Homeজাতীয়প্রবৃদ্ধি নয়, আপাতত অর্থনীতির ভিত মজবুতই টার্গেট

প্রবৃদ্ধি নয়, আপাতত অর্থনীতির ভিত মজবুতই টার্গেট

[ad_1]

সরকার আপাতত প্রবৃদ্ধির গতি বৃদ্ধির পরিবর্তে অর্থনীতির ভিত মজবুত করার দিকে বেশি মনোযোগ দিচ্ছে। অর্থনীতির শক্তিশালী ভিতই হবে আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণের সোপান। অর্থনীতির সব ঝুঁকি মোকাবিলা করে দেশের অর্থনীতির জন্য একটি বৈষম্যহীন ও টেকসই ভিত্তি নিশ্চিত করা এখন সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, আগামীর বাংলাদেশে সবার জন্য মানসম্মত জীবন এবং সব স্তরে বৈষম্যহীন ব্যবস্থার নিশ্চয়তা প্রদান হবে সরকারের মূল লক্ষ্য। এ লক্ষ্য পূরণে সরকার সবার সহযোগিতা চেয়েছে। সরকার মনে করে, সবার সম্মিলিত প্রয়াসে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের সব মুক্তিকামী মানুষের জন্য এক অনুকরণীয় আলোকবর্তিকা।

আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। সোমবার (২ জুন) বিকাল ৩টায় বাংলাদেশ টেলিভিশনে বাজেট উপস্থাপন করেন তিনি। এর আগে সকাল সাড়ে ৯টায় মন্ত্রিপরিষদের বিশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই বৈঠকেই অনুমোদন দেওয়া হয়েছে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট। পরে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সম্মতিসূচক স্বাক্ষর করেন।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, বাজেট উপস্থাপনের পরের দিন মঙ্গলবার (৩ জুন) বিকাল তিনটায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করবেন। ওই সংবাদ সম্মেলনে বাজেট সম্পর্কিত সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাব দেবেন তিনি। এ বছর সংসদ কার্যকর না থাকায় সরকার সাধারণ নাগরিকদের কাছ থেকে বাজেট সম্পর্কিত মতামত নেবে। দেশের যেকোনও নাগরিক বাজেট সম্পর্কিত যেকোনও মতামত যেকোনও উপায়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পৌঁছাতে পারবেন। এসব মতামতকে একত্রিত করে যা গ্রহণ করা সম্ভব তা তিনি বাজেটে যুক্ত করে আগামী ২৩ জুন অনুষ্ঠেয় মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে উপস্থাপন করবেন চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য। মন্ত্রিপরিষদের ওই বৈঠকে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট চূড়ান্ত অনুমোদনের পরে তা রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হবে, যা ১ জুলাই ২০২৫ থেকে কার্যকর হবে।          

প্রস্তাবিত বাজেটে নাগরিকদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের পাশাপাশি অর্থনীতিকে সচল রাখতে জ্বালানির পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং একই সঙ্গে তা সাশ্রয়ী রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। বাজেট বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘বিদ্যমান উচ্চ মূল্যস্ফীতির পরিপ্রেক্ষিতে নীতিগতভাবে সরকার বিদ্যুতের মূল্য আপাতত না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকারের এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ। বর্তমানে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকির পরিমাণ জিডিপির প্রায় ১ শতাংশ, যা অনেক বেশি। এটি ক্রমে কমাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ ১০ শতাংশ কমানোর পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। এটি করতে পারলে ১১ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করা যাবে। বিদ্যুৎ ক্রয়চুক্তি পর্যালোচনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

প্রস্তাবিত বাজেটে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। বাজেট ঘাটতি ২ লাখ ৬৬ হাজার কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। আগামী অর্থবছরের জন্য মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি এডিপি বাস্তবায়নে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি বর্তমান সরকারের দৃষ্টিতে সংকোচনমূলক বাজেট।

