Homeঅর্থনীতিভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ /১২ ভারতীয় বিমানবন্দর বন্ধ, দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ায় ফ্লাইট বিপর্যয়

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ /১২ ভারতীয় বিমানবন্দর বন্ধ, দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ায় ফ্লাইট বিপর্যয়


ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে নতুন করে সংঘাত বেঁধে যাওয়ায় আকাশপথে বড় ধরনের সমস্যা দেখা দিয়েছে। অনেক আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন তাদের ফ্লাইট বাতিল করেছে ও রুট বদল করেছে। ভারতের ডজনখানেক বিমানবন্দর ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। এ কারণে যাত্রীদের দুর্ভোগ বাড়ছে। এ ছাড়া বিশ্ব অর্থনীতিতেও নতুন চাপ তৈরি হচ্ছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র-চীনের বাণিজ্য যুদ্ধের মধ্যে এহেন পরিস্থিতি বিশ্ববাণিজ্যকে আরও খারাপ করবে।

গত মাসে ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে একটি সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন মারা যান। এর জবাবে মঙ্গলবার (৬ এপ্রিল দিবাগত রাত থেকে) ভারত পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত আজাদ কাশ্মীরে হামলা চালায়। তবে এই যুদ্ধের উত্তেজনা আকাশ ছুঁয়ে ফেলেছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলেছেন, ভারতের হামলা উপসাগরীয় দেশগুলোর যাত্রীবাহী বিমানের জন্য বড় বিপদ তৈরি করেছে।

ভারত-পাকিস্তান ইতিমধ্যেই একে অপরের বিমানের জন্য আকাশপথ বন্ধ করে দিয়েছে। জার্মানির লুফথানসার মতো বড় এয়ারলাইন পাকিস্তানের আকাশ এড়িয়ে চলছে। ফ্লাইট ট্র্যাকিং ওয়েবসাইটে দেখা গেছে, অনেক বিমান ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরাত আর কুয়েতের ওপর দিয়ে ঘুরপথে যাচ্ছে। এতে আকাশে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ভিড় হতে পারে। পাকিস্তান বলছে, হামলার সময় তাদের আকাশে ৫৭টি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ছিল। পরে তারা আকাশপথ খুলে দিলেও ভারতের উত্তর-পশ্চিমের আকাশ এখনো ফাঁকা।

দুই দেশের অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটেও সমস্যা হচ্ছে। ফ্লাইটরাডার-২৪ বলছে, বুধবার সকাল পর্যন্ত ভারতের ৩ শতাংশ আর পাকিস্তানের ১৭ শতাংশ ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। ভারতের বড় এয়ারলাইন ইন্ডিগো আগামী শনিবার (১০ মে) সকাল পর্যন্ত ১৬৫টি ফ্লাইট বাতিল করেছে। এতে তাদের শেয়ারের দাম ১.১ শতাংশ কমে গেছে। এয়ার ইন্ডিয়া, স্পাইসজেট আর আকাসা এয়ারও অনেক ফ্লাইট বন্ধ করেছে। ইন্ডিগো জানিয়েছে, শ্রীনগর, জম্মু, অমৃতসর, লেহসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় ফ্লাইট বন্ধ থাকবে।

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক এয়ারলাইনসের মধ্যে—ইউনাইটেড এয়ারলাইন ইতিমধ্যে দিল্লির ফ্লাইট বাতিল করেছে। কারণ আকাশপথে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কোরীয় এয়ার সিউল থেকে দুবাই যাওয়ার পথ বদলে মিয়ানমার, বাংলাদেশ আর ভারতের ওপর দিয়ে যাচ্ছে। থাই এয়ারওয়েজ ইউরোপ আর দক্ষিণ এশিয়ার ফ্লাইটের রুট বদলেছে। তাইওয়ানের চায়না এয়ারলাইন লন্ডন, ফ্রাঙ্কফুর্ট আর রোমের ফ্লাইটে সমস্যার কথা জানিয়েছে। লুফথানসার দিল্লি থেকে ফ্রাঙ্কফুর্টের ফ্লাইট এখন আধা ঘণ্টা বেশি সময় নিচ্ছে। সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন ৬ মে থেকে পাকিস্তানের আকাশ ব্যবহার করছে না।

এদিকে এশিয়া প্যাসিফিক এয়ারলাইন অ্যাসোসিয়েশন বলছে, এই সংঘাত বিমান চলাচলে বড় সমস্যা তৈরি করছে। তারা উদ্বিগ্ন যে, যুদ্ধের এলাকায় জিপিএস স্পুফিং নামে একটি কৌশল বিমানের পথ ভুলিয়ে দিতে পারে। এটি এমন একটি ক্ষতিকর পদ্ধতি, যা বিমানের অবস্থান নির্ধারণের যন্ত্রে গোলযোগ করে। কাশ্মীরে সামরিক বিমান বাড়ার কারণে এই ঝুঁকি বেশি হয়েছে।

এয়ার ইন্ডিয়া বলছে, পাকিস্তানের আকাশপথ বন্ধ থাকলে তাদের বছরে প্রায় ৬০০ মিলিয়ন ডলার ক্ষতি হতে পারে। ২০১৯ সালে এমন একটি ঘটনায় ভারতীয় এয়ারলাইনসের ৮২ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়। এ ছাড়া রুট বদল করায় জ্বালানি খরচ বাড়ছে। কিছু ফ্লাইটে মাঝপথে জ্বালানি নেওয়ার জন্য থামতে হচ্ছে, যেমন দিল্লি থেকে নিউইয়র্কের বিমান ভিয়েনা বা কোপেনহেগেনে থামছে। এই সমস্যা মধ্যপ্রাচ্য আর দক্ষিণ এশিয়ার এয়ারলাইনসের জন্য বাড়তি ঝক্কি তৈরি করেছে।

এই সংঘাত এমন সময় হচ্ছে, যখন যুক্তরাষ্ট্র আর চীনের বাণিজ্য যুদ্ধে বিশ্ব অর্থনীতি টালমাটাল। আগামী শনিবার জেনেভায় তাদের আলোচনা হওয়ার কথা, যা বৈশ্বিক বাণিজ্যে কিছুটা স্বস্তি আনতে পারে। কিন্তু ভারত-পাকিস্তানের এই যুদ্ধ বিমান চলাচল আর বাণিজ্যের পথে নতুন বাধা তৈরি করেছে। মালয়েশিয়ার এক মন্ত্রী বলেছেন, এই উত্তেজনা চাল আমদানিতে সমস্যা করতে পারে, যা খাদ্য নিরাপত্তার জন্যও ঝুঁকি।

ভারত-পাকিস্তানের এই যুদ্ধ বিমান চলাচলের জন্য বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাকিস্তানের আকাশপথ ইউরোপ আর দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ। এটি বন্ধ থাকায় এয়ারলাইনসের খরচ বাড়ছে, আর যাত্রীরা সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছে না। জিপিএস নিয়ে সমস্যা বিমানের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। জাতিসংঘ আর চীন দুই দেশকে শান্ত থাকতে বলেছে। কিন্তু দ্রুত কোনো সমাধান না হলে এয়ারলাইন আর যাত্রীদের কষ্ট আরও বাড়বে।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত