Homeঅর্থনীতিবিশ্বজুড়ে বিস্ফোরিত হলো ট্রাম্পের ‘শুল্ক বোমা’

বিশ্বজুড়ে বিস্ফোরিত হলো ট্রাম্পের ‘শুল্ক বোমা’


মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চোখে ‘অপরাধী’ হিসেবে চিহ্নিত হওয়া দেশগুলোর মধ্যে ৬০টি দেশে আজ বুধবার ‘শুল্ক বোমা’র বিস্ফোরণ হয়েছে। যার মধ্যে চীনের ওপর শুল্ক আরোপের হার সবচেয়ে বেশি—১০৪ শতাংশ। প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় দফায় মার্কিন মসনদে বসার লড়াইয়ে নামার আগেই চীনের ওপর শুল্ক খড়্গ নামানোর হুমকি দিয়েছিলেন ট্রাম্প। ২০ জানুয়ারি শপথ নিয়েই এর বাস্তবায়ন শুরু করেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য যুদ্ধ আর প্রকট হয়ে উঠেছে জানুয়ারি থেকে এই কয় মাসে।

চীনের ওপর অতিরিক্ত এই শুল্ক ঘোষণার পর বেইজিংও ট্রাম্পের নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে পাল্টা শুল্ক প্রত্যাহার করতে অস্বীকৃতি জানায়। পাশাপাশি পাল্টা শুল্ক আরোপের হুমকি দেয়। এই শুল্ক আরোপকে মার্কিন ‘বর্বরতা’ আখ্যা দিয়ে বেইজিংয়ে পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘যুক্তরাষ্ট্রে চীনের রপ্তানি তাদের সামগ্রিক অর্থনৈতিক কার্যকলাপের মাত্র ২ শতাংশ। তারা এই চাপ সামলাতে পারবে।’

তবে গতকাল মঙ্গলবার রিপাবলিকান পার্টির এক নৈশভোজে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের পর এখন বিভিন্ন দেশ ‘চুক্তি করতে মুখিয়ে আছে।’

চীনের প্রসঙ্গে ট্রাম্প দাবি করেন, ‘তারা চুক্তি করতে চায়… কিন্তু কীভাবে শুরু করবে, তা বুঝতে পারছে না।’

ট্রাম্পের এই দাবির প্রতিক্রিয়ায় চীনও যোগ্য জবাব দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে।

চীন এখন নিজেকে ‘মুক্ত বাণিজ্যের পক্ষের নেতা’ হিসেবে দাবি করে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘বুলি’ শাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। তারা সরকারনিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো ব্যবহার করে ট্রাম্পের শাসনের বিরুদ্ধে বার্তা ছড়াচ্ছে।

নতুন ১০৪ শতাংশ মার্কিন শুল্ক কার্যকর হলে চীন সেন্ট্রাল টেলিভিশনের (সিসিটিভি) সংশ্লিষ্ট একটি সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে পোস্ট করা হয়, ‘ট্রাম্পের কৌশল স্পষ্ট—এক এক করে দেশগুলোকে আলাদা করে ওয়াশিংটনে হাত পাততে বাধ্য করা। আর চীনের বার্তা হচ্ছে, আমরা বিশ্বকে দেখিয়ে দেব, বহু-পাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থাকে রক্ষার জন্য আমাদের দৃঢ় অঙ্গীকার।’

বিবিসি শুল্ক নিয়ে সরাসরি সম্প্রচার প্রতিবেদনে বলছে, ট্রাম্পের তৈরি বাণিজ্য বিশৃঙ্খলাকে চীন এখন রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক প্রভাব বাড়ানোর কাজে লাগাচ্ছে—বিশ্বব্যাপী এক নতুন রণকৌশল গড়ে তুলছে।

এদিকে বাজার পর্যবেক্ষকদের তথ্য অনুযায়ী, এই নতুন শুল্ক ঘোষণার পর থেকেই ইউরোপের শেয়ারবাজারে পতন দেখা গেছে এবং এশিয়ার বড় বড় বাজারও নিম্নমুখী।

আগামী সপ্তাহ থেকে মার্কিন পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপের একটি বড় তালিকা তৈরি করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ২৭টি সদস্য রাষ্ট্র। কেবল অনুমোদন বাকি। তবে ইউরোপের হয়েও বেশ স্বস্তিতে আছে যুক্তরাজ্য। ট্রাম্পের চোখে ‘সবচেয়ে বড় অপরাধী’ দেশগুলোর তালিকায় যুক্তরাজ্যের নাম নেই। তবে যুক্তরাজ্য থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক বসানো হয়েছে।

এ অবস্থায় যুক্তরাজ্যের বন্ধকী ঋণদাতারা সুদের হার কমানোর চিন্তা করছেন। আর্থিক তথ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মানিফ্যাক্টস জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাজ্যে গড় দুই বছরের স্থায়ী মর্টগেজ সুদের হার ৫ দশমিক ৩০ শতাংশ, যা মঙ্গলবার ছিল ৫ দশমিক ৩২ শতাংশ। আর গড় পাঁচ বছরের হার ৫ দশমিক ১৫ শতাংশ, যা আগের দিন ছিল ৫ দশমিক ১৭ শতাংশ।

বিশেষজ্ঞদের ধারণা, চলতি বছরে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড আগের চেয়ে বেশি হারে সুদ কমাতে পারে, যদি তারা মনে করে অর্থনীতিকে চাঙা করতে ঋণ গ্রহণ সহজ করা প্রয়োজন। তবে ব্যাংককে ভারসাম্য রক্ষা করে বার্ষিক মূল্যস্ফীতির হার ২ শতাংশ-এ রাখতে হবে। বর্তমানে যুক্তরাজ্যে মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ৮ শতাংশ, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। তাই সুদ কমালে মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকিও আছে।

ট্রাম্পের শুল্ক কার্যকরে বিপাকে পড়েছে এশীয় দেশগুলো। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া এবং তাইওয়ান—এসব প্রধান এশীয় দেশ এখন ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার আশায় রয়েছে, যাদের কিছু পণ্যের ওপর ৪৯ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। ট্রাম্পের ভাষায়, ‘এসব দেশ আমাদের ফোন করছে, আমার পেছনে ঘোরাঘুরি করছে। তারা চুক্তি করতে মরিয়া হয়ে পড়েছে।’

শুল্ক আরোপের এই উচ্চ হারের কারণে বিশ্ববাজার অস্থির হয়ে পড়লেও ট্রাম্পের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। এমনকি মার্কিন ভোক্তাবাজারে পণ্যমূল্য বেড়ে যেতে পারে—বিশ্লেষকদের এই সতর্কতার পরও ট্রাম্প বলছেন, এই শুল্ক ‘বিস্ফোরণাত্মক’। তবে এটি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করবে।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত