ব্রাজিলিয়ান ফুটবলে নতুন করে দেখা দিল প্রশাসনিক তোলপাড়। জাতীয় দলের কোচ হিসেবে ইতালিয়ান কিংবদন্তি কার্লো আনচেলত্তির নিয়োগ ঘোষণার কিছুদিন পরই বড়সড় রদবদল—আদালতের নির্দেশে ব্রাজিল ফুটবল কনফেডারেশনের (সিবিএফ) প্রেসিডেন্ট এডনালদো রদ্রিগেজকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
রিও ডি জেনেইরোর আদালতের বিচারক গ্যাব্রিয়েল দে অলিভেইরা জেফিরো এই রায়ে জানান, প্রশাসনিক নথিতে জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়ার পরই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অভিযোগ উঠেছে, সিবিএফের সাবেক প্রেসিডেন্ট কর্নেল নুনেসের স্বাক্ষর নকল করে একটি চুক্তিপত্রে সই করা হয়েছে। এই জালিয়াতি নিয়ে এক্সপার্ট রিপোর্ট আদালতে জমা পড়ে, যার ভিত্তিতেই রদ্রিগেজকে অবিলম্বে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
সঙ্গে সঙ্গে সংস্থাটিতে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের নির্দেশ দেয় আদালত। নির্বাচন পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে ফিফার কার্যনির্বাহী সদস্য এবং ব্রাজিলিয়ান ফুটবলে প্রভাবশালী পরিবার সারনেই বংশের ফার্নান্দো সারনেইর হাতে। তিনি আপাতত সিবিএফের ভারপ্রাপ্ত প্রশাসক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করবেন।
এই ঘটনাগুলো সামনে আসে এমন এক সময়ে, যখন আনচেলত্তিকে ব্রাজিল দলের কোচ হিসেবে নিশ্চিত করা হয়। এমনও গুঞ্জন ছিল, রদ্রিগেজ দায়িত্বে থাকলে আনচেলত্তির নিয়োগ বিলম্বিত বা বাধাগ্রস্ত হতে পারত। এমনকি সিবিএফ সূত্র মতে, আনচেলত্তির নিয়োগের তথ্যও আগেভাগেই ফাঁস হয়ে গিয়েছিল।
এই প্রশাসনিক নাটকীয়তা ছড়িয়ে পড়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও। ফিফা কংগ্রেসে, যা অনুষ্ঠিত হয়েছে প্যারাগুয়ের আসুনসিওনে, সেখানে উপস্থিত ছিলেন ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনোসহ দক্ষিণ আমেরিকার শীর্ষ ফুটবল কর্মকর্তারা।
প্রতিনিধি দানিয়েলা দো ওয়াগুইনহো এবং সারনেই—দুজনই স্বাক্ষর জালিয়াতির বিষয়ে আদালতে অভিযোগ উত্থাপন করেন। ব্রাজিলিয়ান গণমাধ্যম গ্লোবো এসপোর্তে নিশ্চিত করেছে, আদালতে উপস্থাপিত ফরেনসিক রিপোর্টে স্বাক্ষরের অসামঞ্জস্যতা উঠে এসেছে।
এডনালদো রদ্রিগেজ অবশ্য পরিস্থিতি নিয়ে প্রকাশ্যে দুশ্চিন্তা প্রকাশ করেননি। তিনি আসুনসিওন থেকে বলেন, ‘আমি সম্পূর্ণ শান্ত। যে সঠিক কাজ করে, তার ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এটা হচ্ছে অবস্থান ও ন্যায়ের প্রতি আস্থা রাখা।’
উল্লেখযোগ্য যে, ২০২৩ সালেও একই আদালত রদ্রিগেজকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছিল, যদিও পরে সুপ্রিম কোর্ট তাকে পুনর্বহাল করে। এবার পরিস্থিতি আরও জটিল, কারণ সামনে সিবিএফে নতুন নির্বাচন।
ফুটবল মাঠের বাইরের এই নাটকীয়তা ব্রাজিলিয়ান ফুটবলের ভবিষ্যতের ওপর কতটা প্রভাব ফেলবে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে আনচেলত্তি ও তার সম্ভাব্য সহকারী কাকা—এই দুই তারকার নেতৃত্বে মাঠের পারফরম্যান্সে নতুন আশার আলো দেখছে ব্রাজিল। প্রশাসনিক অস্থিরতা না কাটলে, সেই আশাও হারিয়ে যেতে পারে ভেসে।