মাত্র ৯ মাস আগেই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন ফারুক আহমেদ। কিন্তু বিসিবিরি আট পরিচালক তার বিরুদ্ধে অনাস্থা জানালে ও ক্রীড়া উপদেষ্টা তাকে ‘নন-পারফরমার’ আখ্যা দিলে বদলে যায় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নেতৃত্ব। তার জায়গায় সভাপতি হন সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুল। দেশের একটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে ফারুক আহমেদ দাবি করেছেন, তাকে সরানোর পেছনে রয়েছে আগের ‘ফ্যাসিস্ট’ বোর্ডের দোসরদের চক্রান্ত।
সাক্ষাৎকারে ফারুক বলেন তিনি এসেছিলেন ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর। সরকার পরিবর্তনের মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে তাকে বিসিবির সভাপতি করা হয়। তার দাবি তিনি কারও কাছে সুপারিশ করিনি। কিন্তু তিনি বোর্ডে এসে দেখেন আগের পরিচালকদের অনেকেই তাকে অসহযোগিতা করছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ আগের ফ্যাসিস্ট বোর্ডের ঘনিষ্ঠ। সেই দোসরদের মাঝেই তাকে বসানো হয়েছে বলে আক্ষেপ তার।
ফারুক অভিযোগ করেন, বোর্ডের গুরুত্বপূর্ণ পরিচালক ইসমাইল হায়দার মল্লিকসহ আগের বোর্ডের প্রভাবশালীরা এখনো প্রভাব বিস্তার করছেন। আর এই চক্রের মধ্যেই বিসিবির বর্তমান অনেক পরিচালকও আছেন, যারা তাকে শুরু থেকেই মেনে নিতে পারেননি।
ফারুকের দাবি, বিসিবি নির্বাচনের মাত্র তিন-চার মাস আগে হঠাৎ করে তাকে অপসারণ কোনো স্বাভাবিক ঘটনা নয়। বরং এটি একটি পূর্ব পরিকল্পিত পদক্ষেপ। তিনি বলেন, ‘আমি কিছুই বুঝতে পারিনি। আমিনুল ইসলামের সঙ্গে সরকারের যোগাযোগও নাকি বেশ কিছুদিন ধরেই চলছিল। তাহলে বোঝাই যাচ্ছে, আমাকে সরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া আগেই শুরু হয়েছিল।’
তবে আমিনুল ইসলামের যোগ্যতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলেননি ফারুক। বরং জানান, তাদের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক রয়েছে এবং তিনি আমিনুলকে সম্মান করেন। কিন্তু যেভাবে তাকে সরানো হয়েছে, তা ছিল ‘ডিসরেসপেক্টফুল’।
ফারুক জানান, বোর্ড পরিচালকদের বেশির ভাগই তাকে কোনো সহযোগিতা করেননি। ‘আমি আর নাজমুল আবেদীন ফাহিম ছাড়া কেউ কাজ করতে চায়নি। ২৩টি কমিটির দায়িত্ব আমরা দুজনে মিলে চালাতে পারি না,’—বলেন তিনি।
তিনি আরও দাবি করেন, ফাইন্যান্স, লজিস্টিকস, গেম ডেভেলপমেন্টসহ কিছু কমিটিতে তিনি কিছু পরিচালকদের সুযোগ দিয়েছিলেন, কিন্তু তার বিশ্বাসের প্রতিদান তাঁরা দেননি।
বিপিএল আয়োজন নিয়েও তাকে একা সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে বলে জানান ফারুক। ‘অনেক দলের স্পনসর ছিল না, বকেয়া টাকা ছিল। কয়েকটি দল বাদ দিতে বাধ্য হয়েছি। নতুন দল নেওয়ার ক্ষেত্রেও সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিই, অথচ পরে আমাকে একক সিদ্ধান্তদাতা বলা হয়।’
তিনি বলেন, ‘তামিম ইকবালকে বোর্ডে আনার বিষয়ে অনিশ্চয়তা, ক্রিকেট অপারেশনসের দায়িত্ব নিয়ে তামিম-ফাহিমের মধ্যে বিরোধ, এসবও সময় ক্ষেপণ করেছে।’
মাঠের খারাপ পারফরম্যান্স, তরুণদের সুযোগ না দেওয়া, খেলোয়াড়দের বোনাস নিয়ে অভিযোগ—এসব তুলে ধরা হলেও ফারুক বলেন, ‘এগুলো কোনো সত্যিকারের কারণ নয়। উপদেষ্টা নিজেই বলেছেন, আমার বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতির অভিযোগ তিনি বিশ্বাস করেন না।’
অপসারণের প্রক্রিয়া নিয়েও ফারুক প্রশ্ন তোলেন। ‘বুধবার জানলাম আমাকে রাখা হবে না। বৃহস্পতিবার রাত ১১টায় কাউন্সিলরশিপ বাতিল, ১২টায় নতুন কাউন্সিলর, শুক্রবার দুপুরে নতুন সভাপতি! এর মধ্যে আমাকে কারণ দর্শানোর নোটিশও দেওয়া হয়নি। আমি নির্বাচিত সভাপতি। পদত্যাগ না করলে সরানো সম্ভব নয়। কিন্তু এমনই এক পরিকল্পিত অপসারণ হলো, যা বিসিবির ইতিহাসে নজিরবিহীন।’
ফারুক আহমেদের অভিযোগের বিপরীতে অবশ্য তিনজন বিসিবি পরিচালক দাবি করেছেন, তার বক্তব্য সত্য নয়। তবে সদ্য বিদায়ী সভাপতির এমন বিস্ফোরক বক্তব্যে আবারও আলোচনায় উঠে এসেছে বিসিবির অভ্যন্তরীণ রাজনীতি।