Homeখেলাধুলাপ্রয়াত মেয়ের প্রতি ভালোবাসার টানে শিরোপার স্বপ্ন এনরিকের

প্রয়াত মেয়ের প্রতি ভালোবাসার টানে শিরোপার স্বপ্ন এনরিকের


এই গল্পটা আসলে ফুটবলের নয়। আসলে, এটুকুই বলা ভুল। এটা ফুটবলের গল্প নয়—তবু ফুটবল এখানে লেপ্টে আছে চোখের জলে, হৃদয়ের প্রতিটা ভাঁজে।

লুইস এনরিকেকে আপনারা চেনেন—বার্সেলোনার ট্রেবল জয়ী কোচ, স্পেনের সাবেক জাতীয় কোচ, এখন প্যারিস সেন্ট জার্মেইয়ের (পিএসজি) সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে। তবে আজ শনিবার (৩১ মে) যখন তিনি ইন্টার মিলানের বিপক্ষে দ্বিতীয়বারের মতো ইউরোপ সেরার মঞ্চে হাঁটবেন, তার সঙ্গে থাকবেন আরও একজন—একজন যিনি শারীরিকভাবে হয়তো নেই, কিন্তু আছেন হৃদয়ের প্রতিটি ছায়ায়। তার মেয়ে, জানা।

২০১৫ সালের বার্লিন ফাইনাল। বার্সেলোনা চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছে। মাঠে বিজয়ের পতাকা হাতে দৌড়াচ্ছেন একজন মানুষ, তার কাঁধে এক ছোট্ট মেয়ে। পতাকার আকাশে লাল, নীল আর হলুদের ঝলকানি। আর তাদের মুখে অনাবিল আনন্দের ছাপ। সে মেয়ের নাম ছিল জানা।

জানা এনরিকের কনিষ্ঠ কন্যা। জন্ম ২০০৯ সালে। নতুন নতুন শব্দ শেখা, বাবার দলের জয়গানে উল্লাস, মাঠের সবুজ ঘাসে গড়াগড়ি… সবই ছিল জানার শৈশবের অংশ। কিন্তু ২০১৯ সালের আগস্টে মাত্র ৯ বছর বয়সে ক্যান্সারে মারা যায় জানা।

“আমি ভাগ্যবান”—ব্যথাকে শক্তিতে রূপান্তরের বিরল উদাহরণ

জানার ধরা পড়েছিল হাঁড়ের ক্যানসারে (Osteosarcoma)। তখন এনরিকে ছিলেন স্পেন জাতীয় দলের কোচ। মেয়ে অসুস্থ শুনেই সবকিছু ছেড়ে ফিরে এসেছিলেন পরিবারে।

শেষ ৫ মাস জানার কেটেছিল হাসপাতালের বিছানায়। শেষ মুহূর্তগুলো তিনি কাটিয়েছিলেন পরিবারের সবার সঙ্গে, বাড়ির আশ্রয়ে।

একজন বাবা তার মেয়েকে হারানোর পর সাধারণত যে ক্ষোভ, হতাশা আর ভেঙে পড়া দেখা যায়, এনরিকেতে তা নেই। বরং স্পেন ও ফ্রান্সে সম্প্রতি প্রচারিত ডকুমেন্টারি “No Tenéis Ni P* Idea”(তোমার কোনো ধারণা নেই)-তে এনরিকে বলেন—

জানা আমার সঙ্গে মাত্র ৯ বছর ছিল। কিন্তু সেই ৯ বছর ছিল অসাধারণ। আমি নিজেকে দুর্ভাগা নয়, বরং অত্যন্ত ভাগ্যবান মনে করি।

জানার বন্ধুরা যখন বড় হয়ে ওঠে, এনরিকে দাঁড়িয়ে থাকেন তাদের পাশে

জানার নামে গড়া হয়েছে Fundación Xana নামের একটি চ্যারিটি। তারই এক অনুষ্ঠানে দেখা যায়—কিছু কিশোরী আর তাদের মায়েদের সঙ্গে হাস্যোজ্জ্বল এনরিকে। পরে জানা যায়, এই মেয়েরা জানার স্কুলের বন্ধু, যারা এখন বয়সে বড় হয়ে গেছে।
তাদের মাঝে দাঁড়িয়ে এনরিকে যেন ফিরে পান জানাকে—হয়তো অন্য রূপে, অন্য আলোয়।

এখন ফুটবলে ফিরে আসা, কিন্তু জানা সবখানে


নরিকে বলেন—‘জানা এখনো আমাদের সঙ্গেই আছেন। তিনি আমাদের পরিবারকে পথ দেখায়। তার শক্তি আমাদের মাঝেই আছে।’

ডকুমেন্টারিতেও উঠে এসেছে সেই অনুভব—একজন বাবার অদৃশ্য অথচ জ্বলন্ত সঙ্গী হিসেবে জানার উপস্থিতি।
এনরিকে বলেন,

আমি পিএসজির হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগ জিততে চাই। বার্সেলোনার জয়ের পর জানাকে নিয়ে মাঠে পতাকা উড়িয়েছিলাম। এবার চাই সেই স্মৃতি আবার ফিরিয়ে আনতে—পিএসজির পতাকা হাতে, জানাকে সঙ্গে নিয়ে… যদিও এবার সে শুধু আধ্যাত্মিকভাবে আমার পাশে থাকবে।

এটা শুধু আরেকটি ম্যাচ নয়

শনিবার রাতে ইন্টার মিলানের বিপক্ষে ফাইনাল শুধু আরেকটি শিরোপা লড়াই নয়, এটা এক বাবার জন্য নিজের কষ্টকে শক্তিতে বদলে দেওয়ার লড়াই।
এটা তার জন্য, যিনি জীবনের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অধ্যায়ের মাঝেও বলতে পারেন, ‘আমি সৌভাগ্যবান, কারণ আমি জানাকে পেয়েছিলাম।’

এই গল্পটা আসলে ফুটবলের নয়। তবে ফুটবলই দিয়েছে সেই মঞ্চ, যেখানে একজন মানুষ ব্যথাকে ভালোবাসায়, হারে শক্তিতে আর মৃত্যুকে স্মৃতিতে রূপান্তর করেছেন।

এখনো প্রতিটি ম্যাচে লুইস এনরিকের সঙ্গে মাঠে নামেন এক অদৃশ্য যোদ্ধা—জানা, সেই তারাটি, যে আজীবন তার বাবাকে পথ দেখাবে।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত