দীর্ঘ ক্লাব ক্যারিয়ারের সফল পর্ব শেষে ব্রাজিল জাতীয় দলের হাল ধরতে যাচ্ছেন ইতালিয়ান কিংবদন্তি কোচ কার্লো আনচেলত্তি। রিয়াল মাদ্রিদের কোচ হিসেবে শেষ মৌসুম পরিচালনার পর আগামী সপ্তাহে সেলেসাওদের ডাগআউটে দেখা যাবে এই ইতালিয়ান কিংবদন্তিকে। তবে ব্রাজিলের দায়িত্ব নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তার সামনে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে এক কঠিন এবং ঐতিহাসিক চ্যালেঞ্জ—একটি এমন বাধা যা ফুটবল ইতিহাসে কেউই পেরোতে পারেনি: বিশ্বকাপ জয়ী প্রথম বিদেশি কোচ হওয়ার ‘অভিশাপ’ ভাঙা।
বিশ্বকাপের ইতিহাসের দিকে তাকালে একটি বিষয় পরিষ্কার: এখন পর্যন্ত কোনো দলই বিদেশি কোচের অধীনে বিশ্বকাপ জিততে পারেনি। আর্জেন্টিনা, ফ্রান্স, জার্মানি, স্পেন, ইতালি—সবাই ঘরোয়া কোচের অধীনেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।
- স্কালোনি (আর্জেন্টিনা)
- দেশঁ (ফ্রান্স)
- ইয়োয়াখিম লো (জার্মানি)
- দেল বস্কে (স্পেন)
- লিপ্পি (ইতালি)
এই ধারাবাহিকতা একটাই প্রমাণ করে, বিশ্বকাপ জয়ের মঞ্চে ‘নিজের দেশের কোচ’ যেন এক অপরিহার্য শর্ত!
বিশ্বকাপে বিদেশি কোচের নেতৃত্বে শিরোপা ছোঁয়ার খুব কাছাকাছি গিয়েছিলেন মাত্র দু’জন:
- জর্জ রেইনর (ইংল্যান্ড) – ১৯৫৮ সালে সুইডেনের কোচ হিসেবে ফাইনালে পৌঁছান। তবে মাত্র ১৭ বছরের এক তরুণ পেলের সামনে তিনি পেরে ওঠেননি।
- এর্নস্ট হ্যাপেল (অস্ট্রিয়া) – ১৯৭৮ সালে নেদারল্যান্ডসের কোচ ছিলেন। কিন্তু ফাইনালে কেম্পেস ঝড়ের কাছে তার দল ভেঙে পড়ে।
ব্রাজিল জাতীয় দলের ইতিহাসে আনচেলত্তি হচ্ছেন মাত্র দ্বিতীয় বিদেশি কোচ যিনি আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব নিচ্ছেন। ১৯৫২ সালে উরুগুইয়ান কোচ রামোন প্লাতেরো প্রথমবার কনফেডারেশন কাপের সময় ব্রাজিলকে পরিচালনা করেন। এরপর শুধুমাত্র ফ্রেন্ডলি ম্যাচে পর্তুগিজ জোরেকা ও আর্জেন্টাইন ফিলপো নুনিয়েজ সাময়িকভাবে কোচিং করিয়েছিলেন।
কিন্তু আনচেলত্তির চ্যালেঞ্জ আরও বড়—তিনি এসেছেন শুধুই ‘সাজিয়ে রাখার’ জন্য নয়, বরং ইতিহাস গড়ার জন্য। তার দলের প্রথম ম্যাচ ৫ জুন, ইকুয়েডরের বিপক্ষে, বিশ্বকাপ কোয়ালিফায়ারে। এরপর ১০ জুন প্যারাগুয়ের মুখোমুখি হবে ব্রাজিল।
ব্রাজিলের ফুটবলে ইতালির ছোঁয়া নতুন নয়। কিন্তু এই ছোঁয়া কি ইতিহাস বদলাবে? আনচেলত্তির অভিজ্ঞতা, শিরোপা জয়ের রেকর্ড, খেলোয়াড়দের ওপর নিয়ন্ত্রণ ও প্রভাব—সবই রয়েছে। তবে বিদেশি পরিচয়টাই কি তাকে আটকে দেবে, নাকি তিনিই হবেন সেই প্রথম ব্যক্তি যিনি ৯৪ বছরের পুরনো এই অভিশাপ থেকে মুক্তি এনে দেবেন সেলেসাওকে? উত্তর দেবে সময়, এবং মাঠে ঘাম ঝরানো প্রতিটি মিনিট।