যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে নতুন এক চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে—এমন মত অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতাদের। যদিও এই শুল্ক ব্যবস্থা আপাতত ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র, তবুও বিষয়টির দীর্ঘমেয়াদি সমাধানে কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক প্রস্তুতি শুরু করেছে বাংলাদেশ সরকার।
এ প্রেক্ষাপটে আসন্ন বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) প্রস্তাব করেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানিনির্ভর ৬২৬টি পণ্যে শুল্ক ও কর কাঠামো যৌক্তিক করা হোক। পাশাপাশি, বিদ্যমান শুল্ক কাঠামো পুনর্বিন্যাস এবং ট্যারিফ ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার আনার সুপারিশও দেওয়া হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাণিজ্য সংলাপের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ১১০টি পণ্যের আমদানি শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার, ৬৫টি পণ্যে শুল্ক হ্রাস, ৯টি পণ্যের সম্পূরক শুল্ক সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহার এবং ৪৪২টি পণ্যে সম্পূরক শুল্ক হ্রাসের প্রস্তাব দিয়েছে এনবিআর। এ প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে একদিকে জনগণের ওপর করের ভার হ্রাস পাবে, অন্যদিকে শিল্প খাত—বিশেষত রপ্তানিমুখী শিল্প-উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকবে বলে মনে করছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
যেসব পণ্যের ওপর শুল্ক-কর যৌক্তিককরণের প্রস্তাব করা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে তৈরি পোশাকশিল্পের কাঁচামাল, বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ, ম্যান-মেড ফাইবার, উল, বর্জ্যপানি শোধনাগার (ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট), ডায়ালাইসিস ফিল্টার, অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র এবং নির্দিষ্ট কিছু অস্ত্র।
বর্তমানে দেশে ৬ স্তরের আমদানি শুল্কহার বিদ্যমান—০ শতাংশ, ১ শতাংশ, ৫ শতাংশ, ১০ শতাংশ, ১৫ শতাংশ ও ২৫ শতাংশ। নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী, এখানে একটি অতিরিক্ত ৩ শতাংশের স্তর যুক্ত করা হবে। পাশাপাশি, সম্পূরক শুল্কের বর্তমান ১২টি স্তরের সঙ্গে ৪০ শতাংশ হারে একটি নতুন স্তর যোগ করারও প্রস্তাব রয়েছে।
অর্থ উপদেষ্টার মতে, এলডিসি (স্বল্পোন্নত দেশ) থেকে উত্তরণের প্রেক্ষাপটে বর্তমান ট্যারিফ ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতিকে ধাপে ধাপে প্রত্যাহার করা সময়ের দাবি। এ লক্ষ্যে প্রস্তাব করা হয়েছে বিদ্যমান সব ট্যারিফ মূল্য বাতিল করা, ৮৪টি পণ্যের ন্যূনতম মূল্য তুলে দেওয়া এবং ২৩টি পণ্যের ন্যূনতম মূল্য সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে বৃদ্ধি করা।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ট্যারিফ কাঠামোর যৌক্তিকতা নিশ্চিত করা না গেলে এলডিসি-পরবর্তী প্রতিযোগিতামূলক অর্থনীতি গড়ে তোলা সম্ভব নয়। এখনই বাস্তবভিত্তিক সংস্কার দরকার।