বাজেট বক্তৃতায় অর্থ উপদেষ্টা বলেছেন, মাত্র অল্প কয়েক মাসে কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে দেশকে স্থিতিশীল করার কাজটি প্রায় সম্পন্ন করে আনা সম্ভব হলেও পরিপূর্ণ সাফল্যের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে সরকারকে আরও অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে। সরকার মনে করে, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মূল্যস্ফীতি কমে আসার প্রবণতা দেখা গেলেও তা এখনও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। গত এপ্রিল মাসে মার্কিন প্রশাসন কর্তৃক আরোপিত অতিরিক্ত শুল্কের নেতিবাচক প্রভাবও বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া, সম্প্রতি যে বাজারভিত্তিক মুদ্রা বিনিময় হার চালু করা হয়েছে, তার কোনও নেতিবাচক প্রভাব আপাতত বাজারের ওপর পড়ার সম্ভাবনা না থাকলেও এ বিষয়ে সরকারতে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা। এসব ঝুঁকি মোকাবিলা করে দেশের অর্থনীতির জন্য একটি বৈষম্যহীন ও টেকসই ভিত্তি নিশ্চিত করা এখন আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। 

এর আগে সোমবার (২ জুন) সকালে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার দফতরে অনুষ্ঠিত হয় উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ বৈঠক। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে ওই বৈঠকে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ বৈঠকে প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন শেষে তাতে সই করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। এরপর বাজেট ডকুমেন্টস নিয়ে রামপুরার বিটিভি ভবনে যান অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। সেখানে রেকর্ড করা হয় ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট উপস্থাপন। সেই বাজেট উপস্থাপন বিকাল ৩টায় সম্প্রচার শুরু করে বাংলাদেশ টেলিভিশন।

বাজেট ভাষণে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জানান, আপাতত প্রবৃদ্ধির গতি বৃদ্ধির পরিবর্তে অর্থনীতির ভিত মজবুত করার দিকে আমরা অধিকতর মনোযোগ দিচ্ছি। এ শক্তিশালী ভিতই হবে আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণের সোপান। আগামীর সেই বাংলাদেশে সবার জন্য মানসম্মত জীবন এবং সব স্তরে বৈষম্যহীন ব্যবস্থার নিশ্চয়তা প্রদান হবে আমাদের মূল লক্ষ্য। এ লক্ষ্য পূরণে আমি আপনাদের সহযোগিতা চাই। ইনশাআল্লাহ্, আমাদের সবার সম্মিলিত প্রয়াসে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের সব মুক্তিকামী মানুষের জন্য এক অনুকরণীয় আলোকবর্তিকা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি, বেকারত্ব, বিনিয়োগ স্থবিরতা এবং আঞ্চলিক ও শ্রেণিভিত্তিক বৈষম্যগুলোকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তার বক্তৃতায় স্বীকার করা হয়েছে যে দেশের অর্থনীতি একটি চাপগ্রস্ত পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। যেখানে ক্রমবর্ধমান জীবনযাত্রার ব্যয় সাধারণ মানুষের জন্য দুঃসহ হয়ে উঠেছে। এগুলো কাটিয়ে ওঠার দিকনির্দেশনা রয়েছে অর্থ উপদেষ্টার প্রস্তাবিত বাজেটে।

গ্রাসরুট উইমেন চেম্বারের প্রেসিডেন্ট মৌসুমি ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, অর্থ উপদেষ্টার প্রস্তাবিত বাজেটে সরকারের এসএমই ইনোভেশন ফান্ড গঠনের নির্দেশনা থাকলে ভালো হতো। এটা করা উচিত। বাজার গবেষণায় সহায়তা প্রয়োজন। নারী ও নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য জামানতবিহীন সহজ ঋণ স্কিম চালুর জন্য ব্যাংকগুলোকে বাধ্যতামূলক নির্দেশনা দিতে হবে।

জানতে চাইলে রাজধানীর কাওরান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী আরাফাত হোসেন জানিয়েছেন, বাজেট ভালো না বুঝলেও এবারের বাজেটের বেশ কিছু দিক ভালো লেগেছে। সেগুলো হচ্ছে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য যেসব সুবিধা প্রস্তাব করা হয়েছে, বিশেষ করে বিদ্যুতের দাম না বাড়ানো, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় সুবিধাভোগীর সংখ্যা বাড়ানো, ব্যাংকে এক লাখ টাকা আমানত রাখলেই ১৫০ টাকা আবগারি শুল্ক কাটা হতো, তা পরিবর্তন করে তিন লাখ করা—এতে সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে। এতে বাজেট বাস্তবায়নের মূল চ্যালেঞ্জ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হবে বলে আমি মনে করি। 



[ad_2]

Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত