Homeজাতীয়গাদ্দাফির পতনের পরও কেন শান্তি খুঁজে পায়নি লিবিয়া?

গাদ্দাফির পতনের পরও কেন শান্তি খুঁজে পায়নি লিবিয়া?

[ad_1]

লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলিতে ফের শুরু হয়েছে সশস্ত্র সংঘর্ষ। প্রভাবশালী মিলিশিয়া নেতা আব্দেল ঘানি আল-কিকলি হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় জড়িয়ে পড়েছে একাধিক সশস্ত্র গোষ্ঠী। রাজধানীজুড়ে চলছে গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সকল স্কুল-কলেজ; জারি করা হয়েছে জরুরি লকডাউন।

একসময়ের আফ্রিকার অন্যতম স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্র লিবিয়া বারবার ফিরে যাচ্ছে সহিংসতার চক্রে। তেল ও গ্যাসসমৃদ্ধ এই দেশটি এক সময় আফ্রিকার সবচেয়ে ধনী দেশগুলোর একটি ছিল। নাগরিকদের কর দিতে হতো না, শিক্ষা ও চিকিৎসা ছিল সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। কিন্তু এই সমৃদ্ধির অন্তরালে ছিল এক স্বৈরশাসনের করাল ছায়ামোয়াম্মার গাদ্দাফির নেতৃত্বে দীর্ঘ ৪২ বছরের শাসন।

১৯৬৯ সালে সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে গাদ্দাফি গড়ে তোলেন এক কঠোর একনায়কতন্ত্র। রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা হয়, মত প্রকাশের সুযোগ ছিল না। তার বিরুদ্ধে অবস্থান মানেই ছিল নির্যাতন, গুম কিংবা কারাবরণ। দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা ‘মুকাবারাত আল জামাহিরিয়া’ ছিল বিরোধীদের দমনের প্রধান হাতিয়ার।

২০১১ সালে আরব বসন্তের ঢেউ যখন লিবিয়ায় আছড়ে পড়ে, তখন শুরু হয় গণআন্দোলন। গাদ্দাফির বিরুদ্ধে রাস্তায় নামে হাজার হাজার তরুণ। বিদ্রোহ দমন করতে গিয়ে গাদ্দাফি বাহিনী শুরু করে কঠোর অভিযান। এরপরই জাতিসংঘ ১৯৭৩ নম্বর প্রস্তাবের মাধ্যমে লিবিয়ার আকাশসীমায় ‘নো ফ্লাই জোন’ ঘোষণা করে। ন্যাটোর বিমান হামলা শুরু হয়, বিদ্রোহীদের পক্ষে অবস্থান নেয় আন্তর্জাতিক শক্তি।

২০১১ সালের ২০ অক্টোবর সিরতে পালানোর সময় গাদ্দাফি বিদ্রোহীদের হাতে ধরা পড়েন এবং নিহত হন। সেই উল্লাসের মধ্যেই শুরু হয় লিবিয়ার নতুন সংকট।

গাদ্দাফির পতনের পর ক্ষমতার শূন্যতায় জন্ম নেয় শত শত মিলিশিয়া গোষ্ঠী। একেকটি অঞ্চল চলে যায় একেকটি গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে। নিয়মিত সেনাবাহিনী ভেঙে পড়ে। তেলক্ষেত্র চলে যায় স্থানীয় সশস্ত্র গোষ্ঠীর হাতে। বেড়ে যায় অস্ত্র ও মানব পাচার।

২০১৪ সালে লিবিয়ায় গঠিত হয় দুই প্রতিদ্বন্দ্বী সরকারএকটি রাজধানী ত্রিপলিতে, অন্যটি পূর্বাঞ্চলের তবরুকে। উভয় সরকারই নিজেদের বৈধ দাবি করে, এবং নিজস্ব মিলিশিয়া বাহিনী গঠন করে। ত্রিপলি সরকারকে সমর্থন জানায় তুরস্ক ও কাতারসহ কিছু পশ্চিমা দেশ, অন্যদিকে তবরুক সরকারকে সমর্থন করে মিশর, রাশিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।

২০১৫ সালে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় গঠিত জাতীয় ঐক্যের সরকার ‘জিএনএ’ পূর্বাঞ্চলের শক্তি ‘এলএনএ’র স্বীকৃতি না পাওয়ায় ব্যর্থ হয়। ফলে সংঘাত থেমে থাকেনি। শান্তি আলোচনার উদ্যোগ বারবার ব্যর্থ হয়েছে। ঘোষিত হয়েছে একাধিক যুদ্ধবিরতি, তবে স্থায়ী শান্তির কোনো আশ্বাস মেলেনি।

জাতিসংঘের হিসাবে, গৃহযুদ্ধে নিহত হয়েছেন অন্তত ৩০ হাজার মানুষ, আহত ৫০ হাজারের বেশি। গৃহহীন হয়ে পড়েছেন প্রায় ৫ লাখ লিবিয় নাগরিক।

এখান ২০২৫ সাল, ১৪ বছর ধরে লিবিয়া যে দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তার শেষ কোথায় কেউ জানে না। পশ্চিমা শক্তির হস্তক্ষেপ, অভ্যন্তরীণ সংঘাত, ও রাজনৈতিক বিভাজনের কারণে লিবিয়া আজ এক ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠা এখন কেবল চ্যালেঞ্জ নয়, এক কঠিন ও জটিল লড়াই।

 

সূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=aRRR8zcEbZw



[ad_2]

Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত