Homeঅর্থনীতিঅস্বস্তিকর সময়ের বাজেটে কতটা স্বস্তি মিলবে

অস্বস্তিকর সময়ের বাজেটে কতটা স্বস্তি মিলবে


নির্বাচন হবে কিনা— তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে তীব্র উত্তেজনা ও টানাপোড়েন। দিন যত এগুচ্ছে, বিএনপির সঙ্গে সরকারের দূরত্ব ততই বাড়ছে। সেই সঙ্গে অর্থনৈতিক পরিস্থিতিও স্থিতিশীল হয়নি। ব্যবসায়ীরাও ব্যবসা-বাণিজ্যে আস্থা পাচ্ছেন না। বেসরকারি বিনিয়োগও হচ্ছে না। এমন সংকটের মুখেই ঘোষিত হতে যাচ্ছে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট। এই বাজেটে শুল্ক ও কর কাঠামোয় বড় ধরনের পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা রয়েছে। আমদানি শুল্কের স্তরগুলো পুনর্বিন্যাস করার পাশাপাশি সম্পূরক শুল্কেও উল্লেখযোগ্য সংশোধনী আনা হবে। কিছু পণ্যের উপর নতুন শুল্ক আরোপ করা হতে পারে, আবার কোথাও শুল্ক কমিয়ে আনা হবে। এই পরিবর্তনগুলো মূলত স্থানীয় শিল্পকে শক্তিশালী ও প্রতিযোগিতায় সক্ষম করে তোলার লক্ষ্যে নেওয়া হচ্ছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২ জুন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জাতির উদ্দেশে ভাষণের মাধ্যমে নতুন বাজেট ঘোষণা করবেন, যেখানে বহু পণ্যের শুল্কহার কমানো ও বাড়ানোর প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এতে একদিকে যেমন গণপরিবহন, প্রযুক্তি ও খাদ্যপণ্যের দামে স্বস্তি আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, অন্যদিকে বিলাসপণ্য ও শিশুদের খেলনার মতো আমদানিনির্ভর ভোগ্যপণ্যে ব্যয় বেড়ে যেতে পারে।

শুল্ক কাঠামোয় আসছে নতুন স্তর

বর্তমানে ০, ১, ৫, ১০, ১৫ ও ২৫ শতাংশ—এই ছয়টি স্তরের আমদানি শুল্ক কাঠামো বিদ্যমান রয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এতে নতুন করে ৩ শতাংশ একটি স্তর যুক্ত করে মোট স্তর সাতটিতে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। পাশাপাশি সম্পূরক শুল্কেও ৪০ শতাংশের একটি নতুন স্তর যোগ করার প্রস্তাব এসেছে।

অন্যদিকে, খাদ্য, সার, বীজ, ওষুধ এবং শিল্পের মৌলিক কাঁচামালে বিদ্যমান শুল্কহার অপরিবর্তিত রাখার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দেশীয় শিল্প সুরক্ষায় ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্কাধীন পণ্যে ৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বহাল রাখার প্রস্তাবও রয়েছে।

যেসব ক্ষেত্রে শুল্ক কমছে

ওষুধ ও স্বাস্থ্য খাতে ছাড়: ক্যানসারসহ ৭৯ ধরনের ওষুধের কাঁচামালে শুল্ক প্রত্যাহারের প্রস্তাব এসেছে, যা স্থানীয় উৎপাদকদের জন্য ইতিবাচক ও ওষুধের দামে প্রভাব ফেলতে পারে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে চিকিৎসা ব্যয় কমাতে বড় ধরনের শুল্ক ছাড়ের পরিকল্পনা গ্রহণ করছে সরকার। বিশেষ করে ক্যানসার-প্রতিরোধী ওষুধসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ উৎপাদনে ব্যবহৃত কাঁচামাল এবং চিকিৎসা যন্ত্রপাতির ওপর শুল্কছাড়ের আওতা বাড়ানো হচ্ছে। এই উদ্যোগের লক্ষ্য হলো, স্থানীয় ওষুধ উৎপাদন খাতকে আরও শক্তিশালী করা এবং সাধারণ মানুষের চিকিৎসা ব্যয় হ্রাসে কার্যকর ভূমিকা রাখা।

জানা গেছে, নতুন অর্থবছরের বাজেটে ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামের ৭৯টি নতুন পণ্যে শুল্কছাড়ের প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই তালিকায় রয়েছে— ক্যান্সার প্রতিরোধী ওষুধ তৈরির জন্য ২৩টি নতুন কাঁচামাল, অন্যান্য জীবনরক্ষাকারী ওষুধ তৈরির জন্য ৩৬টি কাঁচামাল এবং ওষুধ শিল্পে ব্যবহৃত ২০টি অত্যাবশ্যক চিকিৎসা যন্ত্রপাতি ও উপকরণ প্রভৃতি।

ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের সুপারিশের ভিত্তিতে ক্যান্সার চিকিৎসায় ব্যবহৃত নতুন কাঁচামালগুলোর ওপর শুল্কছাড়ের প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এ উদ্যোগের ফলে দেশেই ক্যান্সারসহ জটিল রোগের ওষুধ উৎপাদন বাড়বে, যার সুফল পাবেন রোগীরা।

বেসরকারি হাসপাতালগুলোর জন্যও স্বস্তির বার্তা: বর্তমানে শুধু সরকারি ও বিশেষায়িত রেফারেল হাসপাতালগুলো চিকিৎসা যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম আমদানিতে শুল্কছাড় সুবিধা পেয়ে থাকে। তবে এবারের বাজেটে সব বেসরকারি হাসপাতালকে এ সুবিধার আওতায় আনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এর ফলে স্বাস্থ্যখাতে বিনিয়োগে উৎসাহ বাড়বে এবং রোগীরা তুলনামূলক সাশ্রয়ী মূল্যে উন্নত চিকিৎসা সেবা পেতে সক্ষম হবেন।

ভ্যাকসিন উৎপাদনেও উৎসাহ: বাজেট প্রস্তাবে ভ্যাকসিন উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি টিএফএফ (ট্যাংগেনশিয়াল ফ্লো ফিল্টারেশন) সিস্টেম-এর জন্য আলাদা এইচএস কোড চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে এই যন্ত্রটি মাত্র ১ শতাংশ আমদানি শুল্কে আনতে পারার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। এতে করে দেশীয়ভাবে ভ্যাকসিন উৎপাদন খরচ কমবে এবং ভবিষ্যতে সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের সক্ষমতা বাড়বে।

চিকিৎসা সেবায় সহনশীলতা বাড়ানোর প্রয়াস: বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বাজেটে প্রস্তাবিত এই শুল্কছাড় কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন হলে তা শুধু ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামের মূল্য কমাবে না, বরং দেশের স্বাস্থ্য খাতের ওপর মানুষের আস্থা বাড়াবে। একই সঙ্গে স্থানীয় উৎপাদনের বিকাশ ঘটিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ের দিকেও তা অবদান রাখবে।

জ্বালানি ও খাদ্য নিরাপত্তা: জ্বালানির ওপর শুল্ক ৫-১০ শতাংশ থেকে ১-৩ শতাংশ করা হচ্ছে, যাতে জ্বালানির আমদানি খরচ হ্রাস পায় এবং বিদ্যুৎ ও পরিবহন ব্যয় নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

স্থানীয় শিল্পের কাঁচামালে সুবিধা: টায়ার, টিউব, ব্রেকসু, ক্রিকেট ব্যাট, চামড়া শিল্পের কাঁচামালে শুল্ক হ্রাসের প্রস্তাব এসেছে, যা কর্মসংস্থান ও রফতানি সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হতে পারে।

এছাড়া আরও যেসব পণ্যে দাম কমার সম্ভাবনা

গণপরিবহন ও যাত্রীবাহী যানবাহন: ১৬ থেকে ৪০ আসনের বাস আমদানিতে আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব এসেছে। মাইক্রোবাস (১০–১৫ আসন) আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হতে পারে। এতে ঢাকাসহ বড় শহরের গণপরিবহন খাতে স্বস্তি আসতে পারে।

চিনি: পরিশোধিত চিনির ওপর শুল্ক কমিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার উদ্যোগও দেখা যাচ্ছে।পরিশোধিত চিনির প্রতি টনে আমদানি শুল্ক সাড়ে চার হাজার টাকা থেকে কমিয়ে চার হাজার টাকায় নামানো হচ্ছে। এতে বাজারে চিনির দাম কিছুটা কমার আশা করা হচ্ছে।

নিউজপ্রিন্ট: সংবাদপত্র শিল্পে ব্যবহৃত নিউজপ্রিন্ট আমদানিতে শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করার সুপারিশ করা হয়েছে।

প্রযুক্তিপণ্য ও সফটওয়্যার: অপারেটিং সিস্টেম, ডেটাবেজ, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট টুলস ও সাইবার সিকিউরিটি পণ্যে শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হচ্ছে। এতে দেশি প্রযুক্তি উদ্যোক্তারা কিছুটা সুবিধা পাবেন।

ক্রিকেট ব্যাট ও কাঁচামাল: উইলো কাঠ আমদানিতে মোট শুল্ক ৩৭ শতাংশ থেকে ২৬ শতাংশে নামানো হচ্ছে, যাতে স্থানীয়ভাবে ক্রিকেট ব্যাট উৎপাদন ও রপ্তানি বাড়ে।

সি-ফুড ও বিদেশি পণ্য: জাপানি স্ক্যালোপসহ কিছু বিদেশি সিফুড, মাখন ও সিরিশ কাগজে শুল্ক হ্রাসের প্রস্তাব এসেছে।

শিল্প যন্ত্রপাতি ও উপকরণ: রফতানি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে ব্যবহৃত র‍্যাকিং সিস্টেম ও মেটাল ডিটেক্টরে বিদ্যমান ৫৮ ও ৩৭ শতাংশ শুল্ক কমানো হচ্ছে।

অন্যান্য পণ্য: রফতানি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পকারখানায় ব্যবহৃত মালামাল গুদামজাতকরণের জন্য ব্যবহৃত ইন্ডাস্ট্রিয়াল র‌্যাকিং সিস্টেম এবং উৎপাদিত পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত মেটাল ডিটেক্টর মেশিনের আমদানিতে বর্তমানে যথাক্রমে ৫৮ শতাংশ ও ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপিত রয়েছে। উচ্চ এই শুল্ক হারগুলো শিল্পের উন্নয়নে বাধা হিসেবে কাজ করছে বলে বাজেটে উভয় পণ্যের আমদানিতে শুল্ক অব্যাহারের সুপারিশ করা হতে পারে।

এছাড়া, জাপানি সিফুড স্ক্যালোপের আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব রয়েছে, যা স্ক্যালোপের বাজার মূল্য হ্রাসে সাহায্য করবে। একই সঙ্গে বিদেশি মাখন, ড্রিংকসহ কিছু পণ্যের দামও কমানোর লক্ষ্যে শুল্ক হ্রাসের সুযোগ দেওয়া হতে পারে। অন্যদিকে, দেশি সিরিশ কাগজের দামও কমানোর সম্ভাবনা রয়েছে।

১৭২ পণ্যে শুল্ক কমানোর প্রস্তাব

এনবিআর সূত্র বলছে, আগামী বাজেটে ১৭২টি পণ্যে সম্পূরক শুল্ক হ্রাসের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এর উদ্দেশ্য হলো মূল্যস্ফীতির চাপ কমানো, শিল্পে প্রতিযোগিতা বাড়ানো এবং ন্যায্য রাজস্ব আহরণ।

