জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেছেন, যারা আয়কর রিটার্ন দাখিল করেন না, কর ফাঁকি দেন, কিংবা কর অব্যাহতির সুযোগ নেন, তাদের কাছ থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে এবার কর কর্মকর্তাদের জন্য নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হবে। রাজধানীর বনানীতে একটি হোটেলে রবিবার (৪ এপ্রিল) আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
এনবিআরের চেয়ারম্যান বলেন, ‘শুরু থেকেই বিপুল পরিমাণে কর অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে। প্রতিবছর যতটুকু রাজস্ব সংগ্রহ করা হয়, প্রায় সমপরিমাণ অর্থ কর ছাড়ের কারণে হারাতে হচ্ছে। অথচ সরকারের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের চাপ দিনদিন বাড়ছে। এভাবে কর ছাড় দিয়ে দীর্ঘদিন চলা সম্ভব নয়।’
সেমিনারটি যৌথভাবে আয়োজন করে ফরেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফআইসিসিআই), ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ ও জাপান-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. মাসরুর রিয়াজ এবং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট প্রতিষ্ঠান স্নেহাশীষ মাহমুদ অ্যান্ড কোম্পানির অংশীদার স্নেহাশীষ বড়ুয়া।
এনবিআর চেয়ারম্যান জানান, কমিশনারেট পর্যায়ে নির্দেশনা দিয়ে নন-ফাইলার (যারা রিটার্ন জমা দেন না) এবং রিবেটার (কর ছাড়প্রাপ্ত) শ্রেণির করদাতাদের টার্গেট নির্ধারণ করা হবে। এর মাধ্যমে কর কর্মকর্তাদের দক্ষতা ও কর্মক্ষমতার মূল্যায়নও সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।
এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ৯২ শতাংশ রাজস্ব উৎসে কর কর্তনের মাধ্যমে সংগৃহীত হয়, সরাসরি কর আদায় করেন কর্মকর্তারা মাত্র ৮ শতাংশ।
আবদুর রহমান খান বলেন, নতুন কর ছাড় নীতিমালায় ছাড় দেওয়ার সক্ষমতা সংসদের হাতে থাকবে। পাশাপাশি আসন্ন বাজেটে ব্যবসা সহজ করার বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে, তবে রাজস্ব আহরণে কোনও ছাড় দেওয়া হবে না।
সেমিনারে ফরেন চেম্বারের সভাপতি জাবেদ আখতার বলেন, ‘বর্তমান কর ব্যবস্থায় ব্যবসার জন্য কঠিন পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। প্রত্যক্ষ কর সংগ্রহ বাড়ানোর দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। একইসঙ্গে একক ভ্যাট কাঠামো চালুর প্রয়োজন রয়েছে।’
মূল প্রবন্ধে স্নেহাশীষ বড়ুয়া কর ও ভ্যাট সংগ্রহে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলোর সম্পৃক্ততার প্রস্তাব দেন এবং করের অর্থ কোথায় ব্যয় হচ্ছে, সে বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করার পরামর্শ দেন।
পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক চলতি ডিসেম্বরের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের নিচে নামানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করলেও তা অর্জন কঠিন। তবে ৮ শতাংশের নিচে নামতে পারলে সেটাও একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হবে।’
সেমিনারে প্যানেল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশের সিইও মোহাম্মদ ইকবাল চৌধুরী, মারুবেনি করপোরেশনের কান্ট্রি হেড মানাবু সুগাওয়ারা, এনবিআরের সাবেক সদস্য আবদুল মান্নান শিকদার, ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আফজাল হোসেনসহ আরও অনেকে।
আয়োজনে স্বাগত বক্তব্য দেন আইসিএবির সভাপতি মারিয়া হাওলাদার এবং জেবিসিসিআই সভাপতি তারেক রফি ভূঁইয়া। সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন আইসিএবির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির।
এই সেমিনারে অংশগ্রহণকারীদের মতে, কর ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা গেলে রাজস্ব আহরণে বড় পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে।