[ad_1]
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি বাদ দিয়ে প্রথমবারের মতো বাজারে ছাড়া হলো নতুন নকশার টাকা। এ নোটগুলোতে এবার শেখ মুজিবের ছবির পরিবর্তে থাকছে দেশের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক স্থাপনার প্রতিকৃতি। আগামীকাল সোমবার (২ জুন) থেকে রাজধানীর বিভিন্ন ব্যাংকের শাখা থেকে সাধারণ মানুষ এই নতুন নোট সংগ্রহ করতে পারবেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিস রবিবার (১ জুন) থেকে সীমিত পরিসরে ২০, ৫০ ও ১০০০ টাকা মূল্যমানের নতুন নোট বিতরণ শুরু করেছে। একইসঙ্গে কিছু বাছাইকৃত ব্যাংকের মাধ্যমে নোট সরবরাহ করা হচ্ছে।
ঈদের আগেই বাজারে নতুন নোট
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ঈদুল আজহার আগেই জনগণের হাতে নতুন নোট পৌঁছে দিতে কাজ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। রবিবার যে ১০টি ব্যাংক নতুন নোট পেয়েছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে— সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক এবং ব্র্যাক ব্যাংক। এসব ব্যাংকের প্রধান শাখাগুলো নতুন টাকা পাবে এবং সোমবার থেকেই বিতরণ শুরু করবে। তবে কোন শাখা থেকে টাকা বিতরণ হবে, তা নির্ধারণ করবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, ঈদের আগ-মুহূর্তে সর্বোচ্চ ২০০ কোটি টাকা মূল্যমানের নতুন নোট ছাপানো সম্ভব হয়েছে। এর বড় একটি অংশ ইতোমধ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। বাকি অংশ বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন শাখার মাধ্যমে বিনিময় করা হবে।
নতুন নোটের নকশায় বড় পরিবর্তন
নতুন নোটগুলোর নকশায় এসেছে বড় ধরনের পরিবর্তন। এত দিন যাবৎ প্রচলিত সব টাকায় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি বাধ্যতামূলকভাবে থাকলেও এবার তা বাদ দিয়ে জাতীয় স্থাপনা ও ঐতিহ্যবাহী স্থানের প্রতিকৃতি ব্যবহার করা হয়েছে।
১০০০ টাকা মূল্যমানের নতুন নোটে সামনের বাঁ পাশে থাকছে জাতীয় স্মৃতিসৌধ, মাঝখানে ব্যাকগ্রাউন্ডে প্রস্ফুটিত শাপলা ফুল ও পাতা, আর পেছনে রয়েছে জাতীয় সংসদ ভবনের প্রতিকৃতি। ৫০ টাকা নোটে সামনের অংশে আহসান মঞ্জিল, পেছনে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের কালজয়ী চিত্রকর্ম ‘সংগ্রাম’। ২০ টাকা নোটে সামনের অংশে ঐতিহাসিক কান্তজিউ মন্দির ও পেছনে পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার। সব নোটই শতভাগ সুতি কাগজে মুদ্রিত এবং প্রতিটিতেই জলছাপ হিসেবে থাকছে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মুখ।
অতীতের প্রেক্ষাপট
গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ ব্যাংক সব ধরনের টাকা ছাপানো বন্ধ করে দেয়। কারণ, প্রতিটি নোট ও মুদ্রায় বঙ্গবন্ধুর ছবি থাকা রাজনৈতিকভাবে বিতর্কিত হয়ে উঠেছিল। এমনকি যেসব নতুন টাকা ইতোমধ্যে ছাপা হয়ে গিয়েছিল, সেগুলোও বাজারে ছাড়া হয়নি। ফলে বাজারে পুরনো ও ছেঁড়াফাটা নোটের ঘাটতি তীব্র আকার ধারণ করে।
এ অবস্থায় নতুন সরকারের অধীনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নোট ছাপার কাজ পুনরায় শুরু করে। তবে এবার নোটের নকশায় আনা হয়েছে আমূল পরিবর্তন। লক্ষ্য ছিল— জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হিসেবে ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক স্থাপনাগুলোকে তুলে ধরা।
পুরনো নোটও চালু থাকবে
বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নতুন নোটের পাশাপাশি বর্তমানে প্রচলিত সব ধরনের কাগুজে নোট ও ধাতব মুদ্রা বাজারে চালু থাকবে। তবে ধীরে ধীরে পুরনো নোট বাজার থেকে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
জনমনে আগ্রহ
নতুন নোটের প্রতিকৃতি প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক কৌতূহল ও আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে। অনেকেই বলছেন, এটি রাজনৈতিক নিরপেক্ষতার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। পাশাপাশি দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার প্রতিকৃতি ব্যবহার করায় জাতীয় পরিচয় ও ঐতিহ্যের বার্তা পৌঁছে যাবে সর্ব সাধারণের কাছে।
[ad_2]
Source link