দেশের অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে স্পর্শকাতর সময়ে এক বিরল ও ইতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে দেশের মুদ্রাবাজার। আন্তর্জাতিক আর্থিক সংকট ও অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক চাপের সময় ডলারের বিনিময় হার বাজারভিত্তিক হওয়া সত্ত্বেও বিস্ময়কর স্থিতিশীলতা ধরে রেখেছে। তিন বছর পর মার্কিন ডলারের বাজারভিত্তিক দাম নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এ পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের কিস্তি ছাড়ের অন্যতম শর্ত হিসেবে নেওয়া হলেও তার ফলাফল এখন পর্যন্ত যথেষ্ট ইতিবাচক বলে প্রমাণিত হচ্ছে। গত এক সপ্তাহের বাজার পরিস্থিতি বলছে, বাজারে ডলারের দামে কোনো কম্পন বা অস্বাভাবিকতা নেই।
১৪ মে বাংলাদেশ ব্যাংক আনুষ্ঠানিকভাবে বাজারভিত্তিক বিনিময় হার চালুর ঘোষণা দেওয়ার পর বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো এখন বাড়তি দাম ‘অফার’ করছে না। দেশের প্রধান বাণিজ্যিক ও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো দরের ব্যাপারে যথাযথ সমন্বয় ও স্থিতিশীলতার লক্ষণ প্রদর্শন করছে। এতে বাজারভিত্তিক ঘোষণার পর থেকে ব্যাংকগুলোর মধ্যে ডলারের লেনদেন ছিল প্রতি ডলার ১২১ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১২২ টাকা ৫০ পয়সার মধ্যে, যা গত কয়েক মাসে খুব বেশি ওঠানামা করেনি। একই সঙ্গে খোলাবাজারেও ডলারের ক্রয়-বিক্রয় ১২৩ টাকার কাছাকাছি রয়েছে। রাজধানীর মতিঝিল, দিলকুশা, ফকিরাপুল, পল্টন ও শান্তিনগর এলাকার একাধিক এক্সচেঞ্জ হাউস ও ব্যাংক শাখায় এ স্থিতিশীলতার প্রতিফলন দেখা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা ও ব্যাংক শাখার কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ব্যাংকগুলো এখন বাড়তি দরের প্রবণতা দেখাচ্ছে না; বরং প্রায় সব ব্যাংক ১২১.৫০ থেকে ১২২.৫০ টাকার মধ্যে ডলার লেনদেন করছে। এমনকি দুটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকও ১২২.৫০ টাকায় রেমিট্যান্স গ্রহণ করেছে, যা মূলত বাজারে ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণের স্বার্থে করা হয়েছে।
বিষয়টি সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘ডলারের বাজারে বড় কোনো অস্থিরতা বা অভিযোগ আমরা পাইনি। দাম মূলত বাজারের চাহিদা ও সরবরাহের ভিত্তিতে নির্ধারিত হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সরাসরি বাজারে হস্তক্ষেপ না করলেও দাম যেন কোনোভাবে অস্বাভাবিক ওঠানামা না করে, তার পর্যবেক্ষণ রাখা হয়।’
এ ছাড়া ব্যাংকগুলোতে বর্তমানে প্রায় ৫ কোটি ডলারের নগদ মজুত রয়েছে, যা দেশের মুদ্রাবাজারে ডলারের দাম স্থিতিশীল রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ ১২৩ টাকায় ডলার বিক্রি করলেও বাজারে অধিক দামের প্রতিযোগিতা কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে। বিশেষত খোলাবাজারে মানি চেঞ্জারগুলো মাঝেমধ্যে ১২৩ থেকে ১২৫ টাকার মধ্যে দাম ঘোষণা করেছে। তবে এসব সামগ্রিক বাজারকে বড় ধরনের অস্থিরতার দিকে ঠেলে দেয়নি।