Homeজাতীয়নতুনভাবে সাজানো হচ্ছে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা

নতুনভাবে সাজানো হচ্ছে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা


সর্বনিম্ন চাঁদার হার আরও কমিয়ে আনার নতুন বিধান যুক্ত করে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা করছে সরকার। আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে এর প্রতিফলন দেখা যাবে। আগামী অর্থবছর থেকে এসব সুবিধা কার্যকর করবে সরকার। শেখ হাসিনা সরকারের সময় চালু হওয়া সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা আরও আকর্ষণীয় করে তুলতেই এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানিয়েছে, সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনায় বর্তমান বিধান অনুযায়ী, ১৮ থেকে ৫০ বছর পর্যন্ত বয়সীরা সর্বজনীন পেনশন স্কিমগুলোতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন। তবে চাঁদাদাতাদের বয়স ৬০ বছর হওয়ার পর থেকে তারা মাসিক পেনশন পাবেন—এমন বিধান রয়েছে। বর্তমান সরকার এই স্থানে পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেটি হলো—কোনও ব্যক্তির বয়স ৬০ বছর হওয়ার আগেই সরকার থেকে মাসিক পেনশন সুবিধা পাওয়াকে ‘স্বেচ্ছা পেনশন’ নামে উল্লেখ করেছে সর্বজনীন পেনশন কর্তৃপক্ষ। তারা বলছে, শর্তসাপেক্ষে এ সুবিধা পাবেন চাঁদাদাতারা। তবে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর কোনও ব্যক্তি শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে গেলে তার অক্ষমতার সময় থেকেই পেনশন সুবিধা চালু করা হবে।

একইসঙ্গে যেকোনও প্রয়োজনের সময় পেনশন স্কিমে জমা করা মোট অর্থের ২০ শতাংশ এককালীন উত্তোলন করতে পারবেন এই স্কিমে অন্তর্ভুক্ত চাঁদাদাতারা। বর্তমানে এ ধরনের কোনও সুবিধা নেই। এছাড়াও আসন্ন বাজেটে প্রস্তাবিত পরিবর্তনগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন চাঁদার হার আরও কমানো, ৬০ বছর বয়সের জন্য অপেক্ষা না করে চাঁদাদাতার ইচ্ছামতো যেকোনও বয়স থেকে পেনশন সুবিধা পাওয়ার পাশাপাশি আনুতোষিক হিসেবে এককালীন মোটা অঙ্কের অর্থ সুবিধা চালুর উদ্যোগ রাখার বিষয়টি ভাবা হচ্ছে।

আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এসব বিধান রেখে সর্বজনীন পেনশন স্কিমকে আকর্ষণীয় করার উদ্যোগ থাকছে। সম্প্রতি প্রস্তাবগুলো চূড়ান্ত করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত বৈঠক করেছেন পেনশন পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ও অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। আগামী অর্থবছর থেকে এসব সুবিধা কার্যকর করবে সরকার।

বর্তমান বিধান অনুযায়ী, ১৮-৫০ বছর পর্যন্ত বয়সীরা সর্বজনীন পেনশন স্কিমগুলোতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন। তবে চাঁদাদাতাদের বয়স ৬০ বছর হওয়ার পর থেকে তারা মাসিক পেনশন পাবেন।

সর্বজনীন পেনশন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, সর্বজনীন পেনশন স্কিম জনগণের কাছে আকর্ষণীয় করতে এককালীন আনুতোষিক সুবিধা দেওয়ার পাশাপাশি বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সর্বজনীন পেনশন স্কিমে কত টাকা মাসিক চাঁদা দিলে প্রতি মাসে কত টাকা পেনশন পাওয়া যাবে, তার একটি হিসাব আছে। যদি কেউ আনুতোষিক সুবিধা হিসেবে এককালীন অর্থ উত্তোলন করেন, তাহলে তার মাসিক পেনশনের পরিমাণ কমে যাবে। আর কেউ যদি আনুতোষিক সুবিধা না নেন, তাহলে তার মাসিক পেনশন কমবে না। আনুতোষিকের হার মোট জমার কত শতাংশ নির্ধারণ করা হচ্ছে তা জানা সম্ভব হয়নি।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ১৭ আগস্ট সর্বজনীন পেনশন স্কিম আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করলেও চাঁদার বিপরীতে সুদহার ব্যাংকের আমানতের সুদহারের চেয়ে কম হওয়া এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা কম থাকায় নিবাসী ও অনিবাসীদের এসব স্কিমে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় আগ্রহী করা যায়নি। সরকার সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা জনপ্রিয় করতে প্রচার-প্রচারণার বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেও তা সফলতার মুখ দেখেনি।

১২ মে সোমবার পর্যন্ত সর্বজনীন পেনশন স্কিম কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুযায়ী, স্কিমগুলোয় মোট রেজিস্ট্রেশন করেছেন ৩ লাখ ৭৩ হাজার ৭৪১ জন। মোট টাকা আদায় হয়েছে ১৭৬ কোটি ৬৬ লাখ ৮৫ হাজার ৫০০ টাকা। এর মধ্যে প্রগতি স্কিমে যুক্ত হয়েছেন ২৩ হাজার ১১০ জন, সুরক্ষায় ৬৩ হাজার ৫০৮ জন, সমতায় ২ লাখ ৮৬ হাজার ১৫১ জন। আর প্রবাস স্কিমে যুক্ত হয়েছেন ৮৭২ জন। এদের মধ্যে অনেকে নিয়মিত কিস্তিও পরিশোধ করছেন না।

জানা গেছে, ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু রয়েছে। সেখানে এককালীন আনুতোষিক সুবিধা দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের আর্থিক সুবিধা রয়েছে, যা বাংলাদেশের সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় নেই।

সর্বজনীন পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য গোলাম মোস্তফা জানিয়েছেন, সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীদের গ্র্যাচুইটির বিধানের সঙ্গে সর্বজনীন পেনশনারদের গ্র্যাচুইটির হিসাব মিলবে না। এক্ষেত্রে একজন চাঁদাদাতা মোট যে টাকা জমা দেবেন, তার ২৫-৩০ শতাংশ অর্থ এককালীন গ্র্যাচুইটি বা আনুতোষিক সুবিধা হিসেবে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হতে পারে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, সরকারের পক্ষ থেকে সর্বজনীন পেনশন স্কিমকে অর্থবহ করার চেষ্টা করছি। আমরা কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যা আগামী বাজেটে দেখতে পাবেন। তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া যেকোনও সিদ্ধান্ত যদি সাধারণ মানুষের কল্যাণে না আসে তাহলে সেসব সিদ্ধান্তই বৃথা যায়। আমরা সরকারের এই উদ্যোগকে মানুষের কল্যাণে লাগাতে চাই।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত