জাতীয় দলের গোলপোস্টের নিচে যিনি ছিলেন নির্ভরতার প্রতীক, সেই মিতুল মারমা গতকালের ম্যাচ খেলছেন নিজের জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময় পার করে। একদিকে দেশের হয়ে ম্যাচ, অন্যদিকে বড় ভাইয়ের মৃত্যু—দুটি বিপরীতধর্মী বাস্তবতার ভার নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন তিনি।
৪ জুন ভুটানের বিপক্ষে জয় পাওয়ার পর যখন দলের মধ্যে স্বস্তির বাতাস বইছে, তখনই মিতুলের জীবনে নামে শোকের ছায়া। ৬ জুন সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ম্যাচের চার দিন আগেই বড় ভাইয়ের মৃত্যুসংবাদ পান রাঙামাটির ছেলে মিতুল। তবে এই শোকেও দলের প্রতি তার দায়িত্ববোধের কমতি ছিল না। জাতীয় দলের ক্যাম্প না ছেড়ে থেকে গেছেন দলের সঙ্গে, চালিয়ে গেছেন অনুশীলন।
ভাই হারানোর কষ্ট সয়ে খেলা শেষে আজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক আবেগঘন বার্তায় মিতুল লিখেছেন, ‘আমার জীবনের সবচেয়ে দুঃখজনক মুহূর্তগুলো আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। বড় ভাইকে হারানোর পর সত্যিই হৃদয় ভেঙে গিয়েছিল। তবু দেশের হয়ে খেলতে চেয়েছি, মনোযোগ দিতে চেয়েছি পারফরম্যান্সে। চেষ্টা করেছি, কিন্তু পারিনি। এজন্য আমি দুঃখিত এবং সবার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।’
সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ম্যাচে বাংলাদেশ ২-১ গোলে হেরেছে। ম্যাচে দুটি গোল হজম করলেও, দুটি নিশ্চিত গোল ঠেকিয়ে দেন মিতুল। তবে ম্যাচের পর নিজের ভুলের দায় স্বীকার করে নেন অকপটে।
জাতীয় দলের কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা তার ওপর আস্থা রেখেছিলেন যৌক্তিক কারণেই। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে আবাহনীর হয়ে ১৫ ম্যাচে ৯টি ক্লিন শিট রেখে নিজেকে প্রমাণ করেছেন আগেই। সেখান থেকেই জাতীয় দলে জায়গা এবং গোলপোস্টের দায়িত্ব পান মিতুল। কিন্তু ব্যক্তিগত শোক আর ম্যাচ হারার কষ্টে ভেঙে পড়েননি তিনি, বরং প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে জানান দিয়েছেন—এই ব্যর্থতা তাঁকে আরও দৃঢ় করবে।
আগামী অক্টোবরে এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে বাংলাদেশের দুটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ রয়েছে হংকংয়ের বিপক্ষে। ৯ অক্টোবর ঢাকায় এবং ১৪ অক্টোবর হংকংয়ের মাটিতে হবে ম্যাচ দুটি। সেই ম্যাচগুলিতে সুযোগ পেলে নতুন উদ্যমে মাঠে ফিরতে চান মিতুল। ‘বিশ্বাস রাখুন, আমি আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসব,’—ফেসবুক পোস্টের শেষে এমনটাই লিখেছেন আত্মবিশ্বাসী এই তরুণ।
ভাইয়ের শোক, ম্যাচ হারার কষ্ট, আর নিজের দায়বোধ—সব মিলিয়ে এক ভারী বাস্তবতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন মিতুল মারমা। তবু যেভাবে তিনি মাঠে দাঁড়িয়েছেন, সেটাই বলে দেয়—বাংলাদেশ দলের ভবিষ্যৎ গোলপোস্ট অনেকটাই নিরাপদ হাতে।