উচ্চমূল্যের পাশাপাশি পুষ্টিগুণে ভরপুর চিয়া সিড চাষে এবার প্রথমবারের মতো সফলতা দেখিয়েছে শেরপুরের এক তরুণ কৃষক। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগিতায় শিমুল মিয়া নামের এই তরুণ কৃষক মাত্র ৫০ শতক জমিতে চিয়া সিড চাষ করে লক্ষাধিক টাকা আয়ের আশায় রয়েছেন। তাঁর সাফল্য দেখে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন আশপাশের অনেক কৃষকও।
চিয়া সিড মূলত মধ্য ও উত্তর আমেরিকার শুষ্ক অঞ্চলের একটি ফসল। দেখতে অনেকটা তিল বা তিসির মতো হলেও এর পুষ্টিগুণ এবং বাজারমূল্য অনেক বেশি। এবার শেরপুরে প্রথমবারের মতো এই বিদেশি ফসলের বাণিজ্যিক চাষ হয়েছে বারি চিয়া-১ জাত দিয়ে।
শিমুল মিয়া বলেন, ‘কৃষিতে ব্যতিক্রম কিছু করতে চেয়েছিলাম। ইন্টারনেট ঘেঁটে চিয়া সিড সম্পর্কে জানতে পারি। পরে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে যাই, সেখান থেকে বীজ নিই এবং চাষের পরামর্শ পাই।’ তিনি জানান, ৬-৭ হাজার টাকা খরচ করে বর্তমানে যে ফলন হয়েছে, তাতে লক্ষাধিক টাকার বীজ বিক্রির আশা করছেন।
শিমুল মিয়া আরও বলেন, ‘এই ফসল শরীরের জন্য খুব উপকারী। দামও অনেক বেশি। আগামীতে আরও বেশি জমিতে চাষের পরিকল্পনা আছে।’
স্থানীয় কৃষকদের মধ্যেও আগ্রহ বাড়ছে। তেঁতুলতলা গ্রামের কৃষক ইব্রাহিম খলিল বলেন, ‘এই ফসল আমি আগে কখনো দেখিনি। এবার দেখলাম আমাদের এলাকায়। দামও ভালো পাওয়া যায়। আমিও আগ্রহী হয়ে উঠেছি।’ একই আগ্রহ প্রকাশ করেছেন রবিউল ইসলাম, বেলায়েত হোসেন, মকবুল হোসেনসহ অনেকে।
চিয়া সিড চাষে রাসায়নিক সারের ব্যবহার খুবই কম, মূলত জৈব সারেই ভালো ফলন হয়। প্রতি বিঘায় উৎপাদন হয় ৮০-১০০ কেজি, যা বাজারে ৭০০-৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের শেরপুর শাখার প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ কে এম জোনায়েদ উল-নূর বলেন, ‘চিয়া সিড হলো একটি উচ্চ পুষ্টিমানসম্পন্ন সুপার ফুড। দুধের চেয়ে পাঁচ গুণ ক্যালসিয়াম, ডিমের চেয়ে তিন গুণ প্রোটিন আর সামুদ্রিক মাছের চেয়ে বেশি ওমেগা থ্রি রয়েছে এতে। এই অঞ্চল চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় আমরা কৃষকদের পাশে আছি।’
এই সাফল্যের পর শেরপুরে চিয়া সিড চাষ নিয়ে নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। তরুণ উদ্যোক্তাদের হাত ধরে পুষ্টিকেন্দ্রিক ফসল উৎপাদনে বাংলাদেশের কৃষি খাতে নতুন উদ্যম তৈরি হচ্ছে; যা ভবিষ্যতের খাদ্যনিরাপত্তা ও কৃষক আয়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।