Homeঅর্থনীতিসামাজিক ও অর্থনৈতিক ন্যায় প্রতিষ্ঠায় অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মসংস্থান নীতি অপরিহার্য

সামাজিক ও অর্থনৈতিক ন্যায় প্রতিষ্ঠায় অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মসংস্থান নীতি অপরিহার্য


বাংলাদেশে ন্যায্য নিয়োগপ্রক্রিয়া এবং বৈষম্যবিরোধী পদক্ষেপের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তি বাড়াতে একটি কার্যকর জাতীয় নীতির প্রয়োজন। যাতে কর্মক্ষেত্রের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা, সক্ষমতা ও মনোভাব থাকা সত্ত্বেও কেউ কর্মবাজার থেকে বঞ্চিত না হয়। সম্প্রতি উন্নত ভবিষ্যৎ গড়ার উদ্দেশ্যে রাজধানীতে অনুষ্ঠিত এক জাতীয় সংলাপে এই বিষয়গুলোর ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।

শ্রম দিবস উদ্‌যাপনের অংশ হিসেবে আইএলও (International Labour Organization), বাংলাদেশ বিজনেস অ্যান্ড ডিজঅ্যাবিলিটি নেটওয়ার্ক এবং বহ্নিশিখা যৌথভাবে এই জাতীয় সংলাপের আয়োজন করে। এতে শ্রমবাজারে অন্তর্ভুক্তির গুরুত্ব তুলে ধরা হয় এবং কর্মস্থলে সহিষ্ণুতা ও পরিবর্তনের কণ্ঠস্বরকে উদ্‌যাপন করা হয়।

সংলাপে ইউসেপ বাংলাদেশের শিক্ষার্থী মো. রুবেল ইসলাম বাস্তব দক্ষতার অভাব নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন এবং নিয়োগকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের আরও সুযোগের দাবি জানান। তিনি শিক্ষাব্যবস্থা এবং শিল্পের মধ্যে সমন্বয় সাধনের উদ্যোগের আহ্বান জানান, যা যুবসমাজকে কর্মক্ষেত্রের চাহিদার বিষয়ে আপডেট রাখবে এবং অর্জিত দক্ষতা শ্রমবাজারে প্রয়োগযোগ্য হবে। চট্টগ্রাম পাহাড়ি এলাকা থেকে লিলি প্রু মারমা আদিবাসীদের মুখোমুখি হওয়া চ্যালেঞ্জ; যেমন প্রশিক্ষণ ও চাকরির সুযোগের অভাব, ভৌগোলিক ও ভাষাগত বাধা তুলে ধরেন এবং তাদের অন্তর্ভুক্তির জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপ ও জবাবদিহির আহ্বান জানান।

আইএলও বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর টুমো পোটিআইনেন বলেন, ‘আমরা একত্র হয়েছি সকল শ্রমিকের, বিশেষ করে যাঁদের কণ্ঠস্বর প্রায়শই অশ্রুত হয়েছে, তাঁদের ধৈর্য, আকাঙ্ক্ষা ও অধিকার স্বীকার করার জন্য। বাংলাদেশ যখন জনগণের জন্য একটি নতুন ভবিষ্যতের রূপরেখা গড়ছে, তখন সকল নারী ও পুরুষের জন্য সমান সুযোগের গুরুত্বকে অতিরঞ্জিত করা যাবে না।’

সংলাপে অংশগ্রহণকারীরা সমাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা নারী ও পুরুষদের কথা শোনেন, যাঁরা সংখ্যালঘু বা পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত হলেও তাঁদের কাজের জগতে সাফল্য অর্জন করেছেন এবং কর্মস্থলের প্রতিবন্ধকতাগুলো ভেঙে সমাজ ও অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন।

বক্তারা বলেন, ‘বৈষম্য কাঠামোগত এবং অচেতনভাবে এখনো বিদ্যমান।’ তাই তাঁরা স্পষ্টভাবে নীতি এবং সংস্কৃতি ও মনোভাব পরিবর্তনের আহ্বান জানান।

শ্রমিক প্রতিনিধি ও ন্যাশনাল কো-অর্ডিনেশন কমিটি ফর ওয়ার্কার্স এডুকেশনের (এনসিসিডব্লিউই) চেয়ারম্যান বাদল খান বলেন, কার্যকর অন্তর্ভুক্তি কেবল শ্রম অধিকারের ভিত্তিতেই অর্জন করা সম্ভব; এটি অবশ্যই অন্তর্ভুক্তি এবং সমতার ভিত্তি হতে হবে।

বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট তাহমিদ আহমেদ গুরুত্ব দিয়ে বলেন, অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে অবশ্যই নীতির বাইরেও যেতে হবে। এটি কর্মক্ষেত্রের সংস্কৃতির অংশ হতে হবে, যা সকল কর্মীকে মর্যাদা এবং সুরক্ষা দেয়। তিনি বলেন, ‘আজ আমরা যে অভিজ্ঞতালব্ধ গল্পগুলো শুনেছি, তা আমাদের অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মক্ষেত্র তৈরিতে আরও কিছু করার জন্য অনুপ্রাণিত করে।’

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম শফিউজ্জামান বলেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক শ্রমবাজার শুধু একটি উন্নয়ন লক্ষ্য নয়, এটি সবার জন্য মর্যাদা, ন্যায়বিচার এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক ন্যায়বিচারের প্রশ্ন। অন্তর্ভুক্তি কেবল ব্যক্তিদের উপকার করে না, এটি সমগ্র সম্প্রদায় ও অর্থনীতিকেও শক্তিশালী করে।

নারী ও শিশুবিষয়ক এবং সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ ঘর থেকে শুরু করে যাতায়াতের পথে এবং কর্মস্থলে নারীদের নিরাপত্তার বিষয়টিকে তাঁদের শ্রমবাজারে অন্তর্ভুক্তির পথে মূল বাধা হিসেবে মনে করেন। তিনি গণপরিবহন এবং কর্মস্থলে যৌন হয়রানির ব্যাপকতাকে একটি বড় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেন। তিনি বলেন, নারীদের কর্মজীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নীতি সংস্কারের প্রয়োজন। তিনি জানান, সরকার শক্তিশালী নীতি গ্রহণ এবং প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থায় এর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার বিষয়টি পর্যালোচনা করছে।

সংলাপের সমাপ্তি ঘোষণা করেন শ্রম উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। এ সময় তিনি যৌন হয়রানি এবং নারীর প্রতি সহিংসতার ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগের ওপর জোর দিয়ে বলেন, এই ধরনের কর্মকাণ্ডের পরিণতি ভয়াবহ হবে।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত