Homeঅর্থনীতিবৈশ্বিক আমের বাজারে বাংলাদেশের অংশীদারত্ব বাড়াতে জোর প্রচেষ্টা

বৈশ্বিক আমের বাজারে বাংলাদেশের অংশীদারত্ব বাড়াতে জোর প্রচেষ্টা


বিশ্বজুড়ে ক্রমবর্ধমান ফলের বাজার, যেখানে আমই প্রধান আকর্ষণ—সেই প্রায় ৭০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের বাজারে বাংলাদেশের অংশীদারত্ব বাড়াতে জোরালো পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার। এর অংশ হিসেবে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন সম্প্রতি দেশের ‘আমের রাজধানী’খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জ সফর করেছেন। এ সফরে তিনি শুধু রপ্তানিযোগ্য আমের বাগান পরিদর্শন করেননি, বরং উৎপাদক ও রপ্তানিকারকদের মুখোমুখি হয়ে তাঁদের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে সরাসরি আলোচনা করেছেন, যা বাংলাদেশের আম রপ্তানি বৃদ্ধিতে সরকারের সদিচ্ছার প্রতিফলন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় উৎপাদক, রপ্তানিকারক ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য পক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করা হয় এবং তা দূরীকরণে করণীয় বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ গ্রহণ করা হয়।

নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া ও ভূপ্রাকৃতিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ ফল উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। দেশে ও বিদেশে ফলের ব্যাপক চাহিদা। বাংলাদেশ প্রায় ৭০ প্রজাতির ফল উৎপাদিত হলেও এর ক্ষুদ্র একটি অংশ বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ হয়। ফলে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ রপ্তানিযোগ্য ফলের উৎপাদন এখনো সম্ভব হয়নি। তবে আম, আনারস, আমড়া, কলা, কাঁঠাল, পেয়ারাসহ বিভিন্ন সুস্বাদু ফলের মধ্যে আমের কদর বিশ্বজুড়ে সবার ওপরে। তাই উন্নত মানের আমের উৎপাদন বৃদ্ধি ও রপ্তানির জন্য সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে চলছে নানামুখী কার্যক্রম।

বাজার গবেষণা বলছে, ২০২৫ সালে তাজা ফলের বৈশ্বিক বাজারের আকার প্রায় ৭৭৮.৩৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছুঁতে পারে। শুধু আমের আন্তর্জাতিক বাজার ২০২৪ সালের ৬৭.৪ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ২০২৫ সালে ৭১.৯৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হতে পারে, যা বার্ষিক ৮ শতাংশ চক্রবৃদ্ধি হারে (CAGR) বেড়ে ২০২৯ সালে ৯৭.৮২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ৫০০ থেকে ১ হাজার প্রজাতির আম রপ্তানি করে থাকে।

আম উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে সপ্তম, কাঁঠাল উৎপাদনে দ্বিতীয় ও পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম স্থানে অবস্থান করছে। মৌসুমি ফল উৎপাদনে দেশের বর্তমান অবস্থান দশম। আয়তনে ছোট হলেও প্রতিবছর ১০ শতাংশ হারে ফল চাষের ক্ষেত্র বৃদ্ধি পেয়েছে এবং গত ১০ বছরে দেশে আমের উৎপাদন দ্বিগুণ হয়েছে।

২০২০-২১ অর্থবছরে ২.২৯ লাখ হেক্টর জমিতে ২৩.৫০ লাখ টন আমের ফলন হয়, যা ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২৭.৭ লাখ টনে দাঁড়ায়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২.৫ লাখ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয় এবং উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ২৫.৮৯ লাখ টন।

বাংলাদেশে উৎপাদিত রপ্তানিযোগ্য আমের মধ্যে ল্যাংড়া, ফজলি, হিমসাগর, ক্ষীরশাপাতি, বারি-২, বারি-৩, বারি-৭ ও আশ্বিনা জাতের আম বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। এ ছাড়া কাটিমন, তোতাপুরী, ন্যাম ডক মাই, মিয়াজাকি, অ্যালফ্যানসো, কেইট, পালমারের মতো বিদেশি জাতের আমও সীমিত আকারে চাষ করে সাফল্য পাওয়া গেছে।

আম থেকে কাঁচা আম ফালি (আমচুর), চাটনি, মোরব্বা এবং পাকা আম থেকে জুস, ফ্রুট বার, পুডিং, আমসত্ত্ব, জ্যাম, জেলি ইত্যাদি প্রস্তুত করা হচ্ছে। আমের ফালি শুকিয়ে প্যাকেটজাত করে রপ্তানির প্রচেষ্টাও বাড়ছে। এসব খাদ্যে ভিটামিন ‘এ’, ভিটামিন ‘সি’, ভিটামিন ‘কে’, পটাশিয়াম, বিটাক্যারোটিন, ফলেট, কোলাইন ও ম্যাগনেশিয়াম প্রচুর পরিমাণে থাকে; যা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

দেশের বেশ কয়েকটি আমের প্রজাতি ইতোমধ্যে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য চাঁপাইনবাবগঞ্জের ক্ষীরশাপাতি, রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফজলি, নওগাঁর নাক ফজলি, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ল্যাংড়া ও আশ্বিনা এবং রংপুরের হাঁড়িভাঙা। বর্তমানে আম্রপালি ও গোপালভোগের কদরও অনেক বেশি।

গত ২০২০-২১, ২০২১-২২, ২০২২-২৩, ২০২৩-২৪ ও ২০২৪-২৫ (জুলাই-এপ্রিল) অর্থবছরে আম রপ্তানির বিপরীতে যথাক্রমে ০.৪০, ১২.৭১, ২.৬৭ ও ২.৭৭ (আংশিক) লাখ মার্কিন ডলার আয় হয়েছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এযাবৎ যুক্তরাজ্য, হংকং, কানাডা, বাহরাইন, সুইজারল্যান্ড, ইতালি ও সুইডেনে আম রপ্তানি হয়েছে; যার মধ্যে যুক্তরাজ্যে সর্বাধিক আম রপ্তানি হয়েছে।

চীন সরকারের আগ্রহের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ থেকে সে দেশে আম রপ্তানির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্পের মাধ্যমে সংগৃহীত স্থানীয় আম উৎপাদক ও রপ্তানিকারকদের তালিকা ইতিমধ্যে চীনা দূতাবাসে প্রেরণ করা হয়েছে। সে দেশের কাস্টমস কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পেলে রপ্তানির প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

আমের শেলফ লাইফ বৃদ্ধিকরণ, পর্যাপ্ত হট ওয়াটার ট্রিটমেন্ট সুবিধা তৈরি, রাসায়নিকের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতকরণ, উন্নত প্যাকেজিং, দেশের বাণিজ্যিক আম উৎপাদকদের একটি অভিন্ন ছাতার আওতায় আনা, ফ্রুট ফ্লাইয়ের উপদ্রব হ্রাস, উত্তম কৃষিচর্চার যথাযথ অনুসরণ, স্যানিটারি ও ফাইটোস্যানিটারি সম্পর্কীয় বিষয়ে প্রশিক্ষণ এবং কুল চেইন বজায় রাখার বিষয়ে যত দ্রুত অগ্রগতি হবে, তত দ্রুত বাংলাদেশের আমের রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করা হচ্ছে। রপ্তানি প্রসারমূলক এসব কার্যক্রমে কৃষি মন্ত্রণালয়, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরসহ অন্যান্য সহযোগী সংস্থার সঙ্গে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো কাজ করবে বলে আম উৎপাদক ও রপ্তানিকারকদের আশ্বস্ত করা হয়।

এ সভায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স কৃষিভিত্তিক একটি ইপিজেড স্থাপন, আম নীতিমালা প্রণয়ন, বাগানসমূহে সোলার প্যানেল স্থাপন, আম উৎপাদক ও রপ্তানিকারকদের ঋণদান জোরদারকরণ, প্রান্তিক পর্যায়ে কোয়ারেন্টিন সুবিধা, রাজশাহী থেকে আম সরাসরি বিমানে জাহাজীকরণ ও প্যাকিং হাউস সুবিধা স্থাপনের দাবি জানায়। পাশাপাশি ঢাকায় রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর পৃষ্ঠপোষকতায় একটি আমের মেলা আয়োজনের অনুরোধ জানানো হয়।

ইপিবি ভাইস চেয়ারম্যান তাঁর সফরের সময় চাঁপাইনবাবগঞ্জ এলাকায় অবস্থিত রেশম শিল্প ও হস্তশিল্প পরিদর্শন করেন এবং তাঁদের সুবিধা-অসুবিধা সম্পর্কে খোঁজখবর নেন।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত