বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর সম্প্রতি এক বিতর্কের কেন্দ্রে উঠে এসেছেন। প্রবাসী কন্যার নামে দুবাইতে ৪৫ কোটি টাকার ফ্ল্যাট কেনা নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ এনেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র ও উপদেষ্টা সাজীব ওয়াজেদ জয়। তবে এই অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন ও দুঃখজনক’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন গভর্নর মনসুর।
গত ১০ জুন (মঙ্গলবার) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট শেয়ার করেন জয়, যেখানে উল্লেখ করা হয়, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪-এ গভর্নর মনসুর দুবাইতে ১৩.৫ মিলিয়ন দিরহাম (প্রায় ৪৫ কোটি টাকা) মূল্যের একটি ফ্ল্যাট মেয়ের নামে কিনেছেন। পোস্টে আরও দাবি করা হয়, ফ্ল্যাটের দলিলে মালিক হিসেবে মেহরিন সারাহ মনসুর এবং তাঁর বাবা আহসান হাবিব মনসুরের নাম রয়েছে।
অভিযোগটি প্রথমে করেন ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেন, যিনি বর্তমানে নিষিদ্ধ ঘোষিত ওই সংগঠনের প্রাক্তন নেতা। জাকির তাঁর পোস্টে কোনো ধরনের প্রত্যক্ষ প্রমাণ না দেখিয়ে দাবি করেন, মনসুর মেয়ের জন্য এই সম্পত্তি ক্রয় করেছেন গভর্নর হওয়ার পরে এবং অর্থ পাচারের মাধ্যমেই তা সম্ভব হয়েছে।
তবে গভর্নর আহসান এইচ মনসুর ‘দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড’ ও ‘বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘এই ফ্ল্যাট আমার কন্যার, যেটি ২০২৩ সালে কেনা হয়েছে। আমি তখন গভর্নর ছিলাম না। আমার মেয়ে বিবাহিত, তাঁর স্বামী ও সন্তানদের সঙ্গে দুবাইতে থাকেন। তাঁদের নিজস্ব ব্যবসা রয়েছে। প্রায় ৪০ বছর বয়সী একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারী নিজের নামে সম্পত্তি কিনলে সেটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই ফ্ল্যাটের ৮০% অর্থ মর্টগেজ থেকে এসেছে। আমার কোনো ব্যক্তিগত অর্থ এতে ব্যবহৃত হয়নি। আমার নাম কেবল তাঁর পিতার পরিচয়ে দলিলে উল্লেখ রয়েছে, মালিক হিসেবে নয়। এই বিষয় নিয়ে জয় সাহেব যা বলেছেন, তা অত্যন্ত দুঃখজনক।’
তিনি এক পর্যায়ে আরও বলেন, ‘গত তিন বছরে আমি আমার মেয়েকে শুধু একটি জামা কিনে দিয়েছি। এর বাইরে আমার আর কোনো অবদান নেই তার আর্থিক জীবনে।’
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার গণ-আন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর, একটি অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। ব্যাংকিং খাতে সংস্কার আনতে আগের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার পদত্যাগ করেন এবং ওই মাসেই আহসান এইচ মনসুরকে বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি এর আগে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) একজন অর্থনীতিবিদ হিসেবে কাজ করেছেন।
গভর্নর মনসুর দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই দেশের ব্যাংকিং খাতে বেশ কিছু জোরালো সংস্কার কার্যক্রম শুরু করেন। তিনি শারিয়াহভিত্তিক কিছু ব্যাংকে বাংলাদেশ ব্যাংকের তরফ থেকে দেওয়া বিতর্কিত তারল্য সহায়তা বন্ধ করেন এবং কয়েকটি সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বিলুপ্ত করে নতুন নেতৃত্ব আনেন। এ পদক্ষেপে সাবেক ক্ষমতাসীন দলের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী গ্রুপ এস আলমের প্রভাব খর্ব হয়।
এছাড়া, কিছু ব্যাংকের ফরেনসিক অডিটে দীর্ঘদিনের অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে, যা আওয়ামী লীগের আমলে ব্যাংক খাতের অব্যবস্থাপনার চিত্র তুলে ধরে।