উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমিফাইনালে ইন্টার মিলানের বিপক্ষে বার্সেলোনার ৩-৩ গোলে ড্র হওয়া ম্যাচে আলো কেড়ে নিলেন এক কিশোর—যার বয়স এখনো ১৮ পেরোয়নি, কিন্তু পারফরম্যান্সে যেন শত যুদ্ধের সৈনিক। বলা হচ্ছে বার্সার তরুণ সেনসেশন লামিন ইয়ামালের কথা।
খেলা শুরু হতেই প্রথম রেকর্ড!
ম্যাচের প্রথম বাঁশিতেই ইতিহাস লিখলেন ইয়ামাল। ১৭ বছর ২৯১ দিন বয়সে বার্সেলোনার ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সে ১০০ ম্যাচ খেলার নজির গড়লেন। আগের রেকর্ডটি ছিল তার সতীর্থ গাভির, যার বয়স ছিল ১৯ বছর ২৯ দিন।
এরপর শুরু ‘লামিন শো’
ইন্টার ম্যাচে বার্সা যখন মাত্র ২২ মিনিটের ব্যবধানে ২-০ গোলে পিছিয়ে, তখনই এগিয়ে এলেন ইয়ামাল। ২৪ মিনিটে অবিশ্বাস্য এক একক প্রচেষ্টায় গোল করে দলকে ম্যাচে ফেরালেন। সেই গোলই তাকে বানিয়ে দিল চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমিফাইনালের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতা!
২০১৭ সালে কিলিয়ান এমবাপ্পে এই রেকর্ড করেছিলেন ১৮ বছর ১৪০ দিন বয়সে। ইয়ামাল তা ভেঙে দিলেন আরও এক বছর আগেই!
‘এই ছেলে অসম্ভব!’ — হলান্ডের রিয়াকশন
ম্যানচেস্টার সিটির তারকা আর্লিং হলান্ড ইয়ামালের গোল দেখে স্ন্যাপচ্যাটে লিখেছেন,
“This guy is incredible.”
এমন প্রতিভা দেখে ইন্টার ডিফেন্ডার আলেসান্দ্রো বাস্তোনিও বললেন, ‘সে হয়তো এখন বিশ্বের সেরা উইঙ্গার। তাকে আটকাতে আমাদের দু-তিনজন লাগছে!’
মেসির চেয়ে এগিয়ে, রেকর্ডে রেকর্ড ছুঁয়ে চলেছেন ইয়ামাল
বয়স ১৭ হলেও, ইতোমধ্যেই ইয়ামাল খেলেছেন ১১৯টি সিনিয়র ম্যাচ—ক্লাব ও দেশের হয়ে। লিওনেল মেসি যখন একই বয়সে ছিলেন, তখন খেলেছিলেন মাত্র ৭টি! ইয়ামাল এখন পর্যন্ত করেছেন ১৫টি গোল এবং ২৪টি অ্যাসিস্ট।
চ্যাম্পিয়নস লিগ, লা লিগা ও কোপা দেল রে জিতলে হয়ে যাবেন ইতিহাসের সবচেয়ে কম বয়সী ট্রেবল জয়ী। বার্সা ইতোমধ্যেই কোপা দেল রে জিতেছে, লা লিগায় ৪ পয়েন্টে এগিয়ে এবং চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে ওঠার সুযোগ এখনো আছে।
বিশ্বমঞ্চে উজ্জ্বল, দেশকেও দিয়েছেন সাফল্য
২০২৩ সালে ১৬ বছর বয়সে স্পেনের হয়ে আন্তর্জাতিক অভিষেক—এরপর ১৯ ম্যাচে ৪ গোল। জাতীয় দলের জার্সিতেও যেভাবে নিজেকে মেলে ধরছেন, তাতে করে বিশ্বকাপে তার প্রভাব আরও বড় কিছু হতে পারে।
নতুন ‘মেসি’?
টকস্পোর্টসের স্কট মিন্টো বলেই ফেললেন, ‘লামিন ইয়ামাল এমন খেলোয়াড়দের খারাপ দেখাচ্ছে, যারা নিজেরাই বিশ্বমানের। আমি মেসির কথা বলতে চাই না, কিন্তু ওকে দেখলে মনে পড়ে যায় তাঁকেই!’
সামনের কী অপেক্ষা করছে?
এখনো ইয়ামালের ১৮ বছরে পা রাখতে বাকি আড়াই মাস। এরই মধ্যে যে অর্জনগুলো তিনি ছুঁয়েছেন, তা এককথায় অভাবনীয়। ইউরোপ, বিশ্ব—সব মঞ্চেই তিনি এখন আলোচনার কেন্দ্রে।
আর বার্সেলোনার সমর্থকদের চোখে, তারা হয়তো আরেকটি স্বপ্ন দেখছেন—একটা যুগ শেষ হয়ে আরেকটি শুরু হওয়ার।