ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ইরানে মোহসেন লাঙ্গারনেশিন নামে এক ব্যক্তির ফাঁসি কার্যকর করেছে দেশটির সরকার। স্থানীয় সময় বুধবার (২৯ এপ্রিল) সকালে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় বলে জানিয়েছে আল জাজিরা।
ইরানের বিচার বিভাগ-সংশ্লিষ্ট সংবাদ সংস্থা মিজান জানায়, লাঙ্গারনেশিন ২০২০ সাল থেকে দুই বছর ধরে মোসাদের হয়ে লজিস্টিক, প্রযুক্তিগত ও অভিযানিক সহায়তা দিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ রয়েছে, ২০২২ সালে তেহরানে ইসলামিক রেভলিউশনারি গার্ডস কোর (আইআরজিসি)-এর কর্নেল সাইয়্যাদ খোদাইকে হত্যার ঘটনায় তিনি জড়িত ছিলেন।
সাইয়্যাদ খোদাই বাড়ি ফেরার পথে দুই মোটরসাইকেল আরোহীর গুলিতে নিহত হন। নিউইয়র্ক টাইমসের খবরে বলা হয়, ওই হত্যাকাণ্ডের পেছনে ইসরায়েলের হাত ছিল এবং তারা বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রকে জানায়। মিজান জানায়, লাঙ্গারনেশিন হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেল কিনেছিলেন এবং ঘটনার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া তার বিরুদ্ধে ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত একটি শিল্প স্থাপনায় হামলায় সহায়তার অভিযোগও আনা হয়েছে। ইরানি গোয়েন্দা সংস্থার দাবি, লাঙ্গারনেশিনের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রযুক্তিগত ও গোয়েন্দা প্রমাণ রয়েছে এবং তিনি নিজেও দোষ স্বীকার করেছেন।
তবে এ বিষয়ে রয়েছে ভিন্নমত। নরওয়েভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন ‘ইরান হিউম্যান রাইটস’ (আইএইচআর) অভিযোগ করেছে, নির্যাতনের মাধ্যমে লাঙ্গারনেশিনের কাছ থেকে জবানবন্দি আদায় করা হয়েছে। সংস্থাটির প্রধান মাহমুদ আমিরি-মোগাদ্দাম বলেন, ‘ইরানে ফাঁসির মেশিন প্রতিদিন আরও বেশি প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে।’
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আবদুররহমান বোরুমন্দ সেন্টার জানিয়েছে, লাঙ্গারনেশিনের বিচার হয়েছে বিচারক আবোলগাসেম সালাভাতির আদালতে, যিনি মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়ার জন্য কুখ্যাত এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছেন। সংগঠনটি আরও জানায়, লাঙ্গারনেশিন সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং বলেন, তার কাছ থেকে জোর করে স্বীকারোক্তি নেওয়া হয়েছে।
এই ফাঁসিকে ঘিরে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর উদ্বেগ ও ক্ষোভ বাড়ছে। অনেকেই একে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত শাস্তি হিসেবে অভিহিত করছেন।