Homeঅর্থনীতিমূল্যস্ফীতির প্রভাব নিয়ে আইএমএফের সতর্কতা, দরিদ্রদের সহায়তায় জোর

মূল্যস্ফীতির প্রভাব নিয়ে আইএমএফের সতর্কতা, দরিদ্রদের সহায়তায় জোর


বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও নজিরবিহীন বন্যার প্রভাবে দীর্ঘদিনের ঊর্ধ্বমুখী মূল্যস্ফীতি হার দুই অঙ্কের ঘর ছাড়িয়েছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদহার বাড়ানোসহ কঠোর মুদ্রানীতি অনুসরণ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু জিনিসপত্রের দাম আকাশচুম্বী। শুল্ককর কমানোসহ কোনো পদক্ষেপ কাজে আসছে না। এর ফলে নিম্ন আয়ের দরিদ্র মানুষদের খেয়ে পরে বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়ছে।

এই পরিস্থিতিতে মূল্যস্ফীতির প্রভাব নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে সতর্ক করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। বিশেষ করে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সহায়তার উপর জোর দিয়েছে সংস্থাটি। সম্প্রতি জাপানের টোকিওতে এই মূল্যায়ন তুলে ধরেন আইএমএফের এশিয়া প্রশান্ত বিভাগের উপ-পরিচালক থমাস হেলব্লিং এই পর্যালোচনা তুলে ধরেন।

বৈশ্বিক ঋণদাতা সংস্থাটি বলছে, সাম্প্রতিক মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির কারণ সরবরাহ সংকট হলেও, দ্বিতীয় দফায় আগের মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির ঘা ঠেকাতে বাংলাদেশ ব্যাংককে পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ, যতটুকু মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, তা মানুষের মধ্যে আরও বাড়ার শঙ্কা তৈরি করছে। এমন পরিস্থিতিতে কঠোর মুদ্রানীতির পাশাপাশি দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সহায়তার জন্য এবং উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বজায় রাখার জন্য রাজস্ব নীতিতেও ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে।

অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে থমাস বলেন, ‘বাংলাদেশ রাজনৈতিক অস্থিরতার পাশাপাশি ভয়াবহ বন্যার শিকার হয়েছে। ফলে দেশের অর্থনীতিতে বিশেষ করে সরবরাহ খাতে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। আমাদের হিসাবে, এটিই মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বমুখিতার প্রধান কারণ।’

সাশ্রয়ী মূল্যে টিসিবির চাল, ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে রাজধানীতে নিম্ন আয়ের মানুষদের ভিড় বাড়ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

তিনি আরও বলেন, কিন্তু মূল্যস্ফীতি বেশ কিছুদিন ধরেই ঊর্ধ্বমুখী ছিল। ২০২২ সালে এটি বাড়তে শুরু করে এবং তখন থেকেই তুলনামূলকভাবে উচ্চই রয়েছে। তাই, এখানে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি সহায়ক ও প্রয়োজনীয়। এজন্য নীতি সুদহার বা রেপো রেট বাড়ানোটি সঠিক সিদ্ধান্ত পদক্ষেপ।

আইএমএফ এই কর্মকর্তা বলেন, সাম্প্রতিক মূল্যস্ফীতির বেশিরভাগটাই সরবরাহ খাতের সঙ্গে সম্পর্কিত হলেও আগেই থেকেই বেড়ে যাওয়া মূল্যস্ফীতির দ্বিতীয় দফার প্রভাব ঠেকানো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি যথেষ্ট কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দেশের রাজস্বনীতি মুদ্রানীতিকে সমর্থন করা উচিত এবং বহিঃ স্থিতিশীলতা সমর্থন করার জন্য মুদ্রানীতি কঠোর করা উচিত। তবে একই সময়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সহায়তা এবং উন্নয়ন বজায় রাখতে রাজস্ব নীতিতেও ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে।’

গত আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর তিন মাস পেরিয়েছে। এর মধ্যে মূল্যস্ফীতি বাড়ছেই, গত অক্টোবরে সাধারণ মূল্যস্ফীতি ফের দুই অংকের ঘর অতিক্রম করে ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশে উঠেছে। গত বছরের অক্টোবর মাসে সাধারণ মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, খাদ্য খাতে এই মূল্যস্ফীতি অসহনীয় অবস্থায় পৌঁছেছে। হালনাগাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত অক্টোবর মাসে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১২ দশমিক ৬৬ শতাংশ। তবে ৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ নিয়ে খাদ্যবহির্ভূত খাতের মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্ক ছুঁই ছুঁই করছে।

রাজধানীতে এককেজি টমেটোর দাম ২০০ টাকার বেশি। দনিয়া এলাকার ছবি।

রাজধানীতে এককেজি টমেটোর দাম ২০০ টাকার বেশি। দনিয়া এলাকার ছবি।

মূল্যস্ফীতি বাড়ায় বাজারে ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়েছে ক্রেতার নাভিঃশ্বাস উঠেছে। দেশের বড় অংশের মানুষ মাছ-মাংস, এমনকি ডিমও কিনতে পারছে। কিন্তু বাজার নিয়ন্ত্রণে অন্তর্বর্তী সরকার কোনো সফলতা দেখাতে পারছে না। ফলে গত সেপ্টেম্বরের চেয়ে অক্টোবরে আরও বেড়েছে মূল্যস্ফীতি।

বিবিএসের সংশ্লিষ্ট অনুবিভাগের এক কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে বলেন, গত মাসে সারাদেশে খাদ্য খাতের দাম বৃদ্ধির কারণেই মূল্যস্ফীতি দুই অংকের ঘর অতিক্রম করেছে। বিশেষ করে ডিম, সব ধরনের শাক-সবজি এবং ব্রয়লার মুরগি ও মাছের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় মূল্যস্ফীতি বেড়েছে।

এমন অবস্থার মধ্যে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ভরসা সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে সামাজিক সুরক্ষার আওতায় সকল প্রকার ভাতা কর্মসূচি বন্ধ রয়েছে। অনেক সচ্ছল ব্যক্তি ভাতা নিচ্ছেন— এমন অভিযোগে এই কর্মসূচি বন্ধ রেখেছে অন্তর্বর্তী সরকার। গত ৮ আগস্ট এই সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় প্রকৃত উপকারভোগীদের তালিকা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যারা এখন ভাতাভোগীর তালিকায় আছেন, তারা আসলেই ভাতা পাওয়ার যোগ্য কিনা, তা দেখতে বলা হয়েছে।

সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় নতুন তালিকা চূড়ান্ত না হওয়ায় চলতি (২০২৪-২৫) অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ভাতা দেওয়া হয়নি। সাধারণত অক্টোবর মাসেই এই ভাতা দেওয়া হয়। কিন্তু এবার নভেম্বরের অর্ধেক চলে গেলেও কবে নাগাদ তা সুবিধাভোগীরা ভাতা পাবেন তা স্পষ্ট নয়। সমাজসেবা অধিদফতরের তথ্য বলছে, চলতি বাজেটে ভাতাভোগীদের জন্য ৯ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত