয় পর্যায়ে হাইকোর্ট বেঞ্চ প্রতিষ্ঠা, নিম্ন আদালতের যথাযথ স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য পৃথক বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠন, সব ফৌজদারি মামলা তদন্তের জন্য স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন, সংসদের প্রধান বিরোধী দল থেকে একজন ডেপুটি স্পিকার মনোনয়ন, বিরোধীদলীয় নেতার নেতৃত্বে ছায়া মন্ত্রিসভা গঠনের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা গ্রহণ।
এছাড়াও জামায়াত প্রস্তাব করেছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক ব্যবস্থা চালু, কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে স্থায়ীভাবে সন্নিবেশিত করা, ইভিএম ভোটিং ব্যবস্থা বাতিল, ২০০৮ সালে প্রবর্তিত রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন প্রথা বাতিল, নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য কমিশনার নিয়োগের জন্য প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা ও প্রধান বিচারপতির সমন্বয়ে সার্চ কমিটি গঠন করা।
এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সংস্কার, র্যাব বিষয়ক সংস্কার, জনপ্রশাসন সংস্কার, দুর্নীতি প্রতিরোধ, পাঠ্যপুস্তকে ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা, একটি স্থায়ী শিক্ষা কমিশন গঠন, শিক্ষা সংস্কারের লক্ষ্যে গঠিত শিক্ষা কমিশনের সব ধারা তথা সাধারণ, আলিয়া, কওমির প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা, প্রাণীর মূর্তিনির্ভর ভাস্কর্য নির্মাণ না করে দেশীয় প্রকৃতি, ঐতিহ্যকে বিভিন্ন চিত্রাঙ্কন-ভাস্কর্যে তুলে আনা, হজ ব্যবস্থাপনার জন্য স্বতন্ত্র অধিদফতর প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি।