Homeঅর্থনীতিঈদ উৎসব ঘিরে প্রবাসী আয়ের জোয়ার

ঈদ উৎসব ঘিরে প্রবাসী আয়ের জোয়ার

[ad_1]

ঈদ উৎসব ঘিরে আবারও রেমিট্যান্স প্রবাহে দেখা গেছে রেকর্ড জোয়ার। গত মার্চে ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৩২৯ কোটি মার্কিন ডলার, যা এক মাসে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ আয়। কোরবানির ঈদ সামনে রেখে মে মাসেও এসেছে ২৯৭ কোটি ডলার। এমনকি জুন মাসের শুরুতেই এই ধারা বজায় রয়েছে। জুনের প্রথম তিন দিনে এসেছে ৬০ কোটি ৪০ লাখ ডলারের সমপরিমাণ আয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের (২০২৪–২৫) প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) দেশে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ২৮ দশমিক ১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে এই আয় ছিল ২১ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার। সেই হিসাবে মাত্র এক অর্থবছরে ৬ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। এই প্রবৃদ্ধির ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, বর্তমানে রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৬ দশমিক শূন্য ৬ বিলিয়ন ডলার। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বিপিএম-৬ হিসাব পদ্ধতি অনুযায়ী এ সংখ্যা ২০ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার। উল্লেখ্য, এই হিসাব পদ্ধতিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়বদ্ধ ও অলভ্য অংশ বাদ দিয়ে কেবল প্রকৃত রিজার্ভ দেখানো হয়।

ঈদ ও উৎসবকে ঘিরে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স প্রবাহের ধারা

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ সামনে রেখে প্রবাসীরা পরিবার-পরিজনের জন্য বেশি পরিমাণ অর্থ পাঠিয়ে থাকেন, যাতে দেশে তাদের প্রিয়জনেরা উৎসব আনন্দে অংশ নিতে পারেন। এই উৎসবকালীন প্রেরণায় প্রবাসী আয় অনেক সময় দ্বিগুণ হয়ে যায়।

মে মাসে প্রবাসী বাংলাদেশিরা পাঠিয়েছেন ২৯৭ কোটি ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩১ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি। আর মার্চ মাসে (রোজার ঈদ উপলক্ষে) পাঠানো হয় ৩৩০ কোটি ডলার, যা দেশের ইতিহাসে একক মাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আহরণের রেকর্ড। এপ্রিল মাসে রেমিট্যান্স কিছুটা কমে আসে, ২৭৫ কোটি ডলার।

শীর্ষে সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্রের উত্থানও লক্ষণীয়

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, মে মাসে প্রাপ্ত মোট ২৯৭ কোটি ডলারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৫৩ কোটি ৩৪ লাখ ডলার এসেছে সৌদি আরব থেকে,  যা প্রায় ১৮ শতাংশ। দ্বিতীয় অবস্থানে সংযুক্ত আরব আমিরাত (৩৫ কোটি ১৫ লাখ ডলার) ও তৃতীয় যুক্তরাজ্য (৩৪ কোটি ৬৮ লাখ ডলার)। এরপর রয়েছে মালয়েশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ওমান, ইতালি, কুয়েত, কাতার ও সিঙ্গাপুর।

অপরদিকে, মার্চে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে, ৫৪ কোটি ৬১ লাখ ডলার। এরপরে ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত (৫০ কোটি ৮৩ লাখ), সৌদি আরব (৪৪ কোটি ৮৪ লাখ), যুক্তরাজ্য ও মালয়েশিয়া।

রেমিট্যান্সের প্রকৃত উৎস নির্ধারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন নির্দেশনা

বিগত বছরগুলোতে রেমিট্যান্সের উৎস হিসেবে একাধিকবার যুক্তরাষ্ট্র, আমিরাত বা যুক্তরাজ্যকে শীর্ষে দেখা গেলেও বাস্তবে অনেক সময়ই এগুলো ছিল ‘ক্লিয়ারিং দেশের’ ভিত্তিতে। অর্থাৎ, প্রবাসী যদি সৌদি আরব থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোনও এক্সচেঞ্জ হাউসের মাধ্যমে অর্থ পাঠান, সেটি রেকর্ড হতো যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাঠানো হিসেবে।

