Homeঅর্থনীতিএমা সিনটেক্সের এলসি বিল আটকে ১২ বছর

এমা সিনটেক্সের এলসি বিল আটকে ১২ বছর

[ad_1]

২০১৩ সালে ব্যাক টু ব্যাক এলসি খুলেছিল মার্কেন্টাইল ব্যাংক। গ্রাহক এমা সিনটেক্স লিমিটেড ফ্যাব্রিকস পাঠায়, আমদানিকারক মিমময় ফ্যাশন বুঝে নেয়। এরপর ব্যাংকে বিল দাখিল হয়, সুইফট বার্তাও যায়। তারপর হঠাৎ সব থেমে যায়—বিল বাতিল। এরই মধ্যে কেটে গেছে ১২ বছর, কিন্তু গ্রাহক এমা সিনটেক্সের ১ লাখ ৩২ হাজার ডলার এখনো বকেয়া।

এত দীর্ঘ সময়েও বিল পরিশোধ না হওয়ায় গ্রাহকের প্রশ্ন—সব নিয়ম মেনে পণ্য পৌঁছেছে, কোনো আপত্তিও আসেনি, তাহলে টাকা আটকে কেন? এটা কি শুধু আর্থিক জটিলতা, নাকি প্রভাব খাটিয়ে ইচ্ছাকৃত অর্থ আটকে রাখার ঘটনা?

সংশ্লিষ্টদের মতে, এই বিল আটকে রাখার কেন্দ্রে আছেন মিমময় ফ্যাশনের কর্ণধার ও মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান মো. আবদুল হান্নান। আমদানিকারক ও অর্থ প্রদানকারী—দুই পক্ষেই তাঁর প্রভাব থাকায় সুইফট বাতিল থেকে বিল আটকে রাখা পর্যন্ত সবকিছুতে তিনি ভূমিকা রাখেন। গ্রাহকের মামলায় ব্যাংক পাল্টা মামলা করে সময়ক্ষেপণ করে, যা শেষ পর্যন্ত ২০২৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর খারিজ হয়ে যায়। তবু ব্যাংক নীরব।

এই বিল আটকে রাখার ব্যাখ্যা হিসেবে ব্যাংকের পক্ষ থেকে একাধিকবার ‘পণ্যের মানগত ত্রুটি’র অভিযোগ তোলা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ডেলিভারির সময় কিউসি রিপোর্টের মাধ্যমে মান যাচাই করা হয়েছিল, যেটা মিমময় ফ্যাশন নিজেই গ্রহণ করেছে। এলসি আইনের আন্তর্জাতিক ফ্রেমওয়ার্ক ইউসিপি ৬০০-এর ৭ নম্বর ধারা অনুযায়ী, যখন ডকুমেন্টস ঠিকঠাক থাকে এবং পণ্য বুঝে নেওয়া হয়, তখন ব্যাংকের বিল পরিশোধ বাধ্যতামূলক। এখানে কোনো বিচ্যুতি নেই, তবু অর্থ আটকে রাখা হয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে রাজধানীর গুলশানে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের করপোরেট অফিস এবং মতিঝিলের দিলকুশায় অবস্থিত প্রধান কার্যালয়ে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে ব্যাংকের বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান ও মিমময় ফ্যাশনের কর্ণধার মো. আবদুল হান্নানের সঙ্গে কোনোভাবেই সরাসরি সাক্ষাৎ সম্ভব হয়নি। এরপর তাঁকে মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি সাড়া দেননি, এমনকি খুদে বার্তার (এসএমএস) জবাবও মেলেনি।

তবে ‘ব্যাংক এখনো এমা সিনটেক্সের পাওনা পরিশোধ করেনি’—আজকের পত্রিকার এই প্রতিবেদকের কাছে বিষয়টি স্বীকার করেছেন মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মতিউল হাসান। কেন বিল পরিশোধ করা হয়নি, জানতে চাইলে তিনি অপারগতা প্রকাশ করে বলেন, বিষয়টির পূর্ণাঙ্গ তথ্য তাঁর কাছে নেই।

একই প্রশ্ন নিয়ে ব্যাংকের মুখপাত্র ও উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) অসীম কুমার সাহার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, পণ্যের মান ভালো ছিল না। তার জন্য বিলও পরিশোধ করা হয়নি।

অপর উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) শামীম আহমেদ জানান, ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান মো. আবদুল হান্নান এই ঘটনায় কোনো ধরনের প্রভাব খাটাননি। তাঁর ভাষায়, ‘আমরা আইনি পথে বিষয়টি নিষ্পত্তির প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

গ্রাহক প্রতিষ্ঠান এমা সিনটেক্সের পরিচালক খালিদ মামুনুর রহিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এই টাকা আমাদের শুধু একটা বাণিজ্যিক লেনদেন নয়, এটা আমাদের বিশ্বাস, শ্রম ও আইনের প্রতি আস্থার পরীক্ষা। ব্যাংক প্রভাব খাটিয়ে আমাদের পাওনা আটকে রেখেছে। আমরা রপ্তানি করেছিলাম, মান ঠিক ছিল, অথচ এখন আমাদেরকে ভুল প্রমাণ করার চেষ্টা চলছে।’

000

এমা সিনটেক্সের পরিচালক মনে করেন, এখানে শুধু একটি প্রতিষ্ঠানের পাওনা আটকে রাখার কথা নয়, বড় প্রশ্ন উঠছে দেশের ব্যাংকিং নৈতিকতা, নিয়ন্ত্রণ কাঠামো এবং বিচারপ্রাপ্তির নিশ্চয়তা নিয়ে।

করপোরেট আইন বিষয়ে অভিজ্ঞ আইনজীবী অ্যাডভোকেট মুজাহিদুল ইসলাম শাহিন মনে করেন, আইনকে তার নিজস্ব গতিতে চলতে দিতে হবে—এটাই ন্যায়ের মূল ভিত্তি। যদি কোনো ব্যাংক ইচ্ছাকৃতভাবে গ্রাহকের বৈধ পাওনা আটকে রাখে, তবে তা স্পষ্টতই বেআইনি। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্ব নিয়ম অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনায় তদন্ত হবে, প্রয়োজন হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, এই তদন্ত ১২ বছর পর কতটা কার্যকর হবে?



[ad_2]

Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত