স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত মোট ১৩ মন্ত্রী বা সমমর্যাদার ব্যক্তি জাতীয় বাজেট উপস্থাপনের দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁদের হাত ধরে এসেছে ৫৫টি বাজেট। আজ সোমবার অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ দেশের ৫৬তম বাজেট ঘোষণা করবেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি হবেন বাজেট পেশকারী ১৪তম ব্যক্তি।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রায় ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হতে পারে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এবারের বাজেটের মূল লক্ষ্য থাকবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, ব্যবসা-বাণিজ্যে সহজতর পরিবেশ নিশ্চিত করা, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং আর্থিক শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা।
বাজেট কী
বাজেট হলো সরকারের নির্দিষ্ট একটি অর্থবছরের আয়-ব্যয়ের পরিকল্পনা। এর মাধ্যমে রাজস্ব আদায়, ব্যয়ের খাত নির্ধারণ, করনীতি এবং উন্নয়ন কর্মসূচির দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়।
কেন বাজেট
সংবিধানের ৮৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, সরকার কোন খাতে কত অর্থ ব্যয় করবে এবং কোন উৎস থেকে আয় করবে; সেই পরিকল্পনা বার্ষিক আর্থিক বিবৃতি বা বাজেটের মাধ্যমে উপস্থাপন করতে হয়। ২০০৯ সালে কার্যকর হওয়া ‘বাজেট ব্যবস্থাপনা আইন’ বাজেট প্রণয়নের একটি আইনগত কাঠামোও নির্ধারণ করে দিয়েছে।
বাজেটপ্রক্রিয়া কীভাবে
সংসদ থাকলে বাজেটের ব্যয়সংক্রান্ত অংশটি ‘ব্যয় নির্দিষ্টকরণ বিল’ আকারে সংসদে উত্থাপন করা হয় এবং তা পাস হলে আইনে পরিণত হয়। করসংক্রান্ত প্রস্তাবগুলো ‘অর্থবিল’ হিসেবে উত্থাপিত হয় এবং আলোচনা শেষে তা ‘অর্থ আইন’ হিসেবে গৃহীত হয়। তবে বর্তমানে সংসদ না থাকায় এবার বাজেট পাস হবে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে। অর্থ উপদেষ্টা বাংলাদেশ টেলিভিশনের মাধ্যমে বাজেট বক্তৃতা দেবেন। এরপর প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে মতামত গ্রহণের একটি বিকল্প ব্যবস্থা রাখা হবে। মতামতের ভিত্তিতে জুনের শেষ দিকে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে বাজেটের প্রয়োজনীয় সংশোধন করে চূড়ান্ত অধ্যাদেশ জারি করা হবে।
বাজেটের ইতিহাস
বাংলাদেশের প্রথম বাজেট ঘোষণা করে মুজিবনগর সরকার। এটি ছিল মূলত স্বাধীনতাযুদ্ধকালের প্রয়োজনীয় ব্যয়ের হিসাব। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মেয়াদি ওই বাজেটে রাজস্ব আয় ধরা হয়েছিল ৭ কোটি ৭৪ লাখ ১৮ হাজার ৯৯৮ টাকা এবং ব্যয় ছিল ৮ কোটি ৬২ লাখ ৪৮ হাজার ২০৪ টাকা। স্বাধীনতার পর প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাজেট উপস্থাপন করেন তাজউদ্দীন আহমদ। তিনি ১৯৭১-৭২ ও ১৯৭২-৭৩ দুই অর্থবছরের জন্য বাজেট দেন। মোট বাজেটের আকার ছিল ৭১৯.৪৩ কোটি টাকা, যেখানে রাজস্ব আয় ছিল ২৮৫.৩৮ কোটি এবং ঘাটতি ছিল ৪২৭.৮৫ কোটি টাকা। এ বাজেটকে বলা হয়েছিল ‘পুনর্বাসন ও পুনর্গঠনভিত্তিক বাজেট’।