গত ২২ এপ্রিল ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলা চালায় বন্দুকধারীরা। এ হামলায় ২৬ জনের প্রাণহানি ঘটে। তারপর থেকে পারমাণবিক ক্ষমতাধর দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। তারই ফল স্বরূপ গতকাল রাতে পাকিস্তানে হামলা চালায় ভারত। পাকিস্তানের ৬টি জায়গায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ভারত। জবাবে পাল্টা হামলা চালিয়েছে পাকিস্তানও।
ভারত এই হামলার নাম দিয়েছে ‘অপারেশন সিঁদুর’। এ পরিস্থিতিতে ভারতীয় শোবিজ অঙ্গনের তারকারা যুদ্ধের পক্ষে মতবাদ ব্যক্ত করেছেন। সেখানে উল্টা স্রোতে গা ভাসালেন কলকাতার বরেণ্য সংগীতশিল্পী কবীর সুমন।
ভারতীয় একটি গণমাধ্যমে কবীর সুমন বলেন, “আমি যুদ্ধের সম্পূর্ণ বিরুদ্ধে। সে যুদ্ধ যেই করুক, যারাই করুক, যেভাবেই করুক, আমি যুদ্ধ বিরোধী ব্যক্তি। আমি তো লিখেছিলাম আমার গানে গানে এই যুদ্ধ বন্ধের কথা। সেই গান আজ সকল শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের মনে পড়বে।”
প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে কবীর সুমন বলেন, “এই দেশ যখন ভাগ হয়েছিল আমার অনুমতি নিয়েছিল কেউ? দেশের কোনো মানুষের অনুমতি নিয়েছিল কেউ? দেশের নেতারা কোনো জনগণের অনুমতি নিয়েছিল? আমি উপমহাদেশের নাগরিক! কীসের ভিত্তিতে আমার দেশ ভাগ হয়েছিল? আমি ১৯৪৯ সালে জন্মেছিলাম। আমি কোথায় জন্মালাম? তখন তো আমার কোনো ব্যক্তিগত পছন্দ ছিল না! আমি তখন থেকেই সব জিনিস সন্দেহের চোখে দেখি। দেশপ্রেম আমার কাছে একটা বুজরুকি। সেখানে মানবপ্রেম নেই। মানুষের জন্য প্রেম নেই, প্রাণীদের জন্য প্রেম নেই।”
নিরপরাধ মানুষ মারা যাচ্ছে। তা জানিয়ে কবীর সুমন বলেন, “একবার ভেবে দেখুন বন্ধু, একটা যুদ্ধ হচ্ছে অস্ত্র চালাচ্ছি আমরা। অথচ কতগুলো প্রাণ হারাচ্ছে, যারা এই পৃথিবীর কোনো ক্ষতি করেনি। কতগুলো গাছ পুড়ে যাচ্ছে, গাছ ধ্বংস নিয়েও কোনো নেতার মাথাব্যথা নেই। আর যারা দেশপ্রেম দেখাচ্ছেন, তারা এই গাছেদের পুড়ে যাওয়া, গাছের সঙ্গে কত নিরীহ পাখি, পোকামাকড় মারা যাওয়া নিয়ে কিছু বলছেন না। জল বিষাক্ত হয়ে যাচ্ছে। এই নিয়ে কারো হেলদোল নেই।”
ক্ষুব্ধ কবীর সুমন বলেন, “সিঁদুর দেখাচ্ছে? কীসের ‘অপারেশন সিঁদুর’! আর বেশি বলতে চাই না। আমার মুখ দিয়ে এবার আর বললে খারাপ খারাপ কথা বেরোবে! আমি ৭৭ বছরের বৃদ্ধ। আমি সম্পূর্ণভাবে এই ‘দেশপ্রেমের’ বিরুদ্ধে এবং এই যুদ্ধের বিরুদ্ধে।”
“যে ধর্মের নামে যুদ্ধ হয় আমি সেই ধর্মকে স্বীকার করি না। সেই ধর্মকে আমি ধিক্কার জানাই। যে মতবাদ যুদ্ধ ঘটায় আমি তাকে ধিক্কার জানাই।” বলেন কবীর সুমন।