Homeজাতীয়রাণীশংকৈলে সাফজয়ী ৩ নারীর অপ্রতিরোধ্য স্বপ্ন যাত্রা

রাণীশংকৈলে সাফজয়ী ৩ নারীর অপ্রতিরোধ্য স্বপ্ন যাত্রা

[ad_1]

সম্প্রতি টানা দ্বিতীয় বারের মতো সাফ নারী চ্যাম্পিায়নশিপের শিরোপা জিতে ইতিহাস গড়েছে বাংলার লাল-সবুজের মেয়েরা। অন্যান্য সতীর্থদের মত স্বপ্না রাণী, কোয়াতি কিসকু ও সাগরিকাদের খেলার ধরণ ছিল দেখার মতো। নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠা গ্রামের তিন জনই এসেছেন রাণীশংকৈল ডিগ্রী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ তাজুল ইসলামের গড়া রাঙ্গাটুঙ্গী ইউনাইটেড ফুটবল একাডেমি থেকে।

 

কুঁড়েঘরে থেকে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে জ্বলন্ত প্রদীপের মতো বাংলাদেশের হয়ে আলো ছড়িয়েছেন সারা বিশ্বের সামনে। যারা একসময় মেয়ে মানুষ হাফপ্যান্ট পরে ফুটবল খেলবে এমন টিটকারি করেছিল আজ তাঁরাই এখন তাদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। অন্ধকারে আলো ছড়ানো গল্পের মতোই তাদের জীবনের বাস্তবতা। ফুটবল খেলে দেশের নারী ফুটবলের ভাগ্য পরিবর্তন হলেও পরিবর্তন হয়নি এ খেলোয়াড়দের।

এখনো প্রত্যন্ত অজপাড়া গাঁওয়ের মাটির জীর্ণ ঝুপড়ি ঘরেই বসবাস করছে স্বপ্না রাণী, কোয়াতি কিসকু ও সাগরিকারা। অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারে বেড়ে উঠা স্বপ্না রাণী ২০১৯ সালে অনূর্ধ্ব-১৭ বয়সভিত্তিক দলে প্রথম সুযোগ পান। এরপর প্রতিবেশী দেশ ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যের জামশেদপুরে গত মার্চ মাসে সাফ অনূর্ধ্ব-১৮ টুর্নামেন্টে অসাধারণ পারফরম্যান্স করেন তিনি।২০২২ ও ২০২৪ সাফ নারী চ্যাম্পিয়ন দলে খেলেছেন। দেশের জন্যে মুকুট জয়ে পালন করেছেন গুরু দায়িত্ব। অপর দুই জন কোয়াতি কিসকু ও সাগরিকাও ২০২৪ সাফ নারী চ্যাম্পিয়ান দলের গর্বিত সদস্য।

স্বপ্না রাণীর বাড়ি শিয়ালডাঙ্গি গ্রামে। এখানে দুটি মাটির ঘরে বসবাস করে তার পরিবার। স্বপ্নার শোবার ঘরে দুইটি চৌকি, একটি টিনের বাক্স ও ছোট একটি কাঠের শোকেজ রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে ফুটবল খেলে পাওয়া পুরস্কার রাখার যায়গা নেই ঘরটিতে। তাই স্বপ্নার সব পুরস্কার বস্তায় ভরে টিনের বাক্সতে রেখে দিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। স্বপ্নার বড় ভাই রুপচাঁদ রায় স্থানীয় একটি দরজির দোকানের কাজ করেন। তার আয় করা টাকাতেই চলে সংসারের খরচ।

স্বপ্না রাণীর বাবা নিরেন চন্দ্র বলেন, আমার মেয়ে অনেক কষ্ট করে আজ এই পর্যন্ত পৌঁছেছে। এলাকার তাজুল স্যার জোড় করে খেলতে নিয়ে গিয়ে তাকে এতবড় অর্জন এনে দিয়েছেন। বাসায় ডিসের লাইন না থাকায় মেয়ের খেলা দেখতে পারিনি। প্রতিবেশীরা আমাকে জানিয়েছেন ওর সফলতা। মেয়েকে নিয়ে আমি অনেক গর্বিত। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাঁওতাল পরিবারের সন্তান কোয়াতি কিসকু। রাঙ্গাটুঙ্গী গ্রামে বসবাস করেন তিনি।

তার বড় বোন ইপিনা কিসকু জানান, আমার বোন যখন খেলা শুরু করেছিল, তখন হাফপ্যান্ট পড়ায় অনেকেই টিটকারি করেছিল। অনেকে হিংসাও করতো। আজ আমার বোনের অনেক প্রসংশা করে তারা।

গরিব পরিবারের সন্তান সাগরিকা। তিনিও রাঙ্গাটুঙ্গী গ্রামের বাসিন্দা । তার বাবা পেশায় চায়ের দোকানি। দুই সন্তানের মধ্যে সাগরিকা ছোট। ছেলে মোহাম্মদ সাগর একটি ইটের ভাটায় কাজ করেন। সাগরিকার বাবা লিটন জানান, মেয়েদের ফুটবল খেলা দেখে অনেকেই কটূক্তি করতেন। তাদের কথায় বিরক্ত হয়ে মেয়েকে মাঠে যেতে বারণ করে ঘরে আটকে রাখতেন। এসব উপেক্ষা করে মাঠে চলে যেতেন সাগরিকা। এক সময় রাঙ্গাটুঙ্গী ইউনাইটেড ফুটবল একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা তাজুল ইসলামের অনুরোধকে গুরুত্ব দিতে বাধ্য হন লিটন-আনজু দম্পতি। এরপর সাগরিকার খেলায় উন্নতি হয়।

রাঙ্গাটুঙ্গী ইউনাইটেড ফুটবল একাডেমির পরিচালক তাজুল ইসলাম এই তিন ফুটবল রত্নের গল্প শুনিয়েছেন। তিনি জানান, দেশের নারী ফুটবল উন্নয়নে আমি এই ফুটবল একাডেমি প্রতিষ্ঠা করি। প্রথমদিকে কোনো পরিবার তাদের মেয়েদের ফুটবল খেলতে অনুমতি দিচ্ছিল না। স্বপ্না রাণীর মতো সব মেয়েদের পরিবারকে আমি অনেক অনুরোধ করে রাজি করাই। এলাকার মেয়েদের নিজ খরচে ফুটবল খেলতে শেখাই। এভাবেই আস্তে আস্তে আমার একাডেমি থেকে এখন পর্যন্ত ১৬ জন মেয়ে বিভিন্ন সময়ে জাতীয় দলে খেলেছে।

উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা রকিবুল হাসান বলেন, বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলকে অভিনন্দন। চ্যাম্পিয়ন দলে রাণীশংকৈল উপজেলার তিন মেয়ে খেলছেন। এটা আমাদের জন্যে অনেক গর্বের। ফুটবল একাডেমি উন্নয়নে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করবে উপজেলা প্রশাসন।  

 



[ad_2]

Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত