Homeরাজনীতিবাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত: মির্জা ফখরুল

বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত: মির্জা ফখরুল


‘বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত’ বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘পরিবর্তনের সুযোগ আমাদের সবাইকে নিতে হবে। এই দেশটা কারও একার নয়। ১৯৭১ সালে আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছিলাম… সেই স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছিলাম তার যে মূল চেতনা ছিল, বাংলাদেশে সত্যিকার অর্থেই একটা অসাম্প্রদায়িক, সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক একটা রাষ্ট্র, একটা সমাজ নির্মাণ করবো। সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।’

বুধবার (৯ অক্টোবর) দুর্গাপূজার ষষ্ঠীতে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী কেন্দ্রীয় পূজামণ্ডপে গিয়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন বিএনপির মহাসচিব।

তিনি বলেন, ‘আমি আজকে এখানে এসেছি… আমি আমার দলের পক্ষ থেকে, দলের চেয়ারপারসন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি…. এই শারদীয় দুর্গাপূজা আপনাদের জীবনে অনাবিল আনন্দ নিয়ে আসুক, একটা সুন্দর ভবিষ্যৎ নির্মাণ করুক, বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থেই একটা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত হয়ে থাকুক… এই কামনা করছি, এই প্রত্যাশা করছি।’

বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীর সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা। বুধবার ষষ্ঠী তিথিতে দেবীর আমন্ত্রণের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতার প্রথম দিন সকালে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে পূজামণ্ডপে আসেন বিএনপি মহাসচিবসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।

ঢাকেশ্বরী পূজামণ্ডপে পৌঁছালে মহানগর সর্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব, সাধারণ সম্পাদক তাপস চন্দ্র পাল, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর ও সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মাসহ পূজা উদযাপন কমিটির নেতারা বিএনপি মহাসচিবকে স্বাগত জানান।

মন্দিরে প্রবেশ করে মির্জা ফখরুল পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেন এবং আগত পুণ্যার্থীদের শুভেচ্ছা জানান।

তিনি বলেন, ‘যে দেবীর আপনারা আরাধনা করছেন, যাকে আপনারা মা দুর্গা বলেন এবং এই দেবীর আবির্ভাব হয়েছিল অসুরকে বদ করার জন্য, অন্যায়কে দূর করার জন্য এবং মানুষে মানুষে ভ্রাতৃত্ব বন্ধুত্ব সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠার জন্য। হিংসা-প্রতিশোধ-প্রতিহিংসা দূর করে ভালোবাসা প্রেমের সমাজ নির্মাণ করার জন্য।’

‘আজকে সেই সুযোগ আমাদের সামনে উপস্থিত হয়েছে। আমরা ভয়াবহ দানবীয় শক্তিকে পরাজিত করে সম্ভাবনা সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছি, যেখানে আমাদের একটা নতুন বাংলাদেশ নির্মাণ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে আমাদের মধ্যে কোনও ভেদ থাকবে না, ভেদাভেদ থাকবে না, ধর্মান্ধতা থাকবে না, সাম্প্রদায়িকতা থাকবে না। এক বর্ণের সঙ্গে আরেক বর্ণের কোনও প্রতিশোধ-প্রতিহিংসা বা ঘৃণার কোনও রাজনীতি থাকবে না।’

সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শাসনামলে ঢাকার মেয়র প্রয়াত সাদেক হোসেনসহ মন্ত্রিসভার সদস্যরা ঢাকেশ্বরী মন্দিরের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করেন, যা তুলে ধরেন তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনারা যে ৮ দফার কথা বলেছেন, সেই ৮ দফা আমরা বিবেচনা করছি। এর যে মূল বিষয়টি সেটার প্রতি আমাদের সর্বাত্মক যে সহানুভূতি সেটা রয়েছে। আমরা আপনাদের এটুকু বলতে পারি, অতীতে যেমন আমরা আপনাদের প্রতিটি সমস্যায় পাশে এসে দাঁড়িয়েছি, ঠিক একইভাবে আগামীতেও আপনাদের সঙ্গে থাকবো।’

তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, একটি রাজনৈতিক দল, আমি নাম বলতে চাই না, তারা বরাবরই বলে থাকে—তারাই নাকি এখানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ত্রাণকর্তা। কিন্তু আপনারা যদি দেখেন, অতীতে যত ঘটনা ঘটেছে, তার নেতৃত্বে কিন্তু তাদের লোকেরাই সেখানে ছিল এবং বাংলাদেশে আপনাদের সম্প্রদায়ের মানুষের যত জমিজমা, সম্পত্তি দখল করে নেওয়া হয়েছে, তার মূলেও তারা ছিল।’

‘আমরা এই কথাটা বলতে পারি, আগামীতে আমাদের যখন… প্রতিষ্ঠিত হবে… আপনারা জানেন, এটা আমাদের সরকার নয়, এটা একটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আমাদের সরকার এলে প্রতিটি ঘটনার আমরা নিরপেক্ষ তদন্ত করে বিচারের ব্যবস্থা করবোই।’

৮ দফা দাবি তুলে ধরে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা বলেন, ‘আমাদের ওপর যেসব অন্যায় হয়েছে, নির্যাতন হয়েছে—আমরা তার ন্যায়বিচার ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। আমরা আশা করি, আপনি আমাদের সঙ্গে থাকবেন, আপনার দল আমাদের সঙ্গে থাকবে। কেন আশা করি? ৫ আগস্টের পরে আপনার দলের নেতাকর্মীরা আমাদের মন্দির পাহারায় ছিলেন, আমাদের বাড়িঘর পাহারায় ছিলেন। সেজন্য আজকের দিনে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’

‘আপনার দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং আপনার নির্দেশে সারা দেশে পূজা কমিটির টিমের সঙ্গে আপনাদের নেতারা সাংগঠনিকভাবে আলাপ-আলোচনা করেছেন। পূজায় আমাদের নিরাপত্তার কাজে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। সেজন্য আপনাদের ধন্যবাদ জানাই।’

সন্তোষ শর্মা আরও বলেন, ‘তবে আমরা প্রত্যাশা করি, আমাদের ৮ দফা এবং আমাদের ন্যায়বিচারের দাবির সঙ্গে পাশে থাকবেন ও একাত্মতা ঘোষণা করবেন। আরেকটা কথা বলতে চাই, আমাদের জন্ম এ দেশে, আমরা এ দেশের সন্তান। আমরা এই দেশে সব নাগরিক অধিকার নিয়ে, ন্যায়ের অধিকার নিয়ে, সাংবিধানিক অধিকার নিয়ে বসবাস করতে চাই। আপনারা অতীতেও আমাদের পাশে ছিলেন, ভবিষ্যতেও থাকবেন এই প্রত্যাশা করি।’

মহানগর পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব দুর্গাপূজার প্রথম দিনে ষষ্ঠীতে ঢাকেশ্বরী পূজামণ্ডপে আসার জন্য বিএনপি মহাসচিবসহ নেতাদের ধন্যবাদ জানান।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে এই বিশাল পরিবর্তনের ফলে সারা দেশের মানুষ যখন আনন্দিত হয়েছে… যখন পরিবর্তনের একটা আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি হয়েছে, আশা তৈরি হয়েছে, সেই সময়ে দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিদেশি কিছু মিডিয়া, কিছু প্রচারমাধ্যম তারা বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিরুদ্ধে কথা বলেছে, যা একেবারেই সত্য নয়।’

‘ঘটনা ঘটেনি সে কথা আমি বলবো না। কিছু ঘটনা ঘটেছে, তা কোনও সাম্প্রদায়িক ঘটনা ছিল না, তা ছিল রাজনৈতিক ঘটনা।’

আওয়ামী লীগ সরকারের নির্যাতনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন যে ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে আমরা দীর্ঘ ১৫ বছর সংগ্রাম-লড়াই করেছি এবং এতে আমাদের অনেক নেতাকর্মী প্রাণ দিয়েছেন, আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে, মিথ্যা মামলার বেড়াজালে আমরা অনেকেই এখন পর্যন্ত আটক আছি।’

‘আপনারা জানেন যে কিছু দিন আগে যে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান হলো, সেখানে প্রায় ১৫০০ ছাত্র-জনতা শহীদ হয়েছেন। তাদের প্রতি আমরা শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। আমরা সরকারের কাছে আবেদন জানাবো, শহীদদের পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্ষতিপূরণ এবং তাদের পরিবারের ভরণপোষণের যেন ব্যবস্থা করা হয়। আপনাদেরও যদি কোনও ব্যক্তি বা পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে, তাদেরও আমি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’

অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত