টানা দরপতন, তারল্যসংকট ও বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতায় দীর্ঘদিন ধরেই বেহাল দেশের পুঁজিবাজার। এমন প্রেক্ষাপটে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজারে প্রাণ ফেরাতে নেওয়া হয়েছে কয়েকটি সাহসী ও সময়োপযোগী উদ্যোগ। এতে সরাসরি উপকৃত হবেন দেশের প্রায় ১৭ লাখ বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) অ্যাকাউন্টধারী বিনিয়োগকারীসহ সংশ্লিষ্ট সব স্টেকহোল্ডার।
প্রস্তাবিত বাজেটে তালিকাভুক্ত এবং অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর ব্যবধান ২ দশমিক ৫ শতাংশ বাড়ানো হচ্ছে। মার্চেন্ট ব্যাংকের করপোরেট কর ১০ শতাংশ কমানো হচ্ছে। দশমিক শূন্য ২ শতাংশ উৎসে কর কমছে ব্রোকারেজ হাউসের লেনদেনের ওপর। এ ছাড়াও পরিশোধিত মূলধনের ১০ শতাংশের বেশি আইপিওতে হস্তান্তর করা কোম্পানির করপোরেট কর ২ দশমিক ৫ শতাংশ কমানো এবং ব্যক্তির করমুক্ত আয়সীমা ২৫ হাজার টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বাজারে দরপতন অব্যাহত রয়েছে। ফলে এ সময়ে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা কমেছে। লেনদেন কমে ৩০০ কোটি টাকার ঘরে দাঁড়িয়েছে। আস্থা ও তারল্যসংকটে থাকা বাজারে এই পাঁচ পদক্ষেপ বাস্তবায়ন হলে দেশের প্রায় ১৭ লাখ বিও বিনিয়োগকারী, ব্রোকারেজ হাউস, মার্চেন্ট ব্যাংক এবং স্টক এক্সচেঞ্জসহ দেশের পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। ব্রোকার হাউস এবং মার্চেন্টগুলোর আর্থিক সক্ষমতা বাড়বে। তাঁরা নতুন করে লেনদেন করতে সক্ষম হবেন।
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক মো. আল-আমিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, এবারের বাজেট শেয়ারবাজারের সব স্টেকহোল্ডারের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার এই উদ্যোগ নিয়েছে। ফলে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সক্ষমতা বাড়বে। তাঁরা বিনিয়োগ করতে পারবেন।
সূত্র বলছে, অর্থ উপদেষ্টা বাজেট বক্তব্যে পুঁজিবাজারে সার্বিকভাবে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও এই বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে সরকার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে উল্লেখ্য করবেন। তিনি দেশি-বিদেশি লাভজনক ও নামীদামি কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে লিস্টেড এবং নন-লিস্টেড কোম্পানির করহারের ব্যবধান ৫ শতাংশ থেকে ২ দশমিক ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করবেন।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও আইসিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, লিস্টেড-নন-লিস্টেড কোম্পানির কর ব্যবধান বাড়ানোর ফলে ভালো কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত হবে। তবে ১০-১৫ শতাংশ করা প্রয়োজন।
এক যুগ ধরে উৎসে কর কমানোর দাবি করে আসা ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম বলেন, আগে ব্রোকারেজ হাউসগুলোকে প্রায় ৬০ শতাংশ কর দিতে হতো। প্রস্তাবিত হার বাস্তবায়ন হলে এটি ২৭-৩০ শতাংশে নেমে আসবে। এতে হাউসগুলো ব্যবসায় টিকে থাকতে পারবে।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) প্রেসিডেন্ট মাজেদা খাতুন বলেন, ‘কর কমানোর উদ্যোগে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর আয় বাড়বে, আর্থিক সক্ষমতা বাড়বে। এই অর্থ পুঁজিবাজারের বিনিয়োগের পাশাপাশি ভালো কোম্পানিকে আইপিওর মাধ্যমে বাজারে আনার জন্য কাজ করতে পারব।’
পরিশোধিত মূলধনের ১০ শতাংশের বেশি শেয়ার ইনিশায়ল পাবলিক অফারিংয়ের (আইপিও) মাধ্যমে বিক্রি করে পুঁজিবাজারে আসা কোম্পানিগুলো ২২ দশমিক ৫ শতাংশের পরিবর্তে ২০ শতাংশ কর সুবিধা পাবে।