Homeঅর্থনীতিবাজেটে বাড়ছে করের চাপ

বাজেটে বাড়ছে করের চাপ


আসছে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে সরকার। এই খবর জনসাধারণের জন্য কিছুটা স্বস্তিদায়ক হলেও দুঃসংবাদ অপেক্ষা করছে করমুক্ত আয়সীমার বাইরে থাকা করদাতাদের জন্য। নতুন বাজেটে বিভিন্ন স্তরে করহার বাড়ানোর প্রস্তাব আসছে। নতুন করদাতাদের ছাড় দিলেও পুরোনোদের ওপর বাড়ানো হচ্ছে ন্যূনতম করের পরিমাণ। নিম্ন ও মধ্যবিত্তের সঞ্চয় উপকরণ সঞ্চয়পত্র ও ট্রেজারি বিলে উৎসে কর বাড়ানো হচ্ছে। এতে সামগ্রিকভাবে বাড়বে করের চাপ।

বর্তমানে ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে ৩ লাখ টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা বাড়িয়ে ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। করমুক্ত সীমার পর বিভিন্ন করস্তরে পরিবর্তন আসছে এবং বাড়ানো হচ্ছে করহার।

করমুক্ত আয়সীমার পরবর্তী ১ লাখ টাকায় ৫ শতাংশ কর দিতে হয় এখন। আসছে বাজেটে এই স্তর ১ লাখের পরিবর্তে ৩ লাখ ১০ হাজার টাকা করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে ওই স্তরে করহার বাড়িয়ে ১০ শতাংশ হচ্ছে। একইভাবে ৩ লাখ ১০ হাজার টাকার পরের ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ের ওপর কর ১০ শতাংশ থেকে বেড়ে হচ্ছে ১৫ শতাংশ। পরবর্তী ৫ লাখ টাকায় করহার ১৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০ শতাংশ করা হচ্ছে। এর পরবর্তী ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত একটি স্তর চলতি অর্থবছরে রয়েছে, যা ভবিষ্যতে থাকছে না। এই স্তরে ২০ শতাংশ করহার নির্ধারিত ছিল। আসছে বাজেটে পরবর্তী ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের ওপর কর থাকবে ২৫ শতাংশ। এর বেশি আয় হলে তার ওপর কর দিতে হবে ৩০ শতাংশ। করস্তরে এমন পরিবর্তনের ফলে ওই স্তরে বিদ্যমান করদাতার ওপর চাপ বাড়বে।

বর্তমানে নারী এবং ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সী করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা ৪ লাখ টাকা। এটি বাড়িয়ে ৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা করা হচ্ছে। আর তৃতীয় লিঙ্গ ও প্রতিবন্ধী করদাতার ক্ষেত্রে করমুক্ত আয়সীমা ৪ লাখ ৭৫ হাজার থেকে বেড়ে হচ্ছে ৫ লাখ টাকা। গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা করদাতার ক্ষেত্রে করমুক্ত আয়সীমা ৫ লাখ থেকে বেড়ে হচ্ছে ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা।

চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ও কর বিশেষজ্ঞ স্নেহাশীষ বড়ুয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘করমুক্ত আয়ের সীমা অন্তত সাড়ে ৪ লাখ টাকা করা উচিত। এতে প্রান্তিক করদাতারা কিছুটা স্বস্তি পাবেন এবং কর প্রদানে আগ্রহী হবেন। আমরা মাত্র ২৫ হাজার টাকা বাড়িয়ে বাস্তবে স্বস্তি দিতে পারব না। বিশেষ করে যখন দীর্ঘদিন ধরে ৯ শতাংশের বেশি হারে মূল্যস্ফীতি চলছে।’

ন্যূনতম কর

আসছে বাজেটে ন্যূনতম আয়কর ৫ হাজার টাকা করা হতে পারে। এখন সেটি এলাকাভেদে ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা রয়েছে। তবে নতুন করদাতা বা টিআইএনধারীদের (ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার) ক্ষেত্রে এটা ১ হাজার টাকা করা হচ্ছে।

নতুন করদাতাদের ন্যূনতম করে ছাড় দেওয়ার বিষয়টি ব্যাখ্যা করে এনবিআরের কর্মকর্তারা বলেছেন, বর্তমানে করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে ৩ লাখ টাকা। এখন কারও আয় যদি ৩ লাখ ৫০ হাজার ১ টাকা হয়, সে ক্ষেত্রে মাত্র ১ টাকা বাড়তি আয়ের জন্য করদাতাকে ন্যূনতম কর হিসেবে এলাকাভেদে ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা দিতে হয়। এতে নতুন করদাতারা রিটার্ন দাখিল এবং তাতে প্রকৃত আয় দেখাতে নিরুৎসাহ বোধ করেন। এ কারণে তাঁদের জন্য প্রণোদনা হিসেবে ন্যূনতম কর ১ হাজার টাকা ধরা হবে।

