ফ্রিজ, রেফ্রিজারেটর ও এয়ারকন্ডিশনারের (এসি) ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট দ্বিগুণ হচ্ছে। বর্তমানে এ খাতে ভ্যাটের হার সাড়ে ৭ শতাংশ, যা ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে বলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে।
ভ্যাট বাড়ানোয় ফ্রিজ ও এসির ভোক্তাদের ওপর চাপ বাড়বে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদেরা। অন্যদিকে উদ্যোক্তারা শিল্পের বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার শঙ্কা করছেন। তবে ভ্যাটের হার বাড়ানোর কারণে কর রেয়াত বা ছাড় পাওয়ার সুযোগ মিলবে এবং ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন বলে জানান এনবিআরের কর্মকর্তারা।
এনবিআরের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আসছে বাজেটে অনেক ক্ষেত্রে ভ্যাটের ছাড় তুলে দেওয়া হচ্ছে এবং কিছু ক্ষেত্রে বাড়ানো হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি ভ্যাট বাড়ছে ফ্রিজ, রেফ্রিজারেটর ও এসির ওপর। এ ক্ষেত্রে ভ্যাটের হার সরাসরি সাড়ে ৭ থেকে ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে। সরকারও এতে সমর্থন দিয়েছে।
ভ্যাটের হার দ্বিগুণ করায় ব্যবসায় প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা। দেশে গ্রি এসি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ইলেকট্রো মার্ট লিমিটেডের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) নুরুল আফসার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ভ্যাটের কারণে খরচ বাড়ে। যদি একটা মিডিয়াম ফ্রিজের কথা বলি, তাহলে ভ্যাটের কারণে এর দাম বাড়বে আড়াই থেকে ৩ হাজার টাকা। একইভাবে এসির কথা চিন্তা করলে মিডিয়াম রেঞ্জের এসির দাম ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা বেড়ে যাবে। এতে ভোক্তার ওপর চাপ তৈরি করবে। ফলে বিক্রি কমার আশঙ্কা রয়েছে।’
নুরুল আফসার বলেন, ‘আমরা যাঁরা বিনিয়োগ করেছি, তাঁদের এখান থেকে রিটার্ন পেতে ৮-১০ বছর লাগে। এভাবে বিভিন্ন রকম করহার বাড়তে থাকলে আমরা তখন চিন্তা করব যে আমাদের বিনিয়োগ বাড়াব কি না? বিনিয়োগ ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। বিনিয়োগ থেকে রিটার্ন পেতে লম্বা সময় নেবে। এতে ক্ষতির মুখে পড়ব।’
এনবিআর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সরকারের ওপর রাজস্ব বাড়ানোর চাপ রয়েছে। ফলে বিভিন্ন খাতে করছাড় প্রত্যাহার করা হচ্ছে। তবে ফ্রিজ ও এসির ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ ভ্যাট হলে রেয়াত নিতে পারবেন ব্যবসায়ীরা।
এ বিষয়ে এনবিআরের ভ্যাট বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘১৫ শতাংশের নিচে ভ্যাট হারে ব্যবসায়ীদের রেয়াত নেওয়ার সুযোগ থাকে না। ১৫ শতাংশ হলে পণ্য প্রস্তুতে যতটুকু ভ্যালু অ্যাড হবে, ততখানির ওপর ভ্যাট চার্জ করা হবে।’
ফ্রিজ ও এসির ওপর ভ্যাট দ্বিগুণ করার সিদ্ধান্তকে দুভাবে বিশ্লেষণ করেছেন অর্থনীতিবিদেরা। জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘ফ্রিজ-এসি আর বিলাসী পণ্য নয়। এগুলো এখন সাধারণ মানুষের নৈমিত্তিক উপকরণ হয়ে গেছে। বিশেষ করে ফ্রিজ এখন নিম্নবিত্তের প্রয়োজনীয় পণ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ক্ষেত্রে ভ্যাট বাড়ানোয় এগুলোর দাম বাড়বে, যা মানুষের ওপর চাপ বাড়াবে।’
অন্যদিকে রাজস্ব আয় বাড়াতে ভ্যাট বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে জানান ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেন, ‘ভ্যাট বাড়ানোয় স্বাভাবিকভাবে পণ্যের দাম বাড়বে। কিন্তু সরকারের আয় বাড়ানোর চাপ রয়েছে। ফলে এসব পণ্যের ক্ষেত্রে ছাড় তুলে নেওয়া হলে ভ্যাট বাড়বে, সেটা কিছুটা অনুমিত ছিল।’