[ad_1]
গভীর রহস্যে ঘেরা মহাদেশ আফ্রিকা। এখানে রয়েছে এমন অসংখ্য আদিম জনগোষ্ঠীর বসবাস যারা বহির্বিশ্বের সভ্যতা ও প্রযুক্তির ছোঁয়া থেকে অনেক অনেক দূরে। তাদের সংস্কৃতির সঙ্গে এশিয়া বা পশ্চিমা দুনিয়ার সংস্কৃতির আকাশ-পাতাল ফারাক। রয়েছে এমন সব রীতিনীতি এবং নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি যা আধুনিক সমাজের কাছে অস্বাভাবিক বলেই গণ্য হবে। অথচ এগুলোই তাদের কাছে একেবারে স্বাভাবিক ও সামাজিকভাবে স্বীকৃত।
সেরকমই একটি উপজাতি হিম্বা। এদের বাসস্থান নামিবিয়ায়। শেষ আধা-যাযাবর উপজাতি বলে বিশ্বের কাছে পরিচিত এরা। মূলত নামিব মরুভূমিতেই বসবাস করেন এ উপজাতির মানুষরা। জীবনযাত্রা যেমন বৈচিত্র্যে ভরা, তেমনই যৌনতা নিয়েও তাদের রীতিনীতি খুবই অদ্ভুত।
আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষের একটি বিশেষ সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট হলো অতিথিপরায়ণতা। অতিথিদের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য বিশেষ নজর দেওয়া হয়ে থাকে এখানে। উত্তর নামিবিয়ার কুনেনে বাস করা হিম্বা উপজাতির মানুষও অতিথিবৎসল। বরং একটু বেশিই, যা আধুনিক সমাজের মানুষ স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারবেন না।
‘ওকুজেপিসা ওমুকাজেন্দু’, যার সহজ অর্থ অতিথির কাছে নিজের স্ত্রীকে অর্পণ করে দেওয়া। অতিথিকে তুষ্ট রাখার জন্য সেই হিম্বা গোষ্ঠীর পুরুষরা নিজের স্ত্রীদের অতিথিদের সঙ্গে যৌন মিলনের জন্য উৎসাহিত করেন। আর এ প্রথা চলে আসছে যুগের পর যুগ ধরে। যৌনতা নিয়ে কোনো সংশয়-লজ্জা নেই এ জনগোষ্ঠীর। স্বামীদের সম্মতিতেই এ উপজাতির বিবাহিত নারীরা পর্যটক বা ঘুরতে আসা অতিথিদের সঙ্গে যৌনতায় লিপ্ত হন।
হিম্বাদের মধ্যে নেই কোনো যৌন ঈর্ষা। যৌন মিলনের জন্য নিজের স্ত্রীদের পর্যটকদের হাতে তুলে দেওয়াকে আতিথেয়তার পরাকাষ্ঠা হিসেবে বিবেচিত করা হয় হিম্বা সমাজে। স্ত্রী অন্য কারও সঙ্গে পরকীয়ায় লিপ্ত হতে পারেন এই সন্দেহ থেকে পুরোপুরি মুক্তমনা এখানকার প্রত্যেক পুরুষ। নিজেদের প্রাচীন রীতি থেকে পোশাক, আচার-আচরণ সবই চলে আসছে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে। নামিবিয়ার হিম্বা উপজাতির মানুষ এখনও আঁকড়ে রয়েছেন নিজেদের সংস্কৃতি।
স্ত্রী অদলবদল করার মতো সংস্কৃতি গোটা পৃথিবীতে খারাপ ভাবে দেখা হলেও এই প্রথাটি হিম্বা জনগণের মধ্যে বহু শতাব্দী ধরে বিদ্যমান। পুরুষরা তাদের স্ত্রীদের অচেনা পুরুষদের সঙ্গে রাত কাটাতে দেওয়ার মধ্যে কোনো দোষ খুঁজে পান না। হিম্বা উপজাতির পুরুষদের একাধিক স্ত্রী থাকাও খুবই সাধারণ ব্যাপার। প্রত্যেক মহিলাই সতীনের সঙ্গে সংসার করেন। স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করে নতুন বৌ ঘরে আনলে তাকে সাদরে বরণ করে নেন প্রথম স্ত্রী।
একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, হিম্বা পুরুষদের ৭০ শতাংশেরও বেশি এমন এক সন্তানকে লালন-পালন করেন, যার জন্মদাতা পিতা অন্য পুরুষ। এই উপজাতিতে, বিয়ের বাইরে জন্ম বা বিয়েবহির্ভূত সম্পর্ককে খোলা মনেই মেনে নেওয়ার রীতি রয়েছে। স্ত্রীর সঙ্গে কোনো অপরিচিত ব্যক্তি বা অতিথি ঘরে রাত কাটালে ঘরের বাইরে স্বামীর রাত কাটানোও সেখানকার সুপ্রাচীন রীতি।
হিম্বা উপজাতির বিয়ের রীতিও অত্যন্ত প্রথাগত এবং ঐতিহ্যবাহী, যা তাদের সমাজের সংস্কৃতি ও জীবনের অঙ্গ। হিম্বা সমাজে বিয়ের আগে বর ও কনের পরিবারের মধ্যে একটি চুক্তি হয়। সাধারণত, পুরুষকে তার বাগ্দত্তার পরিবারকে কিছু গবাদি পশু (গরু বা ছাগল) প্রদান করতে হয়, যা পুরুষের সামাজিক অবস্থান এবং পরিবারের ক্ষমতা চিহ্নিত করে।
কুনেনে হিম্বা জনগোষ্ঠীর প্রায় ৫০ হাজার মানুষ বাস করেন। মূলত পশুপালনই তাদের পেশা। জীবনযাপনের জন্য কৃষিনির্ভর হলেও গবাদি পশু পালন তাদের জীবিকার প্রধান উৎস। পশুপালন, রান্না করা, ঘর গোছানো এবং শিশুদের যত্ন নেওয়ার মতো গৃহস্থালির কাজ করে থাকেন পরিবারের মহিলারাই।
হিম্বা মহিলারা ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরেন। রেড আয়রন অক্সাইড, পশুর চর্বি দিয়ে তৈরি এক প্রকার প্রলেপ দিয়ে নিজেদের ত্বক এবং চুল রঙিন করে রাখেন তারা। এই প্রলেপ তাদের ত্বককে রক্ষা করে, আর্দ্রতা বজায় রাখে এবং সুরক্ষিত রাখে। হিম্বা নারীদের গহনা তাদের সাংস্কৃতিক পরিচয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। নারীরা নিজেদের গহনা এবং সাজসজ্জা দিয়ে তাদের ঐতিহ্য, শ্রেণি এবং সামাজিক অবস্থান প্রকাশ করেন।
হিম্বা নারীরা কাঠ, চামড়া, এবং ধাতু দিয়ে তৈরি ব্রেসলেট পরেন। এই ব্রেসলেটগুলো প্রায়ই বিশেষ নকশায় সাজানো হয় এবং একটি সামাজিক প্রতীক হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। অলঙ্কারের মধ্যে গলার হারের উপস্থিতি দেখা যায়, যা চামড়া, রঙিন পাথর দিয়ে তৈরি হয়। এগুলো তাদের সাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং ঐতিহ্যবাহী নকশায় তৈরি হয়।
নামিবিয়ার বাকি সমাজ থেকে তুলনামূলকভাবে বিচ্ছিন্ন হিম্বারা। তবে পশ্চিমি সভ্যতার আলোয় ধীরে ধীরে শহুরে জীবনে অভ্যস্ত হচ্ছেন হিম্বাদের নতুন প্রজন্ম। প্রযুক্তির ব্যবহার, শিক্ষা, জীবনযাত্রার পরিবর্তন এবং বিশ্বায়নের প্রভাব পড়ছে হিম্বাদের উপরেও। বিদেশি পর্যটকদের আগমন, যারা হিম্বাদের সংস্কৃতি দেখতে আসেন তাদের সঙ্গে যোগাযোগের ফলে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে হিম্বাদের তরুণ প্রজন্মের মধ্যেও।
[ad_2]
Source link