আজকের পত্রিকা: দেশে নতুন উদ্যোক্তা বেড়ে ওঠার পরিবেশ কেমন? সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এই পরিবেশে কোনো প্রভাব ফেলছে কি?
সবুর খান: দেশের তরুণ সমাজের মধ্যে উদ্যোক্তা হওয়ার আগ্রহ দৃশ্যমানভাবে বেড়েছে। উদ্ভাবনী চিন্তা, প্রযুক্তি ব্যবহারে আগ্রহ এবং ঝুঁকি নেওয়ার মানসিকতা বেড়েছে। সরকারের পক্ষ থেকেও নানা উদ্যোগ, প্রণোদনা ও নীতিগত সহায়তা এ প্রবণতাকে উৎসাহিত করছে। তবে বাস্তবতা হলো, উদ্যোক্তাদের পথচলায় এখনো অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। যেমন পুঁজির সংকট, অবকাঠামোগত দুর্বলতা ও প্রশাসনিক জটিলতা।
রাজনৈতিক পরিস্থিতি ব্যবসায়িক পরিবেশকে প্রভাবিত করতে পারে। স্থিতিশীলতা থাকলে বিনিয়োগকারীর আস্থা বাড়ে, নতুন ব্যবসা শুরু করাও সহজ হয়। তবে আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, নিজেদের উদ্ভাবনী পথচলা অব্যাহত রাখবে।
আজকের পত্রিকা: ‘এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ওয়ার্ল্ড কাপ’-এর মূল ধারণা কী? বাংলাদেশ এতে কীভাবে যুক্ত?
সবুর খান: এটি একটি আন্তর্জাতিক উদ্যোগ, যা ২০১৯ সালে শুরু হয় গ্লোবাল এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ নেটওয়ার্ক (জেন)-এর মাধ্যমে। উদ্যোক্তাদের একটি সম্মিলিত প্ল্যাটফর্ম দেওয়ার পাশাপাশি তাঁদের ব্যবসায়িক ধারণা ও প্রচেষ্টা বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরাই এর মূল লক্ষ্য। বাংলাদেশ শুরু থেকেই এতে যুক্ত আছে এবং এবারও আমরা জাতীয় পর্ব আয়োজন করছি, যাতে উদীয়মান উদ্যোক্তারা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিযোগিতা করতে পারেন।
আজকের পত্রিকা: প্রতিযোগিতার মূল উদ্দেশ্য কী?
সবুর খান: মূলত উদ্যোক্তাদের আইডিয়া ও উদ্যোগকে সহায়তা, স্বীকৃতি এবং সংযোগ দেওয়া—এই তিন স্তম্ভেই দাঁড়িয়ে আছে এই উদ্যোগ। তাঁদের ব্যবসায়িক ধারণাগুলোকে নিখুঁতভাবে তুলে ধরার সুযোগ, প্রয়োজনীয় মেন্টরশিপ এবং বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের সামনে নিজেকে উপস্থাপন করার মঞ্চ এটি। আমরা চাই উদ্যোক্তারা শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে সক্ষম হোন।
আজকের পত্রিকা: কোন ধরনের উদ্যোক্তারা এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারবেন?
সবুর খান: তিন ধরনের উদ্যোক্তা এতে অংশ নিতে পারেন। প্রথমত, আইডিয়া স্টেজ; যাঁদের ভালো একটি নতুন ধারণা রয়েছে, কিন্তু ব্যবসা শুরু করেননি। দ্বিতীয়ত, আর্লি স্টেজ; যাঁরা ব্যবসা শুরু করেছেন, কিন্তু এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছেন। তৃতীয়ত, গ্রোথ স্টেজ; যাঁদের ব্যবসা ইতিমধ্যেই কিছুটা প্রতিষ্ঠিত এবং এখন বড় পরিসরে যেতে প্রস্তুত। এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে হলে আগ্রহীদের ইডব্লিউসির অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে নিবন্ধন করতে হবে, যেখানে ব্যবসার কাঠামো, সমস্যার সমাধান, রাজস্ব মডেল ইত্যাদি তথ্য জমা দিতে হয়।
আজকের পত্রিকা: নির্বাচনের প্রক্রিয়াটি কেমন?
সবুর খান: প্রাথমিকভাবে জমাকৃত আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই করা হয়। যাঁরা নির্বাচিত হন, তাঁরা জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় অংশ নেন, যেখানে ৩-৫ মিনিটের মধ্যে বিচারকদের সামনে তাঁদের উদ্যোগ বা আইডিয়াটি তুলে ধরতে হয়; যাকে আমরা বলি ‘পিচ’। বিচারকেরা ধারণার মৌলিকত্ব, বাজারে সম্ভাবনা, দলের দক্ষতা এবং স্কেল করার সম্ভাবনা বিবেচনায় বিজয়ী নির্ধারণ করেন। এরপর বিজয়ীরা ২-৩ মাসের একটি অনলাইন মেনটরিং প্রোগ্রাম পান। সেখান থেকে যাঁরা চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হন, তাঁরা বিশ্ব মঞ্চে প্রতিযোগিতা করেন।
আজকের পত্রিকা: অংশগ্রহণকারীরা কী কী সুবিধা পেতে পারেন?
সবুর খান: এটি শুধু একটি প্রতিযোগিতা নয়, বরং এটি উদ্যোক্তাদের একটি নতুন জগতে প্রবেশের দরজা। বিজয়ীরা পাবেন নগদ অর্থ পুরস্কার এবং প্রায় ৭৫ মিলিয়ন ডলার সমমূল্যের ইন-কাইন্ড সাপোর্ট; যার মধ্যে আইনি সহায়তা, প্রযুক্তিগত পরামর্শ, বিশ্বমানের প্রশিক্ষণ এবং বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে সংযোগের সুযোগ রয়েছে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো, এতে আত্মবিশ্বাস তৈরি হয় এবং উদ্যোক্তারা নিজেদের সীমাবদ্ধতা বুঝে তা কাটিয়ে উঠতে শেখেন।
আজকের পত্রিকা: বাংলাদেশে ব্যবসা শুরু করতে তুলনামূলক কষ্ট বেশি হয়, এই বাস্তবতা নতুন উদ্যোক্তাদের কীভাবে প্রভাবিত করে?
সবুর খান: আপনি ঠিক বলেছেন। ‘ডুয়িং বিজনেস কস্ট’ এখনো নতুন উদ্যোক্তাদের বড় প্রতিবন্ধক। লাইসেন্সিং, নীতিগত জটিলতা, লজিস্টিক দুর্বলতা—সবকিছু মিলিয়ে শুরুতেই হোঁচট খাওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। এর সমাধানে প্রয়োজন সরকারি প্রক্রিয়াকে আরও ডিজিটাল ও সহজ করা, সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা, অবকাঠামো উন্নয়ন, বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সংযোগ সহজ করা। নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও সচেতনতামূলক কর্মশালার মাধ্যমেও উদ্যোক্তাদের প্রস্তুত করতে হবে।
আজকের পত্রিকা: উদ্যোক্তা তৈরির এই উদ্যোগে সরকার কী ধরনের ভূমিকা রাখতে পারে?
সবুর খান: সরকার যদি আন্তরিকভাবে উদ্যোক্তা উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দেয়, তবে এই উদ্যোগগুলো বহুগুণে সফল হবে। সরকার চাইলে নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ তহবিল তৈরি করতে পারে, সহজ শর্তে ঋণ দিতে পারে, উদ্যোক্তাবান্ধব নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে পারে। আন্তর্জাতিক উদ্যোগগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে দেশীয় তরুণদের জন্য আরও সুযোগ উন্মুক্ত করতে পারে সরকার।