বিলবাওয়ে টটেনহামের কাছে ১-০ গোলে হারের পর নিশ্চিত হয়েছে—আগামী মৌসুমে ইউরোপীয় প্রতিযোগিতায় খেলতে পারবে না একসময়ের প্রবল প্রতাপশালী ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। এই পরাজয়ের ফলে আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি দল গঠনে বড় রদবদল এবং কোচ রুবেন আমোরিমের ভবিষ্যৎ নিয়ে তৈরি হয়েছে বড়সড় অনিশ্চয়তা।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগে জায়গা না পাওয়ায় ইউনাইটেডের অ্যাডিডাসের সঙ্গে ১০ বছরের ৯০০ মিলিয়ন পাউন্ডের চুক্তি থেকে বছরে ১০ মিলিয়ন পাউন্ড কম পাবে ক্লাবটি। এছাড়া প্রিমিয়ার লিগে ১৬ নম্বরে শেষ করলে পঞ্চম স্থানের তুলনায় ৩৩ মিলিয়ন পাউন্ড কম পুরস্কার অর্থ পাবে ইউনাইটেড।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগে চারটি ঘরের মাঠের ম্যাচের গড় গেট রিসিপ্ট ছিল ৪.৩ মিলিয়ন পাউন্ড করে—তা হারানো এবং ইউরোপের ম্যাচের প্রাইজমানি না পাওয়ায় সম্ভাব্য আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে কমপক্ষে ১০০ মিলিয়ন পাউন্ড।
ইতিমধ্যে দ্বিতীয় দফায় কর্মী ছাঁটাই শুরু হয়েছে—এবারের টার্গেট মূলত ফুটবল বিভাগ: স্কাউটিং, মেডিকেল ও সায়েন্স টিম।
ট্রান্সফার বাজেট: বিক্রি ছাড়া কেনা কঠিন
ক্লাবের দাবি, ট্রান্সফারের জন্য অর্থ থাকবে, তবে বাস্তবে পরিস্থিতি কঠিন। ইউনাইটেডের বর্তমান বকেয়া ট্রান্সফার ফি ২৭২ মিলিয়ন পাউন্ড, যার মধ্যে ১৫৬ মিলিয়ন দিতে হবে এই গ্রীষ্মেই।
এই বিপুল দায় এবং সাম্প্রতিক ১১৩.২ মিলিয়ন পাউন্ড লোকসান থাকায় ইউনাইটেডকে প্রথমে খেলোয়াড় বিক্রি করেই নতুন খেলোয়াড় কেনার সুযোগ তৈরি করতে হবে।
উলভসের ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড মাথ্যুস কুনহাকে ৬২.৫ মিলিয়ন পাউন্ডে কেনার পরিকল্পনা থাকলেও, সেটা বাস্তবায়নের পথ কঠিন হবে যদি বিক্রির মাধ্যমে বড় আয়ের ব্যবস্থা না করা যায়।
কে কে ছাড়তে পারে ক্লাব?
ভিক্টর লিন্ডেলফ ও ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেনের চুক্তির মেয়াদ শেষ—তাদের বিদায় নিশ্চিত। মার্কাস রাশফোর্ড জানিয়েছেন, আমোরিম কোচ থাকলে তিনি ইউনাইটেডে আর খেলবেন না। বার্সেলোনা আগ্রহ দেখালেও তাদের আর্থিক সমস্যা চুক্তি বাস্তবায়নে বাধা হতে পারে।
জ্যাডন সাঞ্চোকে যদি চেলসি ফেরত পাঠায়, তাহলে ইউনাইটেডকে ভাবতে হবে তার ভবিষ্যৎ নিয়ে। সামাজিক মাধ্যমে বিতর্কিত পোস্টের কারণে কোচের সঙ্গে সম্পর্কে টানাপোড়েন তৈরি হওয়া আলেহান্দ্রো গারনাচোকেও বিক্রি করতে পারে ক্লাব।
ক্যাসেমিরো, ম্যাগুইয়ার, লুক শ’র মতো ভারী বেতনভোগী তারকাদের ছাড়তে চাইবে ইউনাইটেড। অ্যান্টনি, হয়লুন্ড, জির্কজির মতো সাম্প্রতিক ব্যর্থ চুক্তিগুলো নিয়েও নতুন করে ভাবতে হতে পারে ক্লাব কর্তৃপক্ষকে।
কোচ আমোরিমের ভবিষ্যৎ: সমর্থন পেলেও চাপ তীব্র
বিলবাওয়ে হারের পর ক্লাব কর্তৃপক্ষ আমোরিমের প্রতি আনুষ্ঠানিক সমর্থন জানালেও বাস্তবে তার ওপর চাপ অনেক বেশি। লিগে ২৬ ম্যাচে মাত্র ৬টি জয়—ম্যান ইউনাইটেডের মতো ক্লাবের জন্য এটি বেদনাদায়ক পরিসংখ্যান।
কিছু প্রাক্তন খেলোয়াড় প্রশ্ন তুলেছেন কোচিং স্টাফের অভিজ্ঞতা নিয়ে। এমনকি ক্লাবের ভেতর থেকেও কোচের পদ্ধতি নিয়ে অসন্তুষ্টির গুঞ্জন রয়েছে। তবে আমোরিম জানিয়েছেন, যদি ক্লাব বা সমর্থকরা তাকে না চায়, তাহলে তিনি ক্ষতিপূরণ ছাড়াই পদত্যাগ করবেন।
এরপর কী?
রোববার অ্যাস্টন ভিলার বিপক্ষে শেষ লিগ ম্যাচের পর ইউনাইটেড রওনা হবে দুই ম্যাচের এশিয়া সফরে, যা থেকে আয় হবে আনুমানিক ১০ মিলিয়ন পাউন্ড। ইউরোপের বাইরে থাকা আরেক বড় ক্লাব এসি মিলানের সঙ্গে একটি প্রীতি ম্যাচের পরিকল্পনাও রয়েছে।
ইউরোপে না খেলায় আরও বেশি সময় পাওয়া যাবে অনুশীলনের জন্য—এটাই একমাত্র ইতিবাচক দিক। তবে মিডিয়া ও অভ্যন্তরীণ টানাপোড়েন আরও বেশি সামনে চলে আসার আশঙ্কাও রয়েছে।
যা-ই হোক, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের নাম আছে, আলোচনা আছে। খারাপ খেললেও খবরের শিরোনামে থাকেন তারা। এবার দেখার পালা—এই গ্রীষ্মে আসলে কতটা বদল আনতে পারে ওল্ড ট্র্যাফোর্ড।