Homeজাতীয়উন্নত বিশ্বকে ঐতিহাসিক দায় থেকে মুক্তির পথ তৈরি হয়েছে

উন্নত বিশ্বকে ঐতিহাসিক দায় থেকে মুক্তির পথ তৈরি হয়েছে

[ad_1]

২০৩৫ সাল নাগাদ প্রতিবছর ৩০০ বিলিয়ন ডলার জলবায়ু অর্থায়ন প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত কম। এটি অনুদান, নাকি ঋণ হবে সে বিষয়ে কোনো স্পষ্টতা নেই, অর্থ প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সব পক্ষকে অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু উন্নত দেশগুলোর ওপর একক দায়িত্ব আরোপ করা হয়নি। এর ফলে শিল্পোন্নত বিশ^কে তাদের ঐতিহাসিক দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়ার পথ তৈরি হয়েছে। 

৪২টি নাগরিক সংগঠন এবং উন্নয়ন সহযোগী সংগঠনের জোট ‘ক্লাইমেট জাস্টিস অ্যালায়েন্স-বাংলাদেশ’ এর পক্ষ থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবে বুধবার সংবাদ সস্মেলনে এ কথা বলা হয়েছে। সম্মেলনে আরও বলা হয়, অর্থায়নের এই সিদ্ধান্তটিতে বেসরকারি খাতকে গুরুত্বপূর্ণ অবদানকারী হিসেবে সামনে আনার গোপন আকাক্সক্ষা লুকিয়ে আছে। মূলত এটি একটি মুনাফা তৈরি করার নতুন উপকরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা নব্যউদারনৈতিক আর্থিক উপকরণের উত্তরোত্তর বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করার ঝুঁকি তৈরি করেছে। এতে জলবায়ু ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার পথ নিশ্চিতভাবে রুদ্ধ হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা কপ-২৯-এর মূল অর্জনগুলো তুলে ধরেন। তাঁরা উল্লেখ করেন যে, সমঝোতা সম্মেলনে জলবায়ু অর্থায়নের নতুন লক্ষ্যমাত্রার (নিউ কালেক্টিভ কোয়ান্টিফাইড গোল- এনসিকিউজি) বার্ষিক হার ২০৩৫ সাল নাগাদ ৩০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে এবং ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছানোর একটি প্রচেষ্টার কথা বলা হয়েছে। 

বক্তারা আরও জানান, গত দশ বছরের আলোচনার পর কপ-২৯ অবশেষে প্যারিস চুক্তির আর্টিকেল ৬ এর অধীনে কার্বন মার্কেটের বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে। আর্টিকেল ৬.২-এর অধীনে আন্তর্জাতিক কার্বন মার্কেটের এবং আর্টিকেল ৬.৪-এর অধীনে একটি কেন্দ্রীভূত কার্বন মার্কেট তৈরির নিয়মাবলি চূড়ান্ত হয়েছে। তবে এগুলোর জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ ব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য জটিলতা রয়েছে বলে তারা উল্লেখ করেন। এ ছাড়া, কপ-২৯-এ ‘বাকু অভিযোজন রোডম্যাপ’ চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা ‘প্যারিস চুক্তি’র অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি ‘ইউএই ফ্রেমওয়ার্ক’ বাস্তবায়নে সহায়তা করবে। এ ছাড়া ইউএই ফ্রেমওয়ার্ক বাস্তবায়নের উপায় চিহ্নিত করার উদ্দেশ্যে ‘বাকু হাই লেভেল ডায়লগ’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনের প্রধান বক্তা মো. শামসুদ্দোহা বলেন, গত সমঝোতা সম্মেলনের ‘গ্লোবাল স্টকটেক’ এর বিষয়ে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলোকে কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে সে বিষয়ে রাষ্ট্রসমূহ এবারের সমঝোতা সম্মেলনে ঐকমত্যে পৌঁছতে পারেনি। বরং এটিকে আগামী কপ-৩০-এর জন্য ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে অথচ এটি অবিলম্বে চূড়ান্ত হওয়া প্রয়োজন যাতে এটি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হয়। তিনি আরও বলেন, ২০৩৫ সাল নাগাদ ৩০০ বিলিয়ন ডলারের এনসিকিউজি লক্ষ্য বর্তমান প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত কম এবং এর সময়সীমা অনেক দীর্ঘ।