এই বিভ্রান্তি নিরসনে বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি নির্দেশনা জারি করেছে—এখন থেকে সব ব্যাংককে রেমিট্যান্সের প্রকৃত উৎস দেশ অনুযায়ী তথ্য জমা দিতে হবে। এর ফলে রেমিট্যান্সের প্রকৃত উৎস দেশ চিহ্নিত করা সহজ হচ্ছে এবং নীতিনির্ধারণেও স্বচ্ছতা ফিরেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত প্রতিমাসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে গড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী ২০২৫ সালের মার্চে, রেকর্ড পরিমাণ ৩.২৯ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র এককভাবে প্রায় ৪৮০ মিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছে। এটি ওই মাসে সর্বোচ্চ উৎস দেশ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

প্রবৃদ্ধির পেছনে কী ভূমিকা রেখেছে? অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকারদের মতে, রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধির পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে:

হুন্ডির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান: অবৈধ পথে টাকা পাঠানোর বিরুদ্ধে সরকারের অভিযান জোরদার হয়েছে।

প্রণোদনা: প্রবাসীদের বৈধ পথে অর্থ পাঠাতে উৎসাহিত করতে ২.৫ শতাংশ নগদ প্রণোদনা কার্যকর রয়েছে।

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা: ২০২৪ সালের আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বাজারে আস্থা ফিরে এসেছে।

ডলার বিনিময় হার স্থিতিশীল: ব্যাংকগুলো এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত সর্বোচ্চ ১২৩ টাকার মধ্যেই ডলার কিনছে, যদিও খোলাবাজারে বিক্রি হচ্ছে ১২৫ টাকায়।

অর্থনীতিতে স্বস্তি, চাপ কিছুটা কমেছে ব্যাংক খাতে

ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, প্রবাসী আয়ের এই জোয়ারে ডলারের সরবরাহ বেড়েছে। ফলে ব্যাংকগুলো আগের মতো ডলার সংকটে নেই, আর বাজারে অস্থিরতা অনেকটাই কমেছে। আমদানি দায় পরিশোধ, এলসি খোলা কিংবা রিজার্ভ ব্যবস্থাপনাতেও এখন তুলনামূলক স্বস্তি দেখা যাচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ধারা অব্যাহত থাকলে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শুরুতেই রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারে। যা একটি ইতিবাচক মাইলফলক হবে।

সামনে চ্যালেঞ্জও আছে

তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান মনে করেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য ৫ শতাংশ রেমিট্যান্স কর বাংলাদেশসহ অনেক দেশের জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয়। এ ধরনের পদক্ষেপ কার্যকর হলে আগামী দিনে প্রবাসীরা আনুষ্ঠানিক চ্যানেল এড়িয়ে অনানুষ্ঠানিক বা হুন্ডি চ্যানেলের দিকে ঝুঁকতে পারেন। এতে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতা তৈরি হবে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ ব্যবস্থাপনায় চ্যালেঞ্জ বাড়বে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। ব্যাংকিং সেবা সহজ ও কার্যকর করা, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের ব্যবহার বাড়ানো এবং কম খরচে দ্রুত টাকা পাঠানোর সুযোগ তৈরি করতে হবে। একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি-নির্ধারকদের সঙ্গে কূটনৈতিক পর্যায়ে সক্রিয় যোগাযোগ জরুরি, যাতে তারা এই সিদ্ধান্তের সম্ভাব্য নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে অবহিত থাকেন।’

প্রসঙ্গত, কোরবানির ঈদের প্রাক্কালে প্রবাসী আয়ের প্রবাহ অর্থনীতিতে আস্থার সঞ্চার করেছে। রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধির এই ধারা ফতানি ও বৈদেশিক বিনিয়োগ স্থবিরতার সময় ডলার সংকট সামাল দিতে যেমন ভূমিকা রাখছে, তেমনই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ শক্তিশালী করার পথও প্রশস্ত করছে।



[ad_2]

Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত