এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের প্রস্তুতিতে আবারও আলোচনার কেন্দ্রে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। মিয়ানমারে অনুষ্ঠিতব্য বাছাই পর্বের আগে প্রস্তুতিমূলক সফরে আগামীকাল সকালে জর্ডানের উদ্দেশে রওনা দেবে দল। তার আগে আজ বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় ছিলেন দু’জন—সাবিনা খাতুন ও মাসুরা পারভীন। কারণ? এই সফরে তাদের জায়গা হয়নি দলে।
সাবিনা খাতুন—বাংলাদেশ নারী ফুটবলের ইতিহাসে অন্যতম উজ্জ্বল নাম। তার নেতৃত্বে দুইবার সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে দল। আর মাসুরা? রক্ষণভাগের নির্ভরতার নাম। তবু এই দুই অভিজ্ঞ ফুটবলারকে বাদ দিয়েছেন দলের বৃটিশ কোচ পিটার বাটলার।
সাংবাদিকদের প্রথম প্রশ্নই ছিল তাদের বাদ পড়া নিয়ে। বাটলারের জবাব সোজাসাপ্টা—‘সাবিনার অতীত সাফল্য নিয়ে আমার কোনো অসম্মান নেই, তবে আমি মনে করি তার সময় প্রায় শেষ। মাসুরা বর্তমানে শারীরিকভাবে পুরো ফিট নন। বাস্তবতাটুকু মানতেই হবে।’
ভুটানে খেলা নারী লিগে সাবিনা-মাসুরাদের একতরফা জয় নিয়েও প্রশ্ন তোলেন কোচ, ‘২৮-০ স্কোরলাইনের মতো ম্যাচ প্রতিদ্বন্দ্বিতা নির্দেশ করে না। সেখানে কতটা চ্যালেঞ্জ পেয়েছে, সেটা ভেবে দেখতে হবে।’ এই দুটি নাম ভবিষ্যতে দলে ফিরতে পারবেন কি না, সে ব্যাপারে পরিষ্কারভাবে কিছু জানাননি বাটলার।
তবে অনেকের মতে, সাবিনা-মাসুরাদের বাদ দেওয়া কেবল কৌশলগত সিদ্ধান্ত নয়—ব্যক্তিগত রেষারেষিও কাজ করেছে। কারণ, সাবিনা ও মাসুরা কিছুদিন আগেই কোচ বাটলারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন, যার ফলে বাফুফের মধ্যস্থতায় পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়েছিল। প্রশ্ন ছিল, বাদ পড়াটা কি কৌশলগত, নাকি ব্যক্তিগত? জবাবে কোচ বলেন, ‘আমি তথ্য ও পারফরম্যান্সের ভিত্তিতেই দল করেছি।’
কোচের দলে জায়গা হয়নি আরও কয়েকজন পরিচিত মুখের—কৃষ্ণা রানী সরকার, সানজিদা আক্তার, সুমাইয়া আক্তার, নীলা—প্রত্যেককে বাদ দেওয়ার পিছনে অবশ্য কোচের নিজস্ব ব্যাখা ছিল।
আরব আমিরাত সফরে সিনিয়ররা না থাকায় অধিনায়কত্ব পান ডিফেন্ডার আফিদা খন্দকার। এবারও তার কাঁধেই নেতৃত্বের দায়িত্ব। দলে রয়েছেন মারিয়া মান্ডা, ঋতুপর্ণা চাকমা, রুপনা চাকমা, শামসুন্নাহার জুনিয়রের মতো অভিজ্ঞরা, তবু কেন আফিদা? বাটলারের ব্যাখ্যা, ‘শুধু অভিজ্ঞতা বা পারফরম্যান্স নয়, নেতৃত্বের গুণাবলিও এখানে গুরুত্বপূর্ণ। সব দিক বিবেচনায় আমি আফিদাকেই অধিনায়ক হিসেবে চেয়েছি।’
সংবাদ সম্মেলনে দলের গঠন নিয়ে কোচ জানান, ‘গত ছয় মাসের পারফরম্যান্স, ইনজুরি রেকর্ড, খেলার শৈলী, শৃঙ্খলা এবং এমনকি সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাক্টিভিটিও আমরা বিবেচনায় নিয়েছি।’ জাতীয় দলের ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখেই ২৩ জনের দলে ৬০ শতাংশ খেলোয়াড়ই নেওয়া হয়েছে অনূর্ধ্ব-২০ দল থেকে।
তবে র্যাংকিংয়ের দিক থেকে জর্ডান ও ইন্দোনেশিয়ার চেয়ে অনেক পিছিয়ে বাংলাদেশ। তার ওপর ঘাটতি অনুশীলনের সুবিধাতেও। কোচ এ নিয়ে বলেন, ‘মাঠ-সংকটের কারণে আমরা পুরোপুরি প্রস্তুতি নিতে পারিনি। তবে যতটুকু প্রস্তুতি হয়েছে, সেটাই কাজে লাগিয়ে সেরাটা দিতে চাই।’
নারী উইং প্রধান মাহফুজা আক্তার কিরণের ভাষায়, ‘দল নির্বাচনের পূর্ণ স্বাধীনতা কোচের। বাফুফে এতে কখনো হস্তক্ষেপ করে না। আমরা পেশাদার মানসিকতা নিয়েই কাজ করি।’
বাংলাদেশ নারী দল ৩১ মে খেলবে ইন্দোনেশিয়ার বিপক্ষে, এবং ৩ জুন মুখোমুখি হবে স্বাগতিক জর্ডানের।