Homeজাতীয়‘আমরা সক্রেটিস পেয়েছি কিন্তু প্লেটো পাইনি’

‘আমরা সক্রেটিস পেয়েছি কিন্তু প্লেটো পাইনি’

[ad_1]

আমরা সক্রেটিস (অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক) পেয়েছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে প্লেটো পাইনি; যিনি পরবর্তী প্রজন্মের কাছে সক্রেটিসের কথা পৌঁছাবেন।

জ্ঞানতাপসের ২৫তম মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে এই খেদোক্তি শোনা গেল বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহানের কণ্ঠে। দুই দিনের স্মরণানুষ্ঠানের প্রথম দিন গতকাল শুক্রবারের পর্বের সভাপতি ছিলেন তিনিই। জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক ফাউন্ডেশন রাজধানীর ধানমন্ডিতে বেঙ্গল শিল্পালয়ে গতকাল বিকেলে এর আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানের সভাপতি অধ্যাপক রেহমান সোবহান বিশিষ্ট এই চিন্তক ও প্রাচ্যবিদের স্মৃতি ধরে রাখার ওপর জোর দিয়ে বলেন, ‘আমরা স্যারকে স্মরণ করছি এমন সময়ে, যখন আমাদেরও চলে যাওয়ার সময় হয়েছে। ২৫ বছর হয়ে গেছে, স্যার চলে গেছেন। কিন্তু যাঁরা তাঁর সঙ্গ পেয়েছেন, তাঁদের স্মৃতিতে তিনি এখনো কতই-না জীবন্ত!’

অনুষ্ঠান শুরু হয় অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাককে নিয়ে নির্মিত একটি তথ্যচিত্র দিয়ে। এরপর বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের শিল্পীরা পরিবেশন করেন উচ্চাঙ্গসংগীতের বিভিন্ন রাগে রচিত বন্দিশ। তারপর শুরু হয় আলোচনা। আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গ পাওয়া বিশিষ্টজনেরা স্মৃতিচারণা করেন তাঁকে নিয়ে।

বর্ষীয়ান প্রাবন্ধিক, লেখক বদরুদ্দীন উমর বলেন, ‘আমরা পশ্চিম বাংলার লোক। বর্ধমান থেকে এসেছিলাম। আমরা যখন ঢাকায় আসি, তিনি বিলেতে (ইংল্যান্ডে) ছিলেন। তারপরে তিনি আসার পরে পরিচয় হলো। প্রথম থেকেই তিনি আমাকে স্নেহ করতেন। সেই সময় থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত অর্ধশতাব্দী তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক। তাঁর স্নেহ ছিল প্রকৃতিগত। তাঁর স্নেহ ছিল সবার জন্য সমান।’

স্মৃতিচারণায় বদরুদ্দীন উমর আরও বলেন, ‘দীর্ঘদিন পরিচয় থাকলেও ঘনিষ্ঠ হয় না। কিন্তু কেউ কেউ আছেন, প্রথম পরিচয় থেকেই ঘনিষ্ঠ হয়ে যান। স্যার ছিলেন তেমনই। তাঁর কাছ থেকে আমরা যে শিক্ষা পেয়েছি, সেটা তাঁর লেখা থেকে পাইনি। তাঁর কথাবার্তা থেকে পেয়েছি। অনেকে বলেন, রাজ্জাক সাহেবের কী আছে? কিছু লেখেননি। কিন্তু আমরা যারা তাঁর সান্নিধ্য পেয়েছি, তারা জানি তাঁর কী শিক্ষা পেয়েছি। আমি বলি, তিনি আমাদের সক্রেটিস। সক্রেটিস কিছু লিখে যাননি। বাজারে সবার সাথে কথা বলতেন। স্যারও তেমন ছিলেন।’

বদরুদ্দীন উমর আরও বলেন, তিনি রাজশাহী থেকেই ভাষা আন্দোলন নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন। তখন এ ব্যাপারে অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের পরামর্শ নেন। অধ্যাপক রাজ্জাক তাঁকে বলেছিলেন, ফেব্রুয়ারির ২০ তারিখ থেকে প্রতিদিনকেই একটা অধ্যায় করে লিখতে।

বদরুদ্দীন উমর বলেন, ‘স্যার বইটার ব্যাপারে উৎসাহ দিয়েছিলেন। তাঁর যদিও কোনো লেখা ছিল না। কিন্তু দেশের বাইরে খ্যাতি ছিল। বাইরের বিখ্যাত লোকেরা এসে স্যারের সঙ্গে দেখা করতেন। আমাদের সঙ্গেও স্যার তাঁদের পরিচয় করিয়ে দিতেন। তাঁর নিজের কোনো লেখা নেই, এটা দুঃখের ব্যাপার। তাঁর জীবনীও লেখা হয়নি। তাঁর সান্নিধ্য আমরা যারা পেয়েছি, তাদেরও যাওয়ার সময় হয়েছে। স্যারকে নতুনদের কাছে তুলে ধরার কাজ করতে হবে।’

লেখক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মফিদুল হক বলেন, ‘স্যারের ব্যাপ্তি ছিল বিশাল। কাউকে তিনি তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেননি। সবাইকে নিজের কাছে টেনে নিতেন। এটা তাঁর জীবনের চমৎকার দিক। তিনি খুব কম লিখে গেছেন। তবে তাঁর সম্পর্কে অনেকে লিখেছেন। এ সবকিছু মিলিয়ে যাঁরা স্যারকে জানেন না, তাঁরা তাঁকে বুঝতে পারবেন। হুমায়ুন আজাদ, সরদার ফজলুল করিম তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। আহমদ ছফা লিখেছেন ‘যদ্যপি আমার গুরু’ নামের বই। এগুলো পড়ে স্যারকে বোঝা যেতে পারে।’

আয়োজনে স্বাগত বক্তব্য দেন জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক ফাউন্ডেশনের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. রওনক জাহান। সঞ্চালনায় ছিলেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক প্রকৌশলী, শিল্পী লুভা নাহিদ চৌধুরী।

অনুষ্ঠানের শুরুতে দেখানো হয় আব্দুর রাজ্জাকের ওপর নির্মাণাধীন প্রামাণ্যচিত্র ‘ফেয়ারওয়েল টু রাজ্জাক’। এটি তৈরি করছেন পিপলু আর খান। তথ্যচিত্রে দেশের বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব প্রয়াত এই জাতীয় অধ্যাপককে নিয়ে স্মৃতিচারণা করেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন বদরুদ্দীন উমর, ড. কামাল হোসেন, মফিদুল হক, মুনতাসীর মামুন, নাসির আলী মামুন প্রমুখ।



[ad_2]

Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত