জাপানের গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান নিশান চলতি অর্থবছরে প্রায় ৪.৫ বিলিয়ন ডলার (৬৭১ বিলিয়ন ইয়েন) লোকসানের সম্মুখীন হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার কোম্পানিটি জানায়, তারা তাদের বৈশ্বিক জনশক্তির প্রায় ১৫ শতাংশ অর্থাৎ ২০ হাজার কর্মী ছাঁটাই করবে।
একই সঙ্গে নিশান যুক্তরাষ্ট্রে সম্ভাব্য উচ্চ শুল্ক আরোপের আশঙ্কায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, যা ভবিষ্যতের ব্যবসায়িক পরিকল্পনায় বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
নিশানের সিইও ইভান এসপিনোসা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের দ্রুত ও জরুরি ভিত্তিতে আত্মসংস্কার করা দরকার। আমাদের ব্যয়কাঠামো অত্যন্ত ভারী। উপরন্তু, বৈশ্বিক বাজার বর্তমানে অত্যন্ত অস্থির, যা আমাদের জন্য বিনিয়োগ ও পরিকল্পনা করা আরও কঠিন করে তুলছে।’
নিশান জানিয়েছে, ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত অর্থবছরে তাদের নেট লোকসান হয়েছে ৬৭১ বিলিয়ন ইয়েন, যা ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ১৯৯৯-২০০০ সালে তারা ৬৮৪ বিলিয়ন ইয়েন লোকসানের সম্মুখীন হয়েছিল, যা ছিল তাদের সবচেয়ে খারাপ সময়, তখনই রেনল্টের সঙ্গে তাদের অংশীদারত্বের সূচনা হয়।
বর্তমানে নিশানে প্রায় ৩৬ শতাংশ মালিকানা রয়েছে রেনল্টের। রেনল্ট জানিয়েছে, নিশানের এই পুনর্গঠন পরিকল্পনার ফলে তারা প্রথম প্রান্তিকে প্রায় ২.২ বিলিয়ন ইউরো (প্রায় ২.৪ বিলিয়ন ডলার) ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
নিশান পরবর্তী অর্থবছরের (২০২৫-২৬) জন্য কোনো নিট মুনাফার পূর্বাভাস দেয়নি। তারা শুধু বলেছে, ১২.৫ ট্রিলিয়ন ইয়েন বিক্রির আশা করছে। তবে এসপিনোসা বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতির অনিশ্চয়তার কারণে আমরা এখনই কোনো নিট বা পরিচালন মুনাফার নির্ভরযোগ্য পূর্বাভাস দিতে পারছি না।’
গতকাল নিশানের শেয়ারমূল্য ৩ শতাংশ বেড়ে যায়, যখন প্রতিবেদন প্রকাশ পায়। পরে কোম্পানিটি নিশ্চিত হয়, তারা বৈশ্বিকভাবে ২০ হাজার কর্মী ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা করছে। এসপিনোসা বলেন, ‘আমরা এটি করতাম না, যদি এটি আমাদের টিকে থাকার জন্য জরুরি না হতো।’
গতকাল কোম্পানিটি নিশ্চিত করে, বিশ্বব্যাপী ২০ হাজার কর্মী ছাঁটাই করা হবে। এই ঘোষণার পর নিশানের শেয়ারমূল্য ৩ শতাংশ বেড়ে যায়। এসপিনোসা বলেন, ‘আমরা বেঁচে থাকার জন্য এই কঠিন সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। এটি একান্তই প্রয়োজনীয়।’
এ ছাড়া কোম্পানিটি জানিয়েছে, ২০২৭ অর্থবছরের মধ্যে তারা ১৭টি কারখানা কমিয়ে ১০টিতে নামিয়ে আনবে।
নিশান জানায়, তারা চীনে বৈদ্যুতিক ও নতুন শক্তিচালিত গাড়ি দিয়ে বাজারে শক্ত অবস্থান নিতে চায়।
তবে চীনের উদীয়মান ইভি নির্মাতাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করা তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে।
হোন্ডার সঙ্গে একটি সম্ভাব্য মার্জার (মিশে যাওয়ার) আলোচনা ছিল নিশানের জন্য একটি সম্ভাব্য উদ্ধারের পথ। কিন্তু হোন্ডা যখন নিসানকে একটি সহায়ক প্রতিষ্ঠান বানানোর প্রস্তাব দেয়, তখন সেই আলোচনা ফেব্রুয়ারিতে ভেস্তে যায়। এসপিনোসা বলেন, ‘আমরা এখনো হোন্ডাসহ বিভিন্ন অংশীদারের সঙ্গে সহযোগিতার জন্য উন্মুক্ত আছি।’
২০১৮ সালে সাবেক চেয়ারম্যান কার্লোস ঘোশনকে গ্রেপ্তারের পর কোম্পানিটি বহু সংকটে পড়ে, যিনি পরে সংগীত যন্ত্রের বাক্সে লুকিয়ে দেশ ছেড়ে পালান। গত বছরের তুলনায় নিশানের শেয়ার প্রায় ৪০ শতাংশ পড়ে গেছে। এ বছর মার্চে এসপিনোসা সিইও পদে আসেন।
মুডিসসহ আন্তর্জাতিক রেটিং সংস্থাগুলো নিশানের রেটিং ‘জাঙ্ক’ পর্যায়ে নামিয়ে এনেছে। তাদের মতে, নিশানের গাড়ির মডেল লাইনআপ অনেকটাই পুরোনো। এ ছাড়া কঠিন ব্যবসায়িক পরিবেশের কারণে নিশান সম্প্রতি ১ বিলিয়ন ডলারের একটি ব্যাটারি কারখানা নির্মাণের পরিকল্পনা স্থগিত করেছে।
ব্লুমবার্গ ইন্টেলিজেন্সের বিশ্লেষক তাতসুও ইয়োশিদা মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের ২৫ শতাংশ শুল্কে নিশান সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ, নিশানের ক্রেতারা তুলনামূলকভাবে দাম সংবেদনশীল। টয়োটা বা হোন্ডার মতো অতিরিক্ত খরচ গ্রাহকের ওপর চাপিয়ে দেওয়া সহজ নয়।