ভূমি নিয়ে বছরের পর বছর চলা মামলা এখন আর দীর্ঘসূত্রিতা কিংবা দুর্নীতির ফাঁদে আটকে থাকবে না। নবগঠিত ‘ভূমি আইন ২০২৫’ পাস হওয়ার মাধ্যমে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন এসেছে দেওয়ানী মামলা নিষ্পত্তির প্রক্রিয়ায়। আইন অনুযায়ী, এখন থেকে ভূমি-সম্পর্কিত দেওয়ানী মামলা সর্বোচ্চ এক বছরের মধ্যেই নিষ্পত্তি করা সম্ভব হবে।
একটি বাস্তব ঘটনার উদাহরণ তুলে ধরে বলা হয়—একজন আমেরিকা প্রবাসী কন্যা, যিনি ওয়ারিশ সূত্রে জমির মালিক হওয়া সত্ত্বেও চাচার প্রতারণায় জমি হারিয়েছিলেন, নতুন আইনের সহায়তায় ১২ বিঘা জমি উদ্ধার করতে সক্ষম হন। এই আইন বাস্তবায়নের ফলে ভবিষ্যতে কেউ যেন সম্পত্তি কৌশলে আত্মসাৎ করতে না পারে, তা নিশ্চিত করা হয়েছে।
ভূমি আইন ২০২৫-এর ৩টি মূল সুবিধা:
-
সময় সংক্রান্ত সীমাবদ্ধতা (Time Petition সীমিত):
মামলার দীর্ঘসূত্রিতা রোধে বাদী ও বিবাদী সর্বোচ্চ ২ বার করে সময় আবেদন করতে পারবেন। অর্থাৎ, একটি মামলায় সর্বোচ্চ ৪ বার সময় চাওয়া যাবে, যার ফলে মামলাটি অনায়াসে এক বছরের মধ্যে নিষ্পত্তি করা সম্ভব হবে। -
ডিজিটাল মাধ্যমে সমন জারি:
পূর্বে ডাকযোগে সমন পাঠানো হতো, যা সময়সাপেক্ষ ছিল। এখন থেকে সমন পাঠানো যাবে হোয়াটসঅ্যাপ ও ইমেইলের মাধ্যমে। ডিজিটালাইজেশন ও অটোমেশন ব্যবস্থার আওতায় পুরো ভূমি ব্যবস্থাপনা, জরিপ ও নথিপত্র নিয়ন্ত্রণে আসবে। -
সাক্ষ্যদান ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে:
সাক্ষী দেশ-বিদেশ যেখানেই থাকুন না কেন, এখন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সাক্ষ্য দিতে পারবেন। সাক্ষীদের অনুপস্থিতির কারণে মামলা দীর্ঘায়িত হওয়ার পথ রুদ্ধ হলো।
আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন:
মামলা জিতে যাওয়ার পর আর ডিক্রি জারি করতে আলাদা মামলা করতে হবে না। সরকার নিজ উদ্যোগে প্রশাসনের মাধ্যমে বিজয়ী পক্ষকে জমির দখল বুঝিয়ে দেবে।
ভূমি উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বলেন, “এই সংস্কারের ফলে বিচারব্যবস্থায় গতি আসবে। জনগণের ভূমি-সম্পর্কিত হয়রানি বন্ধ হবে। জমি নিয়ে কূটকৌশলের অবসান হবে।”
শেষ কথা:
এই আইনের মাধ্যমে যে কেউ যদি সঠিক প্রক্রিয়া মেনে মামলা দায়ের করেন এবং তার কাগজপত্র সঠিক থাকে, তবে ২০ বছরের জটিল মামলা এখন মাত্র এক বছরেই নিষ্পত্তি হবে। তবে এজন্য একজন অভিজ্ঞ আইনজীবীর সহায়তা নেওয়া অবশ্যই জরুরি।