এ ছাড়া এটি অনুদান নাকি ঋণ হবে সে বিষয়ে কোনো স্পষ্টতা নেই, অর্থ প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সব পক্ষকে অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু উন্নত দেশগুলোর ওপর একক দায়িত্ব আরোপ করা হয়নি। এর ফলে শিল্পোন্নত বিশ^কে তাদের ঐতিহাসিক দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়ার রাস্তা তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া অর্থায়নের এই সিদ্ধান্তটিতে বেসরকারি খাতকে গুরুত্বপূর্ণ অবদানকারী হিসেবে সামনে আনার গোপন আকাক্সক্ষা লুকিয়ে রয়েছে, মূলত এটি একটি মুনাফা তৈরি করার নতুন উপকরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে এ সকল উদ্যোগ ঋণ এবং অন্যান্য নব্যউদারনৈতিক আর্থিক উপকরণের উত্তরোত্তর বৃদ্ধিকে তরান্বিত করার ঝুঁকি তৈরি করে চলেছে, ফলে এর মধ্য দিয়ে জলবায়ু ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার পথ নিশ্চিতভাবে রুদ্ধ হবে।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘কপ-১৫ (২০০৯) থেকে কপ সভাপতিরা সিদ্ধান্ত অনুমোদনের জন্য সর্বশেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করার পন্থা অবলম্বন করে চলেছেন, এই প্রতারণামূলক প্রক্রিয়া উন্নয়নশীল দেশগুলোর কার্যকর আলোচনার সুযোগ সীমিত করে, কারণ শেষের দিকে দরিদ্র এবং উন্নয়নশীল দেশের বহু প্রতিনিধি উপস্থিত থাকেন না এবং তাদের অনুপস্থিতিতে উন্নত বিশ^ খেয়াল-খুশিমত সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়। কপ ২৯-এর সিদ্ধান্ত টেক্সট বিশেষত এনসিকিউজি সংক্রান্ত দলিল একইভাবেই চূড়ান্ত হয়েছে, যেটি গ্লোবাল সাউথের কণ্ঠস্বরকে উপেক্ষা করেছে।

কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড বাংলাদেশ এর কান্ট্রি ডিরেক্টর মনীষ কুমার আগরওয়াল বলেন, ‘যদিও জলবায়ু পরিবর্তন সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জীবন এবং জীবিকাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে, কিন্তু জলবায়ু অর্থায়নের ক্ষেত্রে বিপদাপন্ন ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর ন্যায্যতার বিষয়টি বিবেচনা করা হয় না।’

পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক জিয়াউল হক বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার জন্য প্রয়োজন বৈশ্বিক মোট কার্বন উদগীরণ দ্রুত নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা, কিন্তু সমঝোতা সম্মেলন-২৯ থেকে আমরা আশাব্যঞ্জক ফল পাইনি। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সরকার চেষ্টা করছে নাগরিক সমাজ, উন্নয়ন সহযোগীসহ অন্যান্য অংশীজনকে সঙ্গে নিয়ে জলবায়ু সমঝোতাকে লক্ষ্য করে একটি সর্বজনগ্রাহ্য অবস্থানপত্র তৈরি করার এবং আগামীতে প্রতিটি সমঝোতা সম্মেলনের জন্য এ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিভাগের অধ্যাপক ড. সুবর্ণ বড়ুয়া জলবায়ু অর্থায়নের বিষয়ে উন্নত বিশে^র শুভঙ্করের ফাঁকি তৈরি করার প্রবণতার তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি আরও বলেন, এনসিকিউজি বিষয়ে কপ-২৯ এর সিদ্ধান্ত দলিলের অনুচ্ছেদ ৮(সি) তে বহুপক্ষীয় উন্নয়ন ব্যাংকগুলোর অর্থায়নকে প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়ার মাধ্যমে ভবিষ্যতে ন্যায্যতাভিত্তিক জলবায়ু অর্থায়ন বিষয়ে জলবায়ু ঝুঁকিগ্রস্ত উন্নয়নশীল দেশগুলোর দাবি পেশ করার জায়গাটি সংকুচিত হয়ে গেছে।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন দ্য ক্লাইমেট ওয়াচের নির্বাহী পরিচালক শামসুদ্দিন ইলিয়াস। অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন সিপিআরডি’র প্রধান নির্বাহী মো. শামসুদ্দোহা। সিপিআরডি’র সহকারী রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি ম্যানেজার মো. শেখ নূর আতায়া রাব্বি এবং গবেষণা কর্মকর্তা (জেন্ডার ও মানবাধিকার) সানজিয়া সামস একটি যৌথ প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।



[ad_2]

Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত