চট্টগ্রামে টার্নিং উইকেট, তিন স্পিনার নিয়ে একাদশ সাজানো, আর সেই পুরনো ফর্মুলায় ফিরে গিয়ে জয়—হ্যাঁ, বাংলাদেশ দ্বিতীয় টেস্টে জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে ঘরের মাঠে টানা ছয় ম্যাচের হারের বৃত্ত ভেঙেছে। কিন্তু প্রশ্নটা এখন জয় নয়—প্রশ্ন, আমরা কি আসলেই এগোচ্ছি, নাকি পুরনো নিরাপত্তার বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছি?
সিরিজের প্রথম টেস্টে লজ্জাজনক হারের পর চট্টগ্রামে যে উইকেট বানানো হয়েছে, তা যেন সোজাসুজি একটা বার্তা—‘জিততেই হবে, যেভাবেই হোক’। ফলাফলও মিলেছে, কিন্তু এই জয়ের পেছনে যে পুরনো স্পিন-নির্ভর ফর্মুলা, তা নিয়ে ক্রিকেট মহলে শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের পেস আক্রমণ যে দৃঢ়তা অর্জন করছিল, তা যেন এক ম্যাচেই ধাক্কা খেল। স্পিন বান্ধব উইকেট, তিন স্পিনারের একাদশ—সবই মনে করিয়ে দিচ্ছে সেই সময়কে, যখন স্পিনই ছিল বাংলাদেশের একমাত্র অস্ত্র। সাবেক নির্বাচক হাবিবুল বাশার এরকম সিদ্ধান্তে হতাশ, ক্রিকবাজকে তিনি বলেই ফেললেন— ‘জিম্বাবুয়ের মতো দলের বিপক্ষে এরকম উইকেট বানানো মানে, আমরা এখনো মানসিকভাবে বের হতে পারিনি পুরনো ধারা থেকে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো বড় দলের বিপক্ষে স্পিন সহায়ক উইকেট বানানো স্বাভাবিক। কিন্তু জিম্বাবুয়ের মতো দলকে হারানোর জন্য যদি আবার সেই পথ বেছে নিতে হয়, তবে প্রশ্ন ওঠে—আমরা আসলেই এগোচ্ছি তো?’ একইসঙ্গে বিদেশের কন্ডিশনে আমাদের ব্যাটারদের মানিয়ে নেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘একটা হার মানেই যদি পুরনো পথে ফিরে যাই, তাহলে উন্নয়ন কোথায়?’
বাংলাদেশের সিনিয়র সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন অবশ্য এই তত্ত্ব মানতে নারাজ। তার মতে, চট্টগ্রামের গরম ও ব্যাটিং সহায়ক উইকেট বিবেচনায় নিয়েই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ‘জিম্বাবুয়েও এক অতিরিক্ত স্পিনার নিয়েই খেলেছে,’—উল্লেখ করেন তিনি। তার দাবি, জয় এসেছে ধৈর্য ও পরিকল্পনার ফসল হিসেবে, কেবল উইকেটের কারণেই নয়।
‘তাইজুল বল হাতে যেভাবে ফ্লাইটে ব্যাটারদের বিভ্রান্ত করেছে, তা কৃতিত্ব পাওয়ার যোগ্য,’—বলেছেন সালাহউদ্দিন। তিনি আরও জানান, পেসারদের প্রতি এখনও আস্থা আছে, যদিও বিপিএল ও ডিপিএল খেলার কারণে তাদের গতি কিছুটা কমে গেছে। সঠিক প্রশিক্ষণেই সেই গতি ফিরিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
এই সিরিজ জয় নিশ্চয়ই আত্মবিশ্বাস ফেরাবে বাংলাদেশকে, কিন্তু একইসঙ্গে উসকে দিয়েছে এক পুরনো প্রশ্ন—আমরা আসলেই উন্নয়নের পথে হাঁটছি, না পুরনো শেকড়েই আটকে আছি? স্পিন নির্ভরতা যদি বারবারই আশ্রয় হয়, তবে পেসারদের ভবিষ্যৎ কোথায়? সময় এসেছে, শুধু জয় নয়, ভাবারও—আমরা ক্রিকেটে কোন পথে চলছি।