এনবিআরের আয়কর বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘অনেক ব্যক্তি ন্যূনতম করের সুবিধা নিতে করযোগ্য আয় কম দেখান। এ জন্যই ন্যূনতম করকাঠামো সংশোধন করছি।’

বিষয়টির যৌক্তিকতা তুলে ধরে এনবিআরের চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেন, ‘দেশে বর্তমানে ই-টিআইএনধারী করদাতার সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ১৫ লাখ। এর মধ্যে রিটার্ন জমা হয় ৪৫ লাখের মতো। তার মধ্যে আবার দুই-তৃতীয়াংশ বা প্রায় ৩০ লাখ জিরো রিটার্ন। ফলে রিটার্ন ও কর বাড়ানোর জন্য এটা কার্যকর হবে।’

উৎসে কর

সরকারি ট্রেজারি বিল বা বন্ডে বিনিয়োগ করলে তার ওপর উৎসে কর বিদ্যমান ৫ থেকে বেড়ে ১০ শতাংশ হতে পারে আগামী বাজেটে। তবে নিত্যপণ্যের সরবরাহ পর্যায়ে ১ শতাংশ উৎসে কর কমিয়ে অর্ধেক; অর্থাৎ শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ করা হচ্ছে।

বেসরকারিদের করমুক্ত ভাতা

বেসরকারি চাকরিজীবীদের পারকুইজিট বা পারিতোষিক (বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা, যাতায়াত ও মহার্ঘ ভাতা, বাসস্থান সুবিধা, গাড়ি সুবিধা ইত্যাদি) ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত করমুক্ত। আসছে বাজেটে এই সীমা দ্বিগুণ; অর্থাৎ ২০ লাখ টাকা হচ্ছে। এ ছাড়া ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের করমুক্ত ভাতা সাড়ে ৪ লাখ থেকে বেড়ে হচ্ছে ৫ লাখ টাকা।

কর মামলার সুদ

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সরকারের কর-সংক্রান্ত দীর্ঘমেয়াদি মামলায় পুরো সময়ের (১০ বছরও চলতে পারে) জন্য করের ওপর সুদ আরোপের পরিবর্তে সেটি সর্বোচ্চ দুই বছরের জন্য সীমিত করা হতে পারে।

করপোরেট কর ব্যবধান ২.৫% বাড়ছে

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয়, এমন কোম্পানির মধ্যে করপোরেট কর ব্যবধান ৫ শতাংশ থেকে ২ দশমিক ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ করা হচ্ছে। হ্রাসকৃত হারে করের সুবিধা পেতে লেনদেনের শর্তও শিথিল করা হচ্ছে।

তালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট করহার ২০ শতাংশ। তবে সব ধরনের লেনদেন ব্যাংকিং চ্যানেলে করার শর্তের কারণে এই সুবিধা গ্রহণ করতে পারে না কোম্পানিগুলো। এতে কর দিতে হয় সাড়ে ২২ শতাংশ। একইভাবে অতালিকাভুক্ত কোম্পানিও ২৫ শতাংশের পরিবর্তে সাড়ে ২৭ শতাংশ দিতে বাধ্য হয়। আগামী বাজেটে শুধু কোম্পানির আয় ব্যাংকিং চ্যানেলে হতে হবে, এমন বিধান থাকবে। ব্যয় ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাংকিং চ্যানেলে লেনদেনের শর্ত বাতিল করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজের (বিএপিএলসি) সভাপতি রূপালী হক চৌধুরী বলেন, এটি ইতিবাচক উদ্যোগ। এতে অনেক কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে আগ্রহী হবে।

করকাঠামোর পরিবর্তনে বিষয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতি ও অন্যান্য চাপ রয়েছে। তবে প্রগ্রেসিভ ট্যাক্স রেট পদ্ধতিতে অনেক ক্ষেত্রে করহার নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ যার যত আয়, তার তত ট্যাক্স। এটা ঠিকই আছে, তবে সময়টা হয়তো একটু কঠিন।’ তিনি করমুক্ত আয়সীমা আরও বাড়ানোর পক্ষে।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত