Homeঅর্থনীতিঈদের আগে অনেক কারখানায় বেতন-বোনাসে অনিশ্চয়তা

ঈদের আগে অনেক কারখানায় বেতন-বোনাসে অনিশ্চয়তা


ঈদুল আজহা সামনে রেখে তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের বেতন-বোনাস দেওয়ার চাপ বেড়েই চলেছে। গ্যাস-সংকট, ব্যাংকগুলোর অর্থ জোগানে অনীহা এবং আমদানি-রপ্তানির জটিলতা—সব মিলিয়ে শ্রমিকদের প্রাপ্য পরিশোধে ধীরগতি তৈরি হয়েছে।

বিজিএমইএর আওতায় বর্তমানে চালু থাকা ২ হাজার ৯২টি কারখানার মধ্যে গত রোববার পর্যন্ত মাত্র ৮১৪টি কারখানা ঈদের বোনাস পরিশোধ করেছে; যা মাত্র ৩৮ দশমিক ৯১ শতাংশ। অর্থাৎ এখনো ১ হাজার ২৭৮টি কারখানার শ্রমিকেরা বোনাস না পেয়ে অপেক্ষায় রয়েছেন।

এদিকে এপ্রিলের বেতন এখনো বাকি রয়েছে ৩০টি কারখানায়। যদিও বাকি ২ হাজার ৬২টি কারখানা ইতিমধ্যে বেতন পরিশোধ করেছে, যা ৯৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ। মার্চের বেতনও দুটি কারখানায় বকেয়া রয়ে গেছে।

এমন পরিস্থিতিতে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় কঠোর অবস্থান নিয়েছে। উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন ২২ মে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ২৮ মের মধ্যে বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ না করলে সংশ্লিষ্ট মালিকদের জেলেও যেতে হতে পারে।

শ্রমিকদের দাবির প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে বিজিএমইএর সদস্য ও ফতুল্লা অ্যাপারেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলে শামীম এহসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গ্যাসের সংকটে উৎপাদন ব্যাহত হলেও শ্রমিকেরা তো তা বুঝবে না, তারা তাদের প্রাপ্যটাই চাইবে, এটাই স্বাভাবিক। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি সময়মতো বেতন-বোনাস দেওয়ার জন্য।’

তবে সমস্যা শুধু গ্যাসে সীমাবদ্ধ নয়। কারখানার মালিকেরা জানিয়েছেন, ব্যাংকগুলোর আগের মতো সহযোগিতা মিলছে না। আগে ঈদের আগে পণ্য রপ্তানি সম্ভব না হলেও ব্যাংক শিপমেন্টের অগ্রিম অর্থ দিয়ে সহায়তা করত। এখন ব্যাংকগুলোও অর্থসংকটে, ফলে কারখানাগুলো আটকে যাচ্ছে মূলধনের ঘাটতিতে।

এই অবস্থায় শিল্পাঞ্চলে শ্রমিকদের মধ্যে বাড়ছে অনিশ্চয়তা। কেউ কেউ শেষ মুহূর্তে বেতন না পেলে রাস্তায় নামার হুমকি দিচ্ছেন। কয়েকটি শ্রমিক সংগঠন দাবি করেছে, পোশাক খাতে আবারও পুরোনো সংকট ঘনিয়ে আসছে; যেখানে বেতন, বোনাস ও চাকরির স্থায়িত্ব—সবই প্রশ্নের মুখে।

অন্যদিকে মালিকদের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান লক্ষ করা যাচ্ছে। বড় কারখানাগুলো অপেক্ষাকৃত সচ্ছল থাকলেও ছোট ও সাবকন্ট্রাক্টর-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থা বেশি সংকটাপন্ন। তাদের মধ্যে অনেকে নির্ভর করে অগ্রিম রপ্তানি আদেশের ওপর, যা এখন অনিয়মিত।

পোশাক খাতসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এখন আর এলসি কার্যকর হলেই ব্যাংক থেকে অর্থ মিলছে না, ফলে অনেক কারখানাই কর্মীদের বেতন দিতে গিয়ে ধারদেনায় পড়েছে। কিছু কারখানার মালিক আবার ঈদের তিন থেকে চার দিন আগেই বেতন-বোনাস পরিশোধের অভ্যাসে আছেন, তাঁদের দেরি এই মুহূর্তে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে না।

গাজীপুর ও ময়মনসিংহে ৮৪৭টি, সাভার-আশুলিয়ায় ৩৯৫টি, নারায়ণগঞ্জে ২০৪টি এবং চট্টগ্রামে ৩৪২টি কারখানা চালু রয়েছে। এর মধ্যে গাজীপুর ও সাভারে দুটি কারখানা বন্ধ রয়েছে।

বিজিএমইএ এবং বিটিএমইএর পক্ষ থেকে বারবার গ্যাস-সংকট ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক টানাপোড়েনের কারণে বেতন-বোনাস দিতে দেরি হতে পারে বলে সতর্কতা দেওয়া হয়েছে।

কারখানাগুলোর একটি বড় অংশ দাবি করছে, কোভিড-পরবর্তী অর্থনৈতিক ধাক্কা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং গত বছর শ্রমিক আন্দোলনের প্রভাব কাটিয়ে উঠতে না পারায় তারা আর্থিক চাপে রয়েছে। তার ওপর গ্যাস সরবরাহের সংকটের কারণে ৪০ শতাংশ কারখানায় উৎপাদন আংশিক বা পুরোপুরি বন্ধ। এতে কাঁচামাল প্রসেসিং, ফিনিশিং, প্যাকেজিং—সব পর্যায়েই দেরি হচ্ছে।

কিছু মালিক যদিও আশ্বস্ত করছেন, ঈদের সময় ঘনিয়ে এলে বোনাস পরিশোধের হারও দ্রুত বাড়বে। তবে শ্রমিকদের ভেতরে আতঙ্ক তৈরি হচ্ছে, বিশেষ করে যেসব কারখানার মার্চ বা এপ্রিলের বেতন এখনো বাকি।

এ পরিস্থিতিতে শ্রম উপদেষ্টা মনোনীত একটি বিশেষ টাস্কফোর্স পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং প্রয়োজনে তাৎক্ষণিক হস্তক্ষেপ করছে। কঠোর নির্দেশনার পরও যদি কেউ দায়িত্ব এড়াতে চান, তাহলে আইন প্রয়োগের কথাও ভাবা হচ্ছে বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত