Homeঅর্থনীতিআগামী বছর থেকে নাটকীয়ভাবে বাড়বে বিদেশি বিনিয়োগ: বিডা চেয়ারম্যান

আগামী বছর থেকে নাটকীয়ভাবে বাড়বে বিদেশি বিনিয়োগ: বিডা চেয়ারম্যান


আগামী বছর থেকে বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ার আশা আছে। কারণ, দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। জাপানি সংবাদমাধ্যম নিক্কেই এশিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী।

আশিক চৌধুরী সম্প্রতি জাপান সফর করেন। সে সময়ই তিনি নিক্কেইকে এই সাক্ষাৎকার দেন। তিনি বলেন, আগামী ৩-৫ বছরের মধ্যে ঢাকা দেশে বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (এফডিআই) মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় আগামী প্রায় ৪ শতাংশ বাড়াতে চায়।

বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বাংলাদেশের জিডিপি—এফডিআই অনুপাত ছিল প্রায় দশমিক ৩ শতাংশ, যা বৈশ্বিক গড় দশমিক ৮ শতাংশের তুলনায় কম।

আশিক চৌধুরী জানিয়েছেন, নতুন সরকার যেসব সংস্কার পরিকল্পনা নিয়েছে তার মধ্যে অনুমোদন ও শুল্ক প্রক্রিয়া সহজ করা এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করা। বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নয়নের উপায় খুঁজতে বিডা ২০০ টির বেশি দেশি ও বিদেশি কোম্পানির ওপর জরিপ চালিয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

আশিক চৌধুরী বলেন, ‘তাই, এ বছর আমরা সমস্যাগুলো সমাধান করব। আমি আশা করি না যে, এ বছরই এফডিআই হঠাৎ করেই বেড়ে যাবে, তবে আমি আশা করি আগামী বছর থেকে এর সংখ্যা নাটকীয়ভাবে পরিবর্তিত হবে।’

বাংলাদেশ বর্তমানে রাজনৈতিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা ছাত্র আন্দোলনের জেরে দীর্ঘদিনের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত আগস্টে পদত্যাগে বাধ্য হন। ক্ষুদ্রঋণের পথিকৃৎ এবং নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হলো বৈচিত্র্য আনা। কারণ, দেশের মোট রপ্তানির ৮০ শতাংশের বেশি আসে পোশাক শিল্প থেকে। সরকার সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ ও ওষুধশিল্পকে চিহ্নিত করেছে। তবে পোশাকশিল্পের বাইরে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যকে সম্ভাবনাময় বলে মনে করেন আশিক চৌধুরী।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ৪ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত অর্জন করে। বাংলাদেশের মোট রপ্তানির ২০ শতাংশের গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র এবং এটি বাংলাদেশের বৃহত্তম রপ্তানি বাজার।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অনেক দেশের ওপর ‘পারস্পরিক শুল্ক’ (রিসিপ্রোক্যাল ট্যারিফ) আরোপের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। ট্রাম্প এই বিষয়টিকে বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা সমাধানের উপায় হিসেবে দেখছেন। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও শুল্ক আরোপ করা হতে পারে কি না—এমন আশঙ্কার বিষয়ে আশিক চৌধুরী বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে শুল্ক আরোপের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে শুনিনি।’

বিডা চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমি মনে করি, তিনি (ট্রাম্প) এখন পর্যন্ত যেভাবে কৌশল নিয়েছেন, তাতে বিষয়টি আমাদের অনুকূলে যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, চীনের ওপর যে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, তা আমাদের আরও আকর্ষণীয় গন্তব্যে পরিণত করেছে।’ তিনি জানান, ঢাকা যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম ও তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি বাড়াতে চায়।

এ ছাড়া, বাংলাদেশ চীনা কোম্পানিগুলোর জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার বিষয়টি বিবেচনা করছে। কারণ, এসব প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে তাদের উৎপাদন কেন্দ্র স্থানান্তরে আগ্রহী বলে জানান তিনি।

জাপান বাংলাদেশের বৃহত্তম দাতা দেশ। ১৭ কোটি জনসংখ্যার এই দক্ষিণ এশীয় দেশটি একদিকে একটি সম্ভাবনাময় বাজার, অন্যদিকে এটি শ্রমশক্তির বিশাল উৎস। গত ১০ বছরে বাংলাদেশে কার্যক্রম চালানো জাপানি কোম্পানির সংখ্যা তিন গুণ বেড়ে প্রায় ৩৫০ টিতে পৌঁছেছে।

তবে ২০২৪ সালের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বাংলাদেশে বিনিয়োগের প্রবাহ কিছুটা ধীর হয়ে যায়। তবে চৌধুরী জোর দিয়ে বলেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখন স্থিতিশীল। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার বিনিয়োগ আকর্ষণের লক্ষ্যে প্রথম যে দেশটিতে প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছে, তা হলো জাপান।

এই বিষয়ে আশিক চৌধুরী বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ ও জাপানের সক্ষমতা পরস্পরকে পরিপূরকভাবে সহায়তা করতে পারে। আমি জাপানি কোম্পানিগুলোর কাছে প্রত্যাশা করি, তারা যেন সঠিকভাবে বাংলাদেশকে পর্যবেক্ষণ করে এবং বাস্তব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয় যে বাংলাদেশ তাদের জন্য আদর্শ বিনিয়োগ গন্তব্য কি না।’





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত