রাষ্ট্রীয় ও আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠানে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর জন্য কোনো আসন নেই। রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে কে কোথায় বসবেন, সেই ক্রম নির্ধারণ করা হয়েছে ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সে। ১৯৭৫ সালে জারি করা ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স পরে বিভিন্ন আমলে সংশোধন হলেও কয়েক যুগেও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর জন্য আসন রাখা হয়নি।
ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স করেন রাষ্ট্রপতি। রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর জন্য আসন কেন রাখা হয়নি, সে বিষয়ে সরকারি কর্মকর্তারা কিছু জানাতে পারেননি। জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কয়েক দশকেও ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সে রাষ্ট্রীয় আচার-অনুষ্ঠানে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর জন্য আসন নির্ধারণ না হওয়াটা রাজনীতির বৈরী পরিবেশের বহিঃপ্রকাশ।
সূত্র জানায়, রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে কে কোথায় বসবেন, সেই ক্রম নির্ধারণ করে ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স জারি করেছেন রাষ্ট্রপতি। সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইঞা জানান, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৫ সালের অক্টোবরে (তখন রাষ্ট্রপতি ছিলেন খন্দকার মোশতাক আহমেদ) প্রথমবার ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স নতুন করে জারি করা হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আগের আইন অব্যাহত থাকবে বলে একটি নতুন আইন জারি করা হয়েছিল।
এর ফলে ১৯৭৫ সালের আগপর্যন্ত আগের ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স অনুসরণ করা হতো।
পরে বিভিন্ন সময়ে ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সে সংশোধনী আনা হয়েছে। রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারব্যবস্থার সময় ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর স্থান ছিল না। কিন্তু পরে প্রধানমন্ত্রীশাসিত সরকারব্যবস্থা চালু হলেও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর স্থান ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সে হয়নি।
ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপালসহ পার্শ্ববর্তী দেশ এবং ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোর ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স বা স্টেটস অর্ডার অব প্রিসিডেন্স বা অর্ডার অব প্রেসিডেন্সে সাবেক প্রেসিডেন্ট, সাবেক প্রধানমন্ত্রী, ভাইস প্রেসিডেন্টের স্থান রয়েছে। বাংলাদেশের ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর জন্য আসন না থাকলেও ৪ নম্বরে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাবেক রাষ্ট্রপতিকে রাখা হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ রাষ্ট্রপতির সাচিবিক কাজ করে। বঙ্গভবনের তালিকা অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানগুলোর আয়োজন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, ১৯৮২ সাল পর্যন্ত ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিতদের আসন ব্যবস্থাপনার জন্য অনুসরণ করা হতো। হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ক্ষমতায় এসে ১৯৮২ সালে ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স সংশোধন করে রাষ্ট্রীয় আচার-অনুষ্ঠানের সঙ্গে ‘অ্যান্ড অল আদারস পারপাস’ বাক্যটি যুক্ত করেন। পরে এটিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময়ে জটিলতা হয়। ২০২০ সালে এটি সংশোধন করে শুধু রাষ্ট্রীয় আচার-অনুষ্ঠানের জন্য সীমিত রেখে ‘অ্যান্ড অল আদারস পারপাস’ বাক্যটি বাদ দেওয়া হয়।
ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সে আটটি নোট দেওয়া আছে। কোনো কারণে কারও আসন ব্যবস্থাপনা নিয়ে জটিলতা দেখা দিলে ওই সব নোটের আলোকে সেগুলোর সমাধান করা হয়।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও নির্বাচন কমিশনের সাবেক সচিব শফিউল আজিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানগুলোর (যেখানে রাষ্ট্রপতি অংশ নেন) আসন ব্যবস্থাপনা বঙ্গভবন থেকে নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। এর আলোকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কাজ করে। কোথাও অসুবিধা দেখা দিলে রাষ্ট্রপতি তা ঠিক করে দেন। আর কিছু বিষয় সমাজের প্রচলিত রীতিনীতি অনুসরণ করে করা হয়।
ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স নিয়ে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের কেউ পরিচয় প্রকাশ করে বক্তব্য দিতে অপারগতা জানান। বঙ্গভবনের একজন কর্মকর্তা বলেন, বর্তমান রাষ্ট্রপতির আমলে ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। ফলে এ বিষয়ে তাঁদের বক্তব্য নেই।
এক কর্মকর্তা বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারে হাত দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স সংশোধন করে সেখানে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর স্থান রাখার উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।
এ বিষয়ে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, রাজনীতির বৈরী পরিবেশের বহিঃপ্রকাশ রয়েছে ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সে। সময়ে সময়ে এটি সংশোধন হলেও সেখানে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর স্থান রাখা হয়নি। কারণ, প্রধানমন্ত্রী পরিবর্তন হওয়ার পর একজনের সঙ্গে আরেকজনের রাজনৈতিক সহনশীল অবস্থান থাকে না। তিনি বলেন, ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স জারির এখতিয়ার রাষ্ট্রপতির থাকলেও প্রধানমন্ত্রী এবং প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশ না নিয়ে রাষ্ট্রপতির কিছু করার ক্ষমতা নেই। তাই ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স জারিও রাষ্ট্রপতি নিজের মতো করতে পারেননি।