যেসব ক্ষেত্রে শুল্ক বাড়ছে

স্থানীয় ১৪টি শিল্প খাতে কাঁচামালে শুল্ক বৃদ্ধি: ওয়াটার পিউরিফায়ার, ফ্যান, সিগারেট পেপার, বেভারেজ কনসেন্ট্রেট ইত্যাদি খাতে শুল্ক বাড়ানো হচ্ছে, যাতে এ খাতে অনুৎপাদনশীল সুরক্ষা না দিয়ে প্রতিযোগিতা বাড়ানো যায়।

ন্যূনতম মূল্য বাড়ানো: লিপস্টিক, ফেসওয়াশ, খেলনা, তালা প্রভৃতি পণ্যে ন্যূনতম মূল্য দ্বিগুণ পর্যন্ত বাড়ানো হচ্ছে। এর ফলে মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে কর ফাঁকি রোধ সহজ হবে, তবে আমদানি খরচ বাড়বে।

স্টিল ও সিমেন্ট শিল্পে শুল্ক কাঠামোর পরিবর্তন: স্টিল কাঁচামালে কাস্টমস শুল্ক তুলে দিয়ে ভ্যাট ও এআইটি বাড়ানো হচ্ছে। আবার ক্লিংকারে নির্ধারিত শুল্ক বাতিল করে ২৫ শতাংশ অ্যাড ভ্যালোরেম শুল্ক প্রস্তাব এসেছে, যা সিমেন্ট খাতের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলবে।

সমালোচনার মুখে কিছু খাত

নির্মাণ খাত: সিমেন্ট, রড, ক্লিংকার, স্ক্রু-নাট, টাইলসের উপকরণে শুল্ক ও করভার ব্যাপক হারে বাড়ানো হচ্ছে। ক্লিংকারে শুল্ক ১৫-২৫ শতাংশ, স্ক্রু-নাটে ৮৯ শতাংশ এবং টাইলস উপকরণে সর্বোচ্চ ১২৭ শতাংশ পর্যন্ত কর আরোপ হতে পারে। এতে নির্মাণ ব্যয় বাড়বে বলে আশঙ্কা।

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য: এলইডি বাতির উপকরণ, কীটনাশক, মশার ওষুধেও বাড়তি শুল্ক আরোপের প্রস্তাব রয়েছে, যা সাধারণ মানুষের ওপর প্রভাব ফেলবে।

রিকশার মোটর: ব্যাটারিচালিত রিকশার মোটরের শুল্ক ১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব আসছে, যা পরিবেশবান্ধব যানবাহনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

যেসব খাতে শুল্ক ছাড়

কাঁচামাল ও যন্ত্রাংশ: পিভিসি পাইপ, কপার ওয়্যার, মোটর উপকরণ, লিফট, রাইস ব্র্যান ওয়েল, টায়ার-টিউব ইত্যাদির আমদানিতে শুল্ক কমানো  হচ্ছে।

কেমিক্যাল ও সফটওয়্যার: বিদেশি সফটওয়্যার ও কিছু কেমিক্যাল পণ্যে শুল্ক ১-১৫ শতাংশ করা হচ্ছে, তবে এতে দেশীয় উৎপাদকরা চাপে পড়তে পারেন।

কৃষি সংরক্ষণ: কোল্ড স্টোরেজের যন্ত্রপাতিতে মাত্র ১ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

এছাড়া আরও যেসব পণ্যে দাম বাড়বে

হেলিকপ্টার: এখন পর্যন্ত হেলিকপ্টার আমদানিতে শুল্ক ছিল না। নতুন বাজেটে ১০ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপের প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

খেলনা: বিদেশি খেলনার ট্যারিফ মূল্য ৩ দশমিক ৫ ডলার থেকে বাড়িয়ে ৪ ডলার করা হচ্ছে, ফলে খেলনার দাম বাড়বে।

সৌন্দর্য সামগ্রী: লিপস্টিক, ফেসওয়াশ, আইলাইনার ইত্যাদির শুল্কায়নমূল্য দ্বিগুণ করা হচ্ছে। যেমন, লিপস্টিকের ক্ষেত্রে ২০ ডলার থেকে বাড়িয়ে ৪০ ডলার করা হতে পারে।

চকলেট: চকলেটের শুল্কায়নমূল্য ৪ ডলার থেকে বাড়িয়ে ১০ ডলার করার প্রস্তাব এসেছে, যা দাম বাড়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

মূলনীতি ও কাঠামোগত পরিবর্তনের প্রেক্ষাপট

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রস্তাবিত এই সংস্কারগুলোর অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে ‘ট্যারিফ র‌্যাশনালাইজেশন’ বা শুল্ক যৌক্তিকীকরণ। বর্তমানে বাংলাদেশে আমদানি পণ্যের গড় শুল্ক ২৮ শতাংশ, যা এলডিসি দেশগুলোর তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি। একদিকে যেখানে ট্যারিফ ওয়াল (ট্যারিফ ওয়াল) নীতি দেশীয় শিল্পকে সুরক্ষা দিচ্ছে, অন্যদিকে এটি দীর্ঘমেয়াদে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা ও বৈশ্বিক সংযুক্তিকরণে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) ও অন্যান্য উন্নয়ন অংশীদারদের পরামর্শ অনুসারে, বাংলাদেশকে এলডিসি-পরবর্তী বাণিজ্য বৈশ্বিক মানদণ্ডে টিকে থাকতে হলে, এই অতিরিক্ত সুরক্ষা বেষ্টনী ক্রমান্বয়ে তুলে ফেলতেই হবে। সেই লক্ষ্যেই এবার বাজেটে বড় আকারের শুল্ক সংস্কার পরিকল্পনা এসেছে।

বিশ্ববাণিজ্যের মানদণ্ডে প্রস্তুতির একটি ধাপ

বিশ্ববাণিজ্যে যুক্ত হতে হলে পণ্যের প্রতিযোগিতামূলক মূল্য নিশ্চিত করা প্রয়োজন। অতিরিক্ত শুল্ক সুরক্ষা একদিকে যেমন ব্যয় বাড়ায়, অন্যদিকে উদ্ভাবনের গতিও কমিয়ে দেয়। তাই ট্যারিফ র‌্যাশনালাইজেশন কেবল শুল্কনীতি নয়, এটি একটি অর্থনৈতিক কৌশল– যেখানে প্রবৃদ্ধি, শিল্পায়ন এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে অভিযোজন সবই একসঙ্গে বিবেচনায় আনা হচ্ছে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ ধরনের শুল্ক পুনর্বিন্যাস উন্নয়নশীল অর্থনীতির বাস্তবতায় রাজস্ব বাড়ানোর যৌক্তিক প্রয়াস হলেও, এর ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেয়ে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় চাপ তৈরি হতে পারে। অপরদিকে, বিদেশি পণ্যে শুল্ক কমিয়ে দেশীয় শিল্পকে অসম প্রতিযোগিতার মুখে ফেলা হতে পারে।

রাজস্ব ও অর্থনৈতিক ভারসাম্য

এই সংস্কারে এনবিআরের লক্ষ্য দ্বিমুখী। একদিকে রাজস্ব আয় নিশ্চিত করা, অন্যদিকে শিল্প নীতিকে টেকসই করা। এনবিআরের এক সিনিয়র কর্মকর্তার ভাষ্য মতে, যেসব পণ্যে শুল্ক কমছে, সেগুলোর আমদানি কম হওয়ায় বড় অঙ্কের রাজস্ব হারানোর আশঙ্কা নেই। আবার যেসব ক্ষেত্রে শুল্ক বাড়ছে, তা মূলত যৌক্তিক প্রতিরক্ষার অংশ।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত