Homeজাতীয়আইএমএফ অসন্তুষ্ট হলেও কৃষিতে ভর্তুকি কমবে না

আইএমএফ অসন্তুষ্ট হলেও কৃষিতে ভর্তুকি কমবে না


আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত থাকলেও আগামী বাজেটে কৃষিতে ভর্তুকি কমছে না। সরকার মনে করে, ভর্তুকি দেওয়ার কারণে পণ্যের দাম কিছুটা কমছে। এর সুফল পাচ্ছে দেশের মানুষ। এখন সবচেয়ে বেশি ভর্তুকি দিতে হচ্ছে এলএনজি, পেট্রোল ও ডিজেলে। এ খাতের ভর্তুকির পরিমাণ নির্ভর করছে আন্তর্জাতিক বাজারের মূল্যের ওপর। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ভর্তুকি কমানোর প্রক্রিয়া হিসেবে ইতোমধ্যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়কে ‘সিস্টেম লস’ ও বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় কমাতে বলা হয়েছে। বিদেশ থেকে এলএনজি (লিকুফাইড ন্যাচারাল গ্যাস) বেশি মূল্যে কিনে কম মূল্যে বিক্রি করছে সরকার। সরকার মনে করে, এসব খাতে সব সময় ভর্তুকি দেওয়া যাবে না। এলএনজিতে ভর্তুকি কমাতে বলা হয়েছে। আসন্ন বাজেটে বকেয়া ভর্তুকি পরিশোধ করার জন্য বরাদ্দ রাখা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, কৃষিতে ভর্তুকি দিতে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে ২৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। তবে আগামী বাজেটের আকার বাড়বে না জানিয়ে এ বাবদ চলতি অর্থবছরের সমান ১৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিতে চায় অর্থ মন্ত্রণালয়। কৃষি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ভর্তুকিতে বরাদ্দ না বাড়ালে তারা বিপাকে পড়বে। কারণ, ইতোমধ্যে সুদসহ ভর্তুকির বকেয়া অর্থ দাবি করছে ঠিকাদারেরা। ভর্তুকিতে বরাদ্দ বাড়াতে তাই দেনদরবার করছে কৃষি মন্ত্রণালয়।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এ বছর ধার করে বড় বড় মেগা প্রকল্প করা হবে না। ব্যাংক থেকে ধার করে, নতুন টাকা ছাপিয়ে বাজেট বাস্তবায়ন করা হবে না। এ পর্যন্ত রাজস্ব আদায় গতবারের (২০২৪) তুলনায় ২ শতাংশ বেশি হয়েছে। এটিকে খুব হতাশাব্যঞ্জক নয় বলেও মনে করে সরকার তথা অর্থ মন্ত্রণালয়। সূত্র জানিয়েছে, আকার কমিয়ে মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরার চেষ্টা থাকবে বাংলাদেশের আসছে অর্থবছরের বাজেটে। ব্যয় কমাতেই বড় আকারের প্রকল্প বাদ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে সরকার। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে অটোমেশন নিশ্চিত করার জন্য তথ্য প্রযুক্তির ওপরে গুরুত্ব দেওয়া হবে বলেও জানা গেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, আগামী অর্থবছরের (২০২৫-২৬) বাজেট প্রথমবারের মতো দিতে যাচ্ছেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। এটি অন্তর্বর্তী সরকারেরও প্রথম বাজেট। বাস্তবমুখী ও জনকল্যাণমূলক একটি বাজেট দেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ। আসন্ন বাজেটে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য মহার্ঘ ভাতার ঘোষণা থাকবে। তবে রেশন ও সচিবালয় ভাতার মতো সব ভাতা দেওয়া হবে না।

সূত্র জানিয়েছে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের এটি হবে প্রথম বাজেট। আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটের আকার হতে পারে সাত লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। টেলিভিশনের পর্দায় অর্থ উপদেষ্টা বাজেট ঘোষণা করবেন আগামী সোমবার (২ জুন)। প্রতি অর্থবছরে জুন মাসের প্রথম বৃহস্পতিবারকে বাজেট ঘোষণার জন্য বেছে নেওয়া হয়। এবারই এর ব্যতিক্রম হচ্ছে। তবে বাজেট ঘোষণার পরদিন রেওয়াজ অনুযায়ী অন্য উপদেষ্টাদের সঙ্গে নিয়ে বাজেট-উত্তর সংবাদ সম্মেলন করবেন অর্থ উপদেষ্টা। পরে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে বাজেট পাস হবে, যা ১ জুলাই থেকে কার্যকর করা হবে।

উল্লেখ্য, নির্বাচিত সরকারের ক্ষেত্রে জাতীয় সংসদে বাজেট প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী। এক্ষেত্রে সংসদ না থাকায় অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বাজেট উপস্থাপন করবেন টেলিভিশনের পর্দায়। রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে এ বাজেট ঘোষণা করা হবে৷ সর্বশেষ ২০০৭-০৮ সালে টেলিভিশনে ভাষণের মাধ্যমে দুটি বাজেট ঘোষণা করেছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম।

জানা গেছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মতো আগামী অর্থবছরেও বাজেট ঘাটতি মোট দেশজ উৎপাদনের পাঁচ শতাংশের নিচে রাখার কথা ভাবা হচ্ছে। বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বলছে, চলতি অর্থবছরের জিডিপির প্রবৃদ্ধি পাঁচ শতাংশের নিচে থাকবে। তবে সরকার আগামী অর্থবছরের জিডিপির প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরেছে পাঁচ দশমিক পাঁচ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য কিছুটা কমিয়ে এরই মধ্যে পাঁচ দশমিক ২৫ শতাংশ করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন জানিয়েছেন, আইএমএফ-এর শর্ত থাকলেও কৃষিতে ভর্তুকি কমানো হবে না। ভর্তুকি দেওয়ার কারণে পণ্যের দাম কিছুটা কমছে। আমি বলবো, এরপরও কৃষক উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না। এখন সবচেয়ে বেশি ভর্তুকি দিতে হচ্ছে এলএনজি, পেট্রোল ও ডিজেলে। এ খাতের ভর্তুকির পরিমাণ নির্ভর করছে আন্তর্জাতিক বাজারের মূল্যের ওপর। আগামী দিনগুলোয় ভর্তুকি কমানোর প্রক্রিয়া হিসেবে ইতোমধ্যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়কে ‘সিস্টেম লস’ কমাতে বলেছি। এছাড়া বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় কমাতে বলা হয়েছে। কারণ, বিদেশ থেকে এলএনজি (লিকুফাইড ন্যাচারাল গ্যাস) বেশি মূল্যে কিনে কম মূল্যে বিক্রি করছে সরকার। আমার মতে, এসব খাতে সব সময় ভর্তুকি দেওয়া যাবে না। এলএনজি ভর্তুকি কমাতে বলেছি। আসন্ন বাজেটে বকেয়া ভর্তুকি পরিশোধ করা হবে। এরপর পর্যায়ক্রমে তা কমিয়ে আনা হবে।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত