Homeদেশের গণমাধ্যমেএজেন্ট বা উৎপাদকের কারণে মানুষ রোগাক্রান্ত হয়

এজেন্ট বা উৎপাদকের কারণে মানুষ রোগাক্রান্ত হয়


মানবদেহে রোগের কারণ এজেন্ট বা উৎপাদক। রোগের কারণ হিসেবে জীবাণুতত্ত্ব আমাদের ধারণার বিপ্লব ঘটালেও কিছু জীবাণুতত্ত্ববিদ রোগের কারণের একপেশে ব্যাখ্যাকে উৎসাহিত করেন। পরবর্তী সময়ে জীবাণুতত্ত্বের সীমাবদ্ধতা আমরা বুঝতে পারি। উদাহরণস্বরূপ, যক্ষ্মার জীবাণু একজনের শরীরে ঢুকলেই যক্ষ্মা তৈরি করতে পারে না। কারণ, ওই ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, পুষ্টিমাত্রা ইত্যাদি এবং সার্বিক পরিবেশ (যেমন যক্ষ্মার জীবাণু ১ দশমিক ৫ ঘণ্টায় মারা যায় যদি তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়) রোগ তৈরিতে বাধা দেয়।

বিভিন্ন রোগের কারণ: বায়োলজিক্যাল এজেন্ট ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, রিকেটশিয়া, ছত্রাক, প্রোটোজোয়া/পরজীবী কৃমি ইত্যাদি রোগ উৎপাদনকারী জীবাণু। ফিজিক্যাল এজেন্ট গরম, ঠান্ডা, আর্দ্রতা, চাপ, রশ্মি, বিদ্যুৎ, শব্দ যা রোগ উৎপন্ন করে। খাদ্য উপাদান চর্বি, শর্করা, আমিষ, খাদ্যপ্রাণ, লবণ-খনিজ লবণ, পানি ও ফাইবার। রাসায়নিক এজেন্ট শরীরের অভ্যন্তরে উৎপন্ন রক্তরসের ইউরিয়া, সিরামের বিলিরুবিন, কিটোন, ইউরিক অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম কার্বনেট ইত্যাদি। শরীরের বাইরে উৎপন্ন অ্যালারজেনস, ভারী ধাতু, ধোঁয়া, ধুলা, গ্যাস, কীটনাশক অম্ল, ক্ষার ইত্যাদি খাবার, শ্বাস অথবা ইনোকুলেশনের মাধ্যমে রোগ উৎপন্ন করে। মেকানিক্যাল এজেন্ট দীর্ঘমেয়াদি ঘষা, প্রবল চাপে থেঁতলানো, ছিঁড়ে যাওয়া, স্প্রেইন, জোড়ার স্থানচ্যুতি, হাড়ভাঙা ইত্যাদি আঘাতে উৎপন্ন রোগ। চরম আঘাতে (বিশেষ করে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে) মৃত্যুও ঘটতে পারে। কোনো উপাদানের অপ্রতুলতা, অতিরিক্ত বা অনুপস্থিতিজনিত কারণে রোগ হরমোন (ইনসুলিন, ইস্ট্রোজেন, প্রোজেস্ট্রোজেন), পুষ্টি উপাদান, মিউটেশন ও গামা গ্লোবিউলিনের অভাব। উৎপাদকের সামাজিক উপাদান দরিদ্রতা, প্রান্তিকীকরণ, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা, নারীর প্রতি সহিংসতা ইত্যাদি। অদৃশ্য কোনো রশ্মি যেমন এক্স-রে, গামা-রে কোনো কলায় প্রদাহ অথবা পরিব্যক্তির মাধ্যমে রোগ উৎপন্ন করতে পারে।

রোগের উৎপাদকের ধারণা অত্যন্ত বিস্তৃত এবং গভীর। আদর্শগত ধারণা বা বিশ্বাস, সাংস্কৃতিক নির্মাণ রোগের উৎপাদক হয়ে উঠতে পারে। জিনের পরিব্যক্তি পরবর্তী বংশধরদের মাঝে রোগ সৃষ্টি করতে পারে। সংক্রামক রোগের উৎপাদক হলো ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, পরজীবী প্রাণী ও ছত্রাক। অসংক্রামক রোগের ক্ষেত্রে উৎপাদক হলো আঘাত ফিজিক্যাল, রাসায়নিক, ঠান্ডা, গরম, রশ্মি, তামাক, ধোঁয়া, বিষ, খাদ্যে ভেজাল, দ্রাবক ইত্যাদিসহ পুষ্টির অভাব অথবা আধিক্য।

রোগের উৎপাদক একটা না হয়ে একাধিক হলে আমরা এজেন্টের পরিবর্তে কারণের উপাদানগুলো (Causative Factors) ব্যবহার করি। যেমন: হৃদরোগের কারণ জেনেটিক, খাদ্যাভ্যাস, অলস জীবনযাত্রাসহ নানাবিধ হতে পারে। বহুবিধ কারণজনিত রোগগুলোর (Multifactorial diseases) নিয়ন্ত্রণ, প্রতিরোধ, প্রতিকারও বহুবিধ পদ্ধতিতে হয়ে থাকে। যেমন: ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় আমরা জীবনাচার, ওষুধ ইত্যাদির পরামর্শ দিই।

অধ্যাপক ডা. রুহুল ফুরকান সিদ্দিক

ডিন, ফ্যাকাল্টি অব হেলথ সায়েন্স

আনোয়ার খান মডার্ন বিশ্ববিদ্যালয়